×

মুক্তচিন্তা

রক্ষা করতে হবে চামড়াশিল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০৮:৪৬ পিএম

রক্ষা করতে হবে চামড়াশিল্প
চামড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি শিল্প। নির্দিষ্ট কিছু কারণে রপ্তানিমুখী এ শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার দেশের চামড়াশিল্প সংকটের মুখে। দেশি ও বৈশ্বিক মিলে এবারের সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। উদ্বেগের বিষয়, এ শিল্প থেকে গত দুই বছরে অব্যাহতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমছে। কাঁচামালের সহজলভ্যতার পাশাপাশি মূল্য সংযোজনের হিসেবে কোনো একটি নির্দিষ্ট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয়ের অন্যতম বড় উৎস দেশের চামড়া শিল্প। কিন্তু এ সত্য শুধু কাগজে-কলমেই। বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে চামড়াশিল্পকে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে নেয়ার সময় বলা হয়েছিল, ট্যানারিগুলো পরিকল্পিত শিল্পনগরে এলে বুড়িগঙ্গা দূষণ থেকে বাঁচবে। শিল্পনগরী হবে কমপ্লায়েন্স। বড় ব্র্যান্ডগুলো আর বাংলাদেশি চামড়ায় তৈরি জুতা-ব্যাগ কিনতে কোনো দ্বিধা থাকবে না। চামড়া খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপে মন্দার কারণে রপ্তানি আদেশ চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। ইউরোপে তিন ডলারের পণ্যের দাম নেমে গেছে দেড় ডলারে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে ফিনিশড লেদারের সবচেয়ে বড় বাজার চীনেও ব্যবসা থমকে গেছে। দাম না পেয়ে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা, নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা আগাম আঁচ করতে পেরে অনেকে কুরবানির চামড়া মাদ্রাসা, এতিমখানায় দান করেছেন। চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য হওয়া সত্তে¡ও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে শিল্পটি বিপন্ন হতে চলেছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সঙ্গে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যও রয়েছে। এ দুইয়ের কারসাজিতে চামড়াশিল্প আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় যাচ্ছে বাংলাদেশের জুতা ও চামড়াজাত পণ্য। এতে সামান্যতম সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের জন্য চামড়াশিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও এ খাতের বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। চামড়াশিল্পে দেশি সংকটের পাশাপাশি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসের কারণে বিশ্বের চামড়ার প্রধান বাজার চীন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, হংকং ও ইতালিতে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া চীন-আমেরিকা বাণিজ্য বিরোধে চামড়াজাত পণ্যের ওপর বাড়তি সংকট তৈরি করেছে। চীনের চামড়াপণ্যের প্রধান ক্রেতা আমেরিকা। চীন পণ্য উৎপাদন করে আমেরিকায় রপ্তানি করত। অভ্যন্তরীণ বিরোধে জড়িয়ে চীন আমেরিকায় রপ্তানিবাজার হারিয়েছে। আর চীনের চামড়াপণ্যের জন্য বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি হতো বাংলাদেশ থেকে। এখন যেহেতু চীনের চামড়াপণ্যের বাজার মন্দা, সেহেতু আমাদের রপ্তানিতেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। যার ফলে এ দেশের চামড়াশিল্পের পথ আরো একধাপ সংকুচিত হয়ে গেছে। এ দেশে কুরবানি থেকে সংগৃহীত চামড়ার মূল্য বেশিরভাগ চলে যায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয়। বিশেষ করে এতিমখানা, মাদ্রাসা, ফকির-মিসকিন, হতদরিদ্র মানুষ সাহায্য হিসেবে চামড়া বিক্রির টাকা পেয়ে থাকে। এতে প্রান্তিক অতি দরিদ্র শ্রেণির মানুষই বেশি উপকৃত হয়। এক অর্থে চামড়া বিক্রির অর্থ দারিদ্র্য নিরসনে কিছুটা হলেও সহায়ক হয়ে থাকে। সংগৃহীত চামড়াগুলো অধিক নিম্নমূল্যে বিক্রি হলে কিংবা অবিক্রীত অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিল্পের পাশাপাশি দরিদ্রদের সহায়তার চেইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঞ্চিত হয় সাহায্য প্রত্যাশী অসহায় মানুষ। অন্যদিকে চামড়া সাধারণ কোনো শিল্প নয়, দেশের অন্যতম বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শিল্প। তাই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে সরকারের দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব এ শিল্পের সমস্যাগুলো সমাধান করা। তাহলেই চামড়াশিল্প রক্ষা সম্ভব হবে। তাই সময়ক্ষেপণ না করে চামড়াশিল্পের রক্ষার কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাটি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App