×

জাতীয়

নতুন দুর্ভোগে বন্যার্তরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:১৫ এএম

নতুন দুর্ভোগে বন্যার্তরা

ফরিদপুরের সদরপুর সরকার গ্রাম এখনো ডুবে আছে বন্যার পানিতে। নিত্যপ্রয়োজনে মানুষকে চলাচল করতে হয় নৌকায়। এর মধ্যেই জেলেপাড়ার নারীরা গলাপানি ভেঙে ছুটে যান ত্রাণের আশায়। গতকালের ছবি- মামুন আবেদীন

 খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট ছড়াচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ পানি কমায় তীব্র নদীভাঙন

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু বন্যাকবলিত মানুষ পড়েছেন নতুন দুর্ভোগে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। এছাড়া পানি কমায় তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব। বন্যা দুর্গতরা জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে। অনেকের বাড়িঘর পানিতে ডুবে আছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়ে কম দামে বেচে দিয়েছেন কেউ কেউ। পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি ওঠে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্যকোনো উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করার উপায় নেই। বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গত ৪ আগস্ট বন্যায় আক্রান্ত জেলা ছিল ১৮টি। ৩ দিনের ব্যবধানে ৬টি জেলা বন্যামুক্ত হয়। বর্তমানে ১২টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত। ৩ দিন আগেও ১৭টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর ছিল। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১২টিতে। এদিকে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে। এটি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। পদ্মা নদীর পানিও কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কমতে শুরু করবে। আগামী ৭ দিনে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা

পরিস্থিতির আরো উন্নতি হতে পারে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকুল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুর জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে আগামী ৭ দিন পানি ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। ফলে আগামী ৭ দিনে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি আরো কিছুদিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। তারপর কমে বিপদসীমার নিচে চলে আসতে পারে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি স্টেশনের মধ্যে বাড়ছে ৩৫টিতে, কমছে ৬২টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টিতে। মাদারীপুর : মাদারীপুরের বন্যার পানি ধীরগতিতে নামতে থাকায় বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পানির তোড়ে কাঁচা ও পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এলাকার অনেকেই এখনো কোনো সরকারি ত্রাণ পায়নি। অনেক বাড়ি ঘরে এখনো কোমর পানি রয়েছে। রান্না করতে না পারায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসিরা। শৌচাগার তলিয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে এসব মানুষের। মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে। গত কয়েক দিনে সিরাজদিখানেও দেখা দিয়েছে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের বয়াবহতা। চলতি বন্যায় ইতোমধ্যে জেলার ৩৮টি ইউনিয়নে ২৬১টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। বাড়ছে পানীবাহিত রোগ। বন্যায় পানিবন্দি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০ লক্ষাধিক মানুষ : বন্যায় প্লাবিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি এলাকা। খিলগাঁও, বাসাবো, ডেমরা ও জুরাইন এলাকায় দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি ১০ লাখের বেশি মানুষ। পানি ভেঙে বা নৌকায় করে যাতায়াত করতে হয় তাদের। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে এসব মানুষকে। বালু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নাসিরাবাদ, দাসেরকান্দি, নন্দিপাড়া, বাঘপাড়া ও টিটিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি খিলগাঁও, বাসাবো, ডেমরা, জুড়াইন এলাকার নিম্নাঞ্চলের ১০ লাখের বেশি মানুষ। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় এসব এলাকায় এখন চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। বন্যা পূর্ভাবাস কেন্দ্র জানিয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করা এলাকায় সরকারের পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু হবে। এজন্য বরাদ্দ রয়েছে। যাদের বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো মেরামত করে দেয়া হবে। ফসল তলিয়ে যাওয়া কৃষকরা আবারো বীজ ও সার পাবেন। এছাড়া চাষের জন্য দেয়া হবে মাছের পোনা। পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এ আতিক রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে প্রতিবছরই কমবেশি বন্যা হয়ে থাকে। আমরা বন্যা চলে যাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণও বাড়ে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দ্রুত তাদের সহযোগিতা দিতে হবে। বিশেষ করে কৃষিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনূন নিশাত ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের উচিত সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া। তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমবে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ভাঙনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড যে কাজ করে তা নিছক লোক দেখানো। সুতরাং এখন পর্যালোচনা করার সময় এসেছে কিভাবে কাজ করলে নদী পাড়ের মানুষকে রক্ষা করা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App