×

পুরনো খবর

শতাধিক জনপ্রতিনিধির দুর্নীতির তথ্য দুদকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৩ এএম

সারাদেশের শতাধিক তৃণমূল জনপ্রতিনিধির দুর্নীতির ‘আমলনামা’ এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে। তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে। এদিকে কমিশনে সরাসরি ও হটলাইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির অভিযোগ জমা হচ্ছে। এসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে করোনাকালে সরকারের নেয়া ত্রাণ ও নগদ অর্থসহায়তাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ অনিয়ম রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার ও দুদক। অনিয়মের দায়ে ইতোমধ্যে শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বরখাস্ত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কয়েকজনের অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষে ২৫টি মামলা করেছে দুদক। অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে বাড়ছে দুর্নীতি। অনেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনিয়ম করেও পার পাচ্ছেন। বরখাস্ত হওয়ার পরও অনেক জনপ্রতিনিধি বহাল তবিয়তে আছেন। জানা যায়, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রুখতে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ওই ছুটি শেষ হয় ৩০ মে। একই সময়ে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ায় বেকার হয়ে পড়ে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ। এ পরিস্থিতিতে এসব নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব ত্রাণ কর্মসূচি চালু করে সরকার। কিন্তু এসব ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সে সময় মাটির নিচে, খাটের নিচে, পুকুরে, নানা জায়গায় মিলেছে ত্রাণসামগ্রী। এ কাজে জড়িতদের কেউ জনপ্রতিনিধি, কেউ সরকারি কর্মকর্তা, আবার কেউ ব্যবসায়ী। জনপ্রতিনিধিদের এই অনিয়ম এবং ত্রাণের চাল চুরির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১১০ জনপ্রতিনিধিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই সংখ্যা গত ২০ জুন পর্যন্ত ছিল ১০০ জন। তাদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩০ জন চেয়ারম্যান, ৬৪ জন সদস্য (মেম্বার), একজন জেলা পরিষদ সদস্য, চারজন পৌর কাউন্সিলর এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানও রয়েছেন কয়েকজন। এদিকে সরকারি ত্রাণ বিতরণ ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুর্নীতি ঠেকাতে শুরু থেকেই মাঠে সক্রিয় রয়েছে দুদক। সংস্থাটির নিজস্ব গোয়েন্দা দল এরই মধ্যে ত্রাণ চোরদের একটি তালিকাও তৈরি করে। ত্রাণ চোরদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে প্রধান কার্যালয় থেকে জেলা কার্যালয়গুলোতে নির্দেশনাও দেয়া হয়। সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের কারণে কমিশনের নিয়মিত অভিযান স্থগিত রাখা হলেও ত্রাণ এবং স্বাস্থ্য খাতে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং আরো গতিশীল করা হবে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যারা সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎ, ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে সরকারি চাল আত্মসাৎ, সরকারি ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ না করে কালোবাজারে বিক্রি, জেলেদের ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম, উপকারভোগীদের ভুয়া তালিকা প্রণয়ন করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির খাদ্যসামগ্রী আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ প্রসঙ্গে দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ জুন পর্যন্ত কমিশন ৯৪ জনপ্রতিনিধির অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিয়েছে দুদক। কমিশনের অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেলের নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই কমিটি প্রাপ্ত অভিযোগগুলো বাছাই করে ৯৪ জন জনপ্রতিনিধির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরো যেসব অভিযোগ জমা হচ্ছে সেগুলোও বাছাই চলছে। এই সংখ্যা শতাধিক হতে পারে। কমিশনের কাছে কী ধরনের অভিযোগ জমা হচ্ছে জানতে চাইলে বাছাই কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন, করোনাকালে অনিয়ম ছাড়াও জনপ্রতিনিধি থাকাকালে ভুয়া প্রকল্প করে অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ জমা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ আত্মসাতের বিষয়ে সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, যেসব জনপ্রতিনিধি গরিব-অসহায়ের খাবারে ভাগ বসিয়ে ওএমএসের চাল ও ত্রাণ চুরি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাছাড়া এটি বন্ধ করা যাবে না। এ বিষয়ে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) নির্বাহী সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন অন্যায় দুর্নীতি করার পরও তাদের বিচারের আওতায় না আনায় দিনের পর দিন তারা এসব ঘৃণ্য? কাজ করে যাচ্ছে। ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কঠোর সাজার বিকল্প নেই। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, জাতির এ সংকটময় মুহূর্তে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির ত্রাণ বা অন্য কোনো সহায়তা সঠিকভাবে বিতরণের জন্য কমিশন থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনায় ইতোমধ্যে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে তা তদন্ত করে দ্রুত চার্জশিট দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে দুদক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম, দুদকের গোয়েন্দা তথ্যসহ সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিয়মিত বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দুর্নীতি করে পার পাওয়ার সুযোগ কেউ পাবে না। প্রতিটি অভিযোগ বিচার-বিশ্লেষণ করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতি করে কেউ যেন শান্তিতে থাকতে না পারে, সে ব্যবস্থা কমিশন করবে। অতি লোভী ঘৃণ্য এসব অপরাধীকে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে দুদক এ জাতীয় অপরাধ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App