×

সম্পাদকীয়

সড়কে আর কত স্বপ্নের মৃত্যু হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:০১ পিএম

সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন একেকটা ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ; কোন মুহূর্তে কার প্রাণ যাবে, কেউ বলতে পারে না। তবে মাঝে মাঝে এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যা বোধসম্পন্ন মানুষের মন দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। মানতে বড় কষ্ট হয়। গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে বেপরোয়া মাইক্রোবাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা যান ৩৩ বছরের রেশমা নাহার রত্না। তিনি ছিলেন পবর্তারোহী। হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন ছিল তার মনে। এই স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করছিলেন তিনি। কিন্তু তার এ স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। এই অকাল মৃত্যুতে শোকাহত ও ব্যথিত আমরা। জানা গেছে, হাতিরঝিলে ২১ কিলোমিটার হাঁটা শেষ করে সাইকেল চালিয়ে মিরপুরের পাইকপাড়ার বাসায় ফিরে আসছিলেন রত্না। কিন্তু দেশের কেওক্রাডং, কেনিয়ার লেনানা, ভারতের কাঙরি পর্বত ও কাং ইয়াতসে-২ পর্বতজয়ী এই পর্বতারোহীর এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন শেষ করে দিল মাইক্রোবাস। পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বপ্নচারী এই সংস্কৃতিকর্মীর মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা। দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ডই তাদের বিবেচনায়। বইপড়ুয়া রত্না বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রের সদস্য ছিলেন। তিনি গান, আবৃত্তি, পাঠচক্রে নিয়মিত অংশ নিতেন। সাইকেল চালাতে ভালোবাসতেন। তবে সব ছাপিয়ে তার স্বপ্ন ছিল এভারেস্ট জয় করার। তার বন্ধুদের ফেসবুক ওয়ালে তার সৃজনশীল কর্মকাণ্ড ভেসে আসছে। বন্ধুরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইছেন। বিচার কি আসলে হবে? এর আগে ২০২৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে পথে নেমে এসেছিল। সড়ক পরিবহন আইন নতুন করে পাস হলো। কিন্তু সড়ক শৃঙ্খলায় কি কোনো পরিবর্তন এসেছে। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার বিষয়টি যে একটা বড় জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে, তা কি সরকার উপলব্ধি করতে পারছে? সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনানুগ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়টি কি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে? এমন তো নয় যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে এসব নিয়ে কথা বলছেন, সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে, সভা-সেমিনারও কম হচ্ছে না। দীর্ঘদিনের নাগরিক দাবি আইন সংশোধন করে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের শাস্তি বাড়ানোর। সেই আইনও পাস হলো। কিন্তু প্রতিকার কি দেখছি? অনেক আগে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) দুর্ঘটনাপ্রবণ ২১৬টি স্থান নির্ধারণ করে প্রতিকারের সুপারিশ করেছিল। তা কি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হয়েছেন? বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টরা কিছুটা নড়েচড়ে ওঠেন, তারপর আবার চিরাচরিত শৈথিল্য। এভাবে আর কতদিন? যত দিন আমরা সততা, সদিচ্ছা, দায়বোধ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে না নামব, তত দিন সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App