×

সারাদেশ

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা চসিক প্রশাসকের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩৩ এএম

দায়িত্ব নিয়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে পাশে নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন দায়িত্ব নেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের এই সহসভাপতি। এ সময় চসিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে সুজন বলেন, দুর্নীতিবাজদের কোনোরকম ছাড় দেয়া হবে না। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি সর্বোচ্চ সততার সঙ্গে পালন করতে চাই। আপনারা আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করবেন। চসিক প্রশাসক বলেন, যারা দুর্নীতি করেছেন, আজ বিসমিল্লাহ করে তওবা করে ফেলেন। আমি কিন্তু উদার নই। যার কাছে অনিয়ম দেখব, দুই নাম্বারি দেখব, নগরবাসীর সঙ্গে যারা বেইমানি করবেন তাদের আমি কোনোভাবেই ছাড় দেব না। যারা বিশ্বাসঘাতক, যারা ঘুষ খায়, সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের আমি ছাড় দেব না। এসব অন্যায়ের সঙ্গে আমি আপস করব না। না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেব কিন্তু অন্যায় মেনে নেব না। তিনি বলেন, ভুল করা অপরাধ নয়। কিন্তু ইচ্ছা করে ভুল করা অপরাধ। ভুলের হিমালয় তৈরি করাÑ এটা করতে দেব না। আমি সিটি করপোরেশনকে দলীয় কার্যালয় বানাব না। আমি রাজনীতি করব দলীয় কার্যালয় থেকে। সিটি করপোরেশনে বসে নগরবাসীর সেবা করব। এর আগে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চিরচেনা পাঞ্জাবি ও সবুজ টুপি পরিধান করে সকাল পৌনে ১০টায় নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে যান। আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে অভিনন্দন জানান। দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হতে সভায় বসেন প্রশাসক সুজন। এসময় সেখানে উপস্থিত হন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি নবনিযুক্ত প্রশাসককে অভিনন্দন জানান। এসময় সদ্যবিদায়ী মেয়র নাছির সদ্য নিযুক্ত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের হাত হাত রেখে এক সঙ্গে কাজ করার এবং সুজনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। চসিক সম্মেলন কক্ষে দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন খোরশেদ আলম সুজন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ, প্রধান নগর পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেজাউল করিম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, সিটি হল চসিক আইসোলেশন সেন্টারের পরিচালক ডা. সুশান্ত বড়–য়াসহ বিভাগীয় প্রধানরা। দায়িত্ব নিতে চসিক ভবনে যাওয়ার আগে সকালে খোরশেদ আলম সুজন নগরীর জেল রোডে আমানত শাহর মাজার জিয়ারত করেন। গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে সুজন বলেন, নগরীর সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন। আমি ১৮০ দিন সময় পেয়েছি, ১৮০ দিনই আমি রাস্তায় থাকব। সমালোচনাকে ভয় পাই না। আমার ভুল হতে পারে, তবে অসততা থাকবে না। আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আমার হাতে নেই যে রাতারাতি সব সমস্যা শেষ করতে পারব। ভুল যদি হয় আপনারা দেখিয়ে দেন সেটা স্বীকার করার এবং সংশোধন করার সৎ সাহস আমার আছে। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, ১৮০ দিনের প্রতিটি মুহূর্তকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ১৮০ দিনে আমি বড় কোনো প্রকল্প নেব না। যেগুলো চলমান সেগুলো যেন সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হয়। আগে পুকুরে নামতে দেন, তারপর দেখবেন কিভাবে সাঁতার কাটি। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে চসিক প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর একটি। পাহাড়, সাগর ও নদীর মোহনার একটি প্রাকৃতিক শহর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা প্রধান সমস্যা। কিন্তু আমি এ শহরে জলাবদ্ধতা দেখি না, যা হয় সেটা জলজট। জলাবদ্ধতা মানে যেখানে জল দিনের পর দিন মাসের পর মাস আটকে থাকে। এখানে যা হয় সেটা জলজট। কিছুক্ষণ জমে থাকার পর কয়েক ঘণ্টা পর তা নেমে যায়। জলজটটা কেন হয়? অমাব্যসা-পূর্ণিমায় যখন জোয়ারটা প্রবল হয় তখন সঙ্গে যদি বৃষ্টিসহ হয় এটা নিষ্কাশনের জন্য যে ব্যবস্থাপনা, তা অনেকটা অপ্রতুল। এটার কারণে কিছুক্ষণ পানি জমে থাকে। কিন্তু যখন ভাটা হয় পানিটা নেমে যায়। এ জলজট নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশাল বাজেটের কাজ দিয়েছেন, যা সেনাবাহিনী করছে। শত বছরের সংকট এক বছরে শেষ হবে না। প্রতিদিন খোঁজ রাখব, আশা করি আগামী বছর থেকে একটা সুখবর পাবেন। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উদ্দেশে সুজন বলেন, আজ সকালে ৯টায় আসার সময় নিউমার্কেট জিপিওয়ের সামনে ময়লা দেখেছি। কেন এত সকালে ময়লা থাকবে। পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাব, ভবিষ্যতে এ ময়লা আর দেখতে চাই না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নাছির ভাই অনেক কাজ করেছেন, সেটা সফল করতে হবে। তিনি বলেন, যেদিন বৃষ্টি হবে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকব। কোথায় পানি জমে, কেন জমে, আমি সরেজমিন দেখব। ঘরের মধ্যে বসে কাজ করার দিন শেষ। আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মী, কিভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি। রাতের একটা দুইটা পর্যন্ত কাজ করেছি। এসময় সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছিরের কালো চুল-গোঁফ দেখিয়ে এবং নিজের সাদা দাড়ি দেখিয়ে নাছিরকে ‘চির তরুণ’ বলেও রসিকতা করেন সুজন। বলেন, মেয়র পদে পাঁচ বছর নাছির অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এতদিন অন্যভাবে কাজ করছিলাম, নাগরিক উদ্যোগ নিয়ে বারবার এসেছি। মেয়র আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমরা একসঙ্গে শিক্ষাজীবন কাটিয়েছি, রাজনীতি করেছি। এ শহর আমাদের শহর, সবাই মিলেমিশে শৈশব, কৈশোর, যৌবন, জীবন এ শহরে কাটাব। যার যেটা দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করবেন। এই শহর মাল্টি কানেকটিভিটিতে দাঁড়িয়ে আছে। পাঁচ বছরের মধ্যে সিঙ্গাপুরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। এসময় সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমি খুশি। ১৮০ দিনের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে চসিক প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। সুজন ভাই যখনই সহযোগিতা চাইবেন শতভাগ করব। আমরা একসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিদায়ী মেয়র বলেন, চসিক প্রশাসক সঠিক ও সুচারুভাবে যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন। নেতিবাচক সংবাদে জটিলতা সৃষ্টি হয়। কোনো নিউজ করার আগে তার সত্যতা যাছাই করে করবেন। বিভাগীয় প্রধানদের উদ্দেশে আ জ ম নাছির বলেন, আপনারা যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, আরো বেশি আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে সহযোগিতা করবেন।ধ

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App