×

সাহিত্য

বৃহৎ দেশগুলোর যুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা কমবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ১২:৩৫ পিএম

বৃহৎ দেশগুলোর যুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা কমবে

ড. ইনামুল হক, শিক্ষাবিদ ও নাট্যজন। 

ড. ইনামুল হক। শিক্ষাবিদ, অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক। স্বাধীন বাংলাদেশের টিভিতে প্রচারিত প্রথম নাটকটি তার লেখা। ২১ শে ফেব্রুয়ারির প্রথম নাটকও তার। প্রতিষ্ঠা করেছেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, নাগরিক নাট্যাঙ্গনের মতো নামকরা সব প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। নটর ডেম কলেজে পড়াকালীন তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন ড. ইনামুল হক। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ নাটকে। ১৯৯৫ সালে তিনি এই দল থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন’। বর্তমানে দলটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গুণী এই অভিনেতার করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বেচ্ছাগৃহবন্দি এই সময়টায় বাসা থেকে ভার্চুয়ালি বেশ কয়েকটা সেমিনারে অংশ নিয়েছি। পলাশী যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এর রাজনীতি, অর্থনীতি, জেলাসি, বিশ্বা সঘাতকতা অর্থাৎ ওই সময় যা ঘটেছিল এবং সেইসব বিষয়গুলো এখনো বিদ্যমান আছে কিনা এমন প্রেক্ষাপট নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের একটা সেমিনারে অংশ নিয়েছিলাম। এর বাইরে আমি বেশ কিছু অনুবাদ করার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে ছয়টা অনুবাদ করা হয়ে গেছে। আরো দু’তিনটা করব। নাট্যকার জন মিলিংটন সিঞ্জ এর ‘রাইডার্স টু দ্য সি’ অনুবাদ করেছি। এটা বিশ^ নাটক হিসেবে বিটিভিতে এ মাসেই প্রচারিত হবে। রেজিনাল রোজ এর ‘অ্যা টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’, বার জন রাগী মানুষের কথা। গার্সিয়া লোরকা, শ্যামুয়েল ব্র্যাখট, জা পল সার্ত এবং দারিও ফো’র নাটকও করলাম। এছাড়া আরো দুয়েকজনের লেখকের লেখা অনুবাদ করার ইচ্ছে আছে।

আলাদা করে পড়াশোনা আর করছি না। ওইসব নাটক অনুবাদ করতে গিয়ে তো পড়তে হচ্ছে। নাটকের ব্যাক গ্রাউন্ড এবং বিষয়টাকে ভালো করে রপ্তও করতে হচ্ছে। এছাড়া আমার মেয়ে হৃদি ‘একাত্তরের সেইসব দিন’ নামে একটা সিনেমার জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছে। সেটা নিয়ে ভেতরে ভেতরে কিছু কাজ করছি। ফাঁকে ফাঁকে ভালোলাগার জন্য গানও শুনছি। যা নেপথ্যে সংগীত হিসেবে কাজ করছে।

এছাড়া আমার নাতিরা তো একই ক্যাম্পাসে থাকে, তারা প্রায়ই আসে। এতে করে সময়টা আনন্দেই কাটে। আমার দল নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ছেলে-মেয়েরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। তবে সব কিছুর পরও বিষন্নতাও কম নেই। এই আগস্ট মাসটা যেহেতু শোকেরই মাস। এ মাসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও বিভিন্ন ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিচ্ছি।

করোনায় চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বদল তো বেশ ঘটেছে। বাংলাদেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যে প্রয়োজন ছিল করোনার মধ্য দিয়ে এই বোধটা সবার মধ্যে এসেছে। আমি মনে করি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সংস্কৃতিরই অংশ। এর জন্য সংস্কৃতিবান হওয়াও জরুরি। এই বোধটা আমাদের মধ্যে ছিলই না। করোনা আমাদের সেই শিক্ষাও দিয়েছে। অর্থাৎ সংস্কৃতির কোনো বিকল্প নেই। একজন সংস্কৃতিবান মানুষ খারাপ কাজ করার আগে দুবার অন্তত ভাববে। খুন খারাবি নির্যাতন এসবের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি স্বোচ্ছার ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

মানুষের জন্য মানুষের সহানুভ‚তির জায়গাটারও একটু পরিবর্তন হয়েছে। একের প্রতি অন্যের ভালোবাসা শ্রদ্ধার বোধটা একটু বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও দূরত্বের কারণে কেউ কারো কাছে যেতে পারছে না। এর মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত অনেক ঘটনাও ঘটছে। করোনার সুযোগ নিয়ে শাহেদের মতো চোর বাটপাররা যা করল। এসব ঘটনায় খুব দুঃখ পাচ্ছি। এদের এখনো কেন বোধোদয় হচ্ছে না? কেন সৎ হওয়ার চেষ্টা করছে না? এসব নিয়ে খুব মনোবেদনায় আছি।

এছাড়া বিশ্বের যেসব উন্নয়নশীল দেশ আছে তারা যতই উন্নত হোক না কেন, তাদেরও যে অসহায়ত্ব আছে এই করোনার মধ্য দিয়ে সেই অসহায়ত্বটা প্রকাশ পাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তারাও কিছুটা শিক্ষা পাচ্ছে। আমেরিকা কিংবা অন্য বড় দেশগুলোর যুদ্ধ বিগ্রহের প্রতি যে ভালোবাসা সেটা হয়তো ভবিষ্যতে কমবে বলে আমার ধারণা।

আরেকটা বিষয় নিয়েও বেশ মনোবেদনায় আছি- ক’দিন আগে মারা গেলেন আমার সহকর্মী এবং খুব কাছের মানুষ ছিলেন প্রফেসর আলী আসগর। এইরকম কাছের মানুষদের মৃত্যুতে কাছে গিয়ে পরিবারকে সমবেদনা জানাতে পারছি না। টেলিফোন করছি। তাতে তো মন ভরে না। শেষ দেখাটা আর হচ্ছে না!

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা- জানতে চাইলে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। অনেক বিপর্যয় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এত বড় ঝড় গেছে। সেই যুদ্ধ বিধ্বস্ততা সামলে যখন দেশটা উন্নতির দিকে এগুচ্ছে, আমার মনে হয় সেই মনোবলটা এখনো টিকে আছে। ভবিষ্যতে এই মনোবল বাড়বে বৈ কমবে না। তবে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। ব্যয় সংকোচন করা খুবই জরুরি।

আরেকটা কথা, প্রতিদিন যে নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিন দেয়া হয় সেখানে করোনায় যারা মারা যাচ্ছে তাদের স্ট্যাটাসটা সেভাবে প্রকাশ হচ্ছে না। ধনী গরিব বড় কথা নয়, তাদের মধ্যে কোন শ্রেণির লোক বেশি মারা যাচ্ছে এটা প্রকাশ করা উচিত। তাতে করে বোঝা যাবে ওই শ্রেণির লোকের পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধের অভাবসহ নানা অসঙ্গতিটাও। এত জন মারা গেছে এই সংবাদের মধ্য দিয়ে তাদের অবস্থানগত অবস্থাটা কেমন তা বোঝা যায় না। এ তথ্য ভবিষ্যতে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে ফলপ্রসূ তথ্য হিসেবে কাজ দেবে না। সরকারের এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App