×

সাহিত্য

মানুষের সেই মায়া মানবতা হারিয়ে গেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

মানুষের সেই মায়া মানবতা হারিয়ে গেছে

নৃত্যশিল্পী ডলি ইকবাল

বিশেষ সাক্ষাৎকার ডলি ইকবাল নৃত্যশিল্পী

ডলি ইকবাল। খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী। এ দেশের অহঙ্কার। নৃত্যে এই শিল্পীর জার্নি দীর্ঘ ৪ দশক ধরে। নাচের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশে^র দরবারে। বঙ্গভবনের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে নিয়ে ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবর’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা দেখে বঙ্গবন্ধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘খুব ভালো হয়েছে তোমার নাচ, খেয়েছ তুমি?’। তার শিল্পী-জীবনের সূচনা হয়েছিল ৬ বছর বয়সে গান শেখার মাধ্যমে। কিন্তু থিতু হলেন নাচেই। কৈশোরে বড় ভাই নৃত্য পরিচালক আমীর হোসেন বাবু এবং বোন সেলিনা হকের হাত ধরে নাচের জগতে পা রাখেন। নেপথ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন মা আর স্বামী।

নাচের পাশাপাশি ডলি ইকবাল মানবিক হাত বাড়িয়ে দেন সমাজের অসহায় বঞ্চিতদের দিকে। এই করোনাকালেও তিনি অনেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন নীরবেই। বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার অন্যতম উপদেষ্টা ডলি ইকবালের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে যেমন থাকার কথা তেমনিই আছি। বাসাতেই আছি। মাঝে মধ্যে বেরুচ্ছি। নৃত্যচর্চা করছি, পাশাপাশি গান এবং পড়াশোনাও করছি। প্রায় ২০ বছর আগে আমি মাঝে চট্টগ্রামে থাকায় একটু পিছিয়ে গেছিলাম। এরপর আমাকে আবারো নাচের জগতে নিয়ে এসেছেন ছোট বেলার বন্ধু শামীম আরা নীপা আর শিবলী। আলীবাবা চল্লিশ চোর নামে একটা ডান্স ড্রামায় ওরা আমাকে আলীবাবার বউ হিসেবে কাস্ট করে। এরপর আর থামিনি কাজ করেই যাচ্ছি। এই করোনাকালেও এতদিনের চর্চাটা করে যাচ্ছি।

ডলি ইকবাল বলেন, নাচ খুব অবহেলিত। অথচ এই মাধ্যমটি খুব ব্যয়বহুল একটা মাধ্যম। করোনার কারণে এখন নাচের আয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু দেশের ২৬ থেকে ২৭ টা চ্যানেলে নাটক তো হচ্ছে। তারা কি ঈদের কোনো আয়োজনে নাচ রাখতে পারতেন না? অন্তত ২০টা চ্যানেলে যদি ২০টি নাচের আয়োজন রাখত তাহলে ২০ জন নৃত্যশিল্পী উপার্জন করতে পারত না? এই দুর্যোগে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ছে। এত অবহেলিত কেন আমরা? এই প্রশ্নটা রয়েই গেল। এই দুঃসময়ে কেন উপেক্ষিত আমাদের গুণী নৃত্যশিল্পীরা?

এছাড়া ঢাকা এফএম নামে আমার একটা রেডিও চ্যানেল আছে। যেখানে মাঝে মাঝে যাই, পুরনো বাংলা গান শুনি। এছাড়া ‘চয়েস টু চেঞ্জ’ নামে একটা পথকলিদের স্কুলে উপদেষ্টা হিসেবে আছি। মাঝে মাঝে এসব শিশুদের সহায়তা করি। এছাড়া গাজীপুরে আপন নিবাস নামে ২১ জনের একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে। এই করোনাকালে তাদের পাশে সহয়োগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে শান্তি পাচ্ছি।

চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে এই শিল্পী বলেন, চেনা পৃথিবী পুরোটাই পাল্টে গেছে। এখন কোনো বন্ধুর বাসায় যেতে চাইলে বলে, এখন আসিস না। এসব কথায় বুকের মধ্যে কষ্টটা বাড়িয়ে দেয়। কেন বন্ধুর বাসায় যেতে পারব না! নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই হয়তো ওভাবে বলছে। কিন্তু কষ্ট পাই। তবে মানুষ আর আগের মতো নেই। আগের সেই অনুভূতি, ভালোবাসা আর নেই। সেই মায়া-মানবতা হারিয়ে গেছে! কেউ বোধহয় কারো কুশল সংবাদও নিতে যায় না। একটা ভীতিকর অবস্থার কারণেই হয়তো এমনটা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে তা যায় কি? আমরা তো একে অন্যের শুভানুধ্যায়ী। বিপদে ছুটে যাই, ব্যথিত হই। এই বিষয়টা হারিয়েই যাবে! একটা অদ্ভুত আত্মকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর ব্যাপার ঘটে চলেছে সমাজে। আমি বাঁচব, এমনটাই বেশি বেশি ভাবা হচ্ছে। তাতে আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতার রূপটা ভেসে উঠছে।

এই দুঃসময়টা একেবারেই অন্যরকম। এটা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনীয় না। অনেকে চাকরিচ্যুত হচ্ছে। বিশেষকরে হতদরিদ্র মানুষরাই বেকায়দায় পড়েছে বেশি। তাদের কি হবে? তারা হাতও পাততে পারে না।

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার এই অভিঘাতে সারা বিশ্বেই একটা অর্থনৈতিক খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিত্তবান দেশগুলো দুয়েকমাসেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের সময় লাগবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App