×

সারাদেশ

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে অসহায় শিক্ষাবিভাগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২০, ০৮:৪৪ পিএম

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে অসহায় শিক্ষাবিভাগ

ছবি: প্রতিনিধি

একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব হস্তান্তর না করে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যাশ বই,ব্যাংকের চেক, রেজুলেশন বই, জমির কাগজপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। তার সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই এসব কাগজপত্র আটক রাখেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী একটি মহলের ইঙ্গিতে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, জেলা সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির দাপ্তরিক কার্যক্রমে মারাত্মক অচলাবস্তার সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় জেলা শিক্ষা অফিসারের গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষককে তিন দফা নোটিস দিয়েও কাগজপত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক প্রধান শিক্ষক হাজেরা বেগমের কব্জায় থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার বিষয়টি এখন কুড়িগ্রাম শিক্ষা বিভাগে টক অব দ্য টাউন এ পরিণত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাজেরা বেগম ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটি তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।

অভিযোগ রয়েছে, টানা ৮ বছর দায়িত্ব পালনকালে একটি প্রভাব মহলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। শুধু তাই নয়, গোপন নিয়োগেও লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য করেন তিনি। বিষয়টি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তৎকালীন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আহমেদ নাজমীন সুলতানা নাজলী জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষুব্ধ হন।

ধুরন্ধর ওই প্রধান শিক্ষক বিষয়টি বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে নিবার্চিত কমিটির মেয়াদ পূণ্যের দেড় বছর আগেই গোপনে কমিটি ভেঙে দেন। এরপর চঞ্চল নামে তার পছন্দের এক ব্যক্তিকে সভাপতি করে আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করে আনেন। ২০১৭ সালে তার চাকুরির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কৌশলে ওই কমিটির মাধ্যমে তিনি ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ তাকে ২ বছরের নিয়োগ প্রদান করেন।

ঘটনাটি নিয়মিত কমিটির সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাজমীন সুলতানা জানার পর কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রীট দায়ের করেন। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ৩০ মে ২০১৮ তারিখে তার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগপত্র বাতিল করে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। কিন্তু তার আর্থিক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার আশংকায় দায়িত্ব হস্তান্তর না করে ক্যাশ বই, রেজুলেশন খাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র বাসায় নিয়ে আটকে রাখেন।

গোপনে তার সময়ে নিয়োগ দেয়া ৩ জন শিক্ষকের মধ্যে সম্প্রতি একজনের নাম এমপিও সীটে আসলে অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক নড়েচড়ে বসে। তার কাছে মূল নিয়োগপত্রসহ সবকাগজপত্র ওরা কিভাবে চাকুরি করে তা দেখে নেবো বলে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তাদের কাছে টাকা পাবে বলেও দাবি করে। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে অবসরে যাওয়ার পূর্বে প্রায় ১৮ লাখ টাকা তিনি উত্তোলন করেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এসব দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদ নিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আপোষ মীমাংসার অপতৎপরতা চালাচ্ছে । এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকতার্রা তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাজেরা বেগমকে পর পর তিন দিন তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।

নিয়মিত কমিটির সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাজমীন সুলতানা জানান, হাজেরা বেগমের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি আমাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সুপারিশের জন্য আবেদন করেন। যখন আমি জানতে পারলাম, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম করে আসছেন, তখন আমি সুপারিশ করতে অপারগতা প্রকাশ করি। এর মধ্যে আমার স্বামীর অসুস্থতার কারণে কয়েক মাস ঢাকায় অবস্থানকালে ওই প্রধান শিক্ষক গোপনে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ পূর্ণ্যের দেড় বছর থাকতেই আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করে আনেন। এরপর ওই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমি উচ্চ আদালতে রিট করেছিলাম।

কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ তদন্ত কমিটির সদস্য নুরবক্ত মিয়া জানান, তদন্তকালে স্কুলের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের স্টেটম্যান্ট সংগ্রহ করে দেখা যায়, উনার অবসরের কিছুদিন আগে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। এভাবে তিনি কত টাকা কীভাবে কোনো কাজে ব্যয় করেছেন তার হিসাব বহি ও রেজুলেশন বহি না পাওয়ায় পরিস্কার হওয়া যায়নি। একাধিকবার তার কাছে নোটিস নিয়ে গেলেও তা গ্রহণ করেনি।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে সহকারী জেলা শিক্ষ অফিসারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে তার কাছে একাধিকবার নোটিস প্রদান করা হলেও সাড়া দেননি তিনি। প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন বহি, ক্যাশবহিসহ সব কাগজপত্র উদ্ধার করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App