×

সাহিত্য

করোনাকাল আমার জন্য শিক্ষার কাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২০, ০৯:৩২ এএম

করোনাকাল আমার জন্য শিক্ষার কাল

ঝুনা চৌধুরী

বিশেষ সাক্ষাৎকার ঝুনা চৌধুরী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
ঝুনা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। একজন সু-অভিনেতা এবং বিদগ্ধ সংগঠক। জনপ্রিয় এই নাট্যজন বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের আলোচিত অভিনেতা, আলোকিত ব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি টিভি ও সিনেমারও একজন সমাদৃত অভিনয় শিল্পী তিনি। ১৯৮৯ সালে ‘নাট্যকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজও দলটির সঙ্গেই কাজ করছেন। এছাড়া ঝুনা চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরপর দুবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। মঞ্চ কিংবা টিভি নাটক ছাড়া সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। ‘ইয়ে করে বিয়ে’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘বৃহন্নলা’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। করোনার ধাক্কায় নাজুক থিয়েটারের নেপথ্যের কর্মীদের পাশে মানবিক হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি দয়ার্দ্র হৃদয়ে। ব্যস্ত এই অভিনেতার করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালটা আমার জন্য একটা শিক্ষার কাল। এর মধ্য দিয়ে বড় একটা সুযোগ পেলাম। আমার মতো সবারই অবস্থা হয়তো তাইই যে, এত বড় সুযোগ হয়তো কেউই আর কোনো দিন পাবে না। এই সুযোগে শুধুই নিজেকে নিয়ে ভাবনা। নিজের পরিপার্শ্বিক নিয়ে ভাবনা। জ্ঞানার্জন করা। আমাদের দায়িত্ব ছিল পড়াশোনা করা, সিনেমা দেখা, নাটক নিয়ে কী ধরনের এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে তা জানা। এসব নিয়ে ভাবার সময়ই পেতাম না। করোনাকালে কিছু কাজ হয়েছে। পাশাপাশি পরিবারকেও সময় দেয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে পরিবারের প্রতি টানটাও অনেক বেড়ে গেছে। যে সুযোগটা আগে ওভাবে পেতামই না। আমার লেখাপড়ার অভ্যাসটা একেবারে শিকেয় উঠে গিয়েছিল। এই করোনায় সেই পড়ালেখার প্রতি ঝোঁকটা আবার তৈরি হয়েছে। নেট ফ্লিক্সে পছন্দের অনেক ছবি তাড়াহীনভাবে আয়েশ করে দেখা হয়েছে। এর ফাঁকে নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছি। যে বিষয়ের দিকে কেউ আগে নজরই দেয়নি। সেসব প্রসঙ্গ নিয়ে বই প্রকাশ করব। করোনার আগে আমাদের একটা নাটক প্রায় রেডিই হয়ে গেছিল। আর একটা মাস সময় পেলে নতুন নাটকটা মঞ্চে নামাতে পারতাম। যেটা তৌকির আহমেদ নির্দেশনা দিচ্ছিল, নাটকটার কাজ আর শেষ করতে পারিনি। সেরকমভাবেই পড়ে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় অপেক্ষায় আছি। তারপর কাজ করব। এছাড়া করোনাকালে নাটকের ছেলেমেয়েদের জন্য কাজ করছি, করোনা আমাদের নাটকের ছেলেমেয়েরা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। যারা পড়াশোনা করেছে, নাটক শিখেছে। নাটক ছাড়া আর অন্য কিছু শেখে নাই তারা। এই করোনাকালে তাদের সারভাইব করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা ওদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, সরকারও চেষ্টা করছে। চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৃথিবী হয়তোবা বদলেছে। কিন্তু আমার বাংলাদেশ বদলায়নি। আমাদের মানুষের চরিত্র বদলায়নি। গাছপালা সবুজ হয়েছে, পশু-পক্ষীরা দেখছি নির্বিচারে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে উড়ছে ঘুরছে। কিন্তু আমরা মানুষ যারা তাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। জোর করেও এসব মানুষকে পরিবেশ সচেতন করা যাচ্ছে না। এই ৩/৪ মাসে জোর করে এদের শারীরিক দূরত্বও মানানো যাচ্ছে না। জোর করে ঘরে রাখতে হচ্ছে। তবে একেবারে হয়নি বললে ভুল বলা হবে। আমি তো মানছি। আমার মতো এ রকম আরো অনেকেরই শিক্ষা হয়েছে। তারা মানছে। আর যাদের হয়নি তাদের আরো একটু সময় লাগবে। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, সবাইকে সচেতন হতেই হবে। ঠিক জায়গায় আসতেই হবে। এছাড়া কোনো পথ নেই। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা জানতে চাইলে এই অভিনেতা আরো বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। যদিও আমরা এই মুহূর্তে জোর করেই করোনা নাই নাই ভাব করছি। কিন্তু আসলে তো করোনা যায়নি। রয়েই গেছে। এটা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কঠোর চিন্তা না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। আমার পরিবার কিংবা আমার পাড়া নিয়ে যদি আমি-আপনি চিন্তা না করি তাহলে বিপদ বাড়বে। যেমন আমি বাজারে গিয়ে অনেককে বলছি, মাস্কটা মুখে দেন কিংবা ধাক্কা দেবেন না। খুব বেশি লাভ না হলেও সুবিধাটা হচ্ছে কেউ উল্টো বাজে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। বরং লজ্জিত এবং সংকোচবোধ করছেন। এ বিষয়টা আমার ইতিবাচকই মনে হয়েছে। এই সচেতনটা হওয়াও অনেক বড় ব্যাপার। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করছি, রাস্তায়, দোকানে, বাসে, ট্রেনে সিগারেট খাওয়া উঠে গেছে। একপর্যায়ে এসব অভ্যাস একেবারে উঠে যেতে বাধ্য হবে। আমি বিশ্বাস করি এটা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App