×

জাতীয়

আদিবাসীদের জন্য করোনাকালীন প্রণোদনা সহায়তার আহবান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২০, ০৮:০৮ পিএম

আদিবাসীদের জন্য করোনাকালীন প্রণোদনা সহায়তার আহবান

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন

করোনাকালীন দুঃসময়ে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক প্রণোদনা সহায়তার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকালে ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

মূল বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হোক। এ ধরনের প্রণোদনা প্রদানের সময় স্থানীয় আদিবাসী সংগঠনসমূহকে যুক্ত করতে হবে, যাতে কোনো আদিবাসী বঞ্চিত না হন। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এবার বিশাল আকারের বাজেট প্রণীত হলেও করোনা-সহায়তা হিসাবে আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। গতানুগতিক বাজেট হয়েছে। সঞ্জীব দ্রং আরো বলেন, সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এক সময় যেসব অঞ্চলে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, সেখানে ‘পপুলেশন ট্রান্সফারের’ ফলে আদিবাসী জনগণ নিজভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আদিবাসী জনগণ দরিদ্রদের মধ্যেও প্রান্তিক। তারা ঐতিহাসিকভাবে শোষণ, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। এখন করোনার কারণে আদিবাসীদের অবস্থা আরো শোচনীয়। আদিবাসী সংগঠনসমূহের সাম্প্রতিকগবেষণা বলছে, দেশে সমতলের আদিবাসীরা শতকরা ৭০ শতাংশ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গেছে। অনেকে চাকুরি হারিয়েছেন। শহরে আদিবাসী গার্মেন্টস কর্মী, হোটেল কর্মী, বিউটি পার্লারের নারী কর্মী, গাড়ি চালক, গৃহকর্মী, সিকিরিটি গার্ড ও অন্যান্য সেক্টরের আদিবাসীরা চাকুরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। এ ধরনের চাকুরি হারানো মানুষের সংখ্যা অন্তত কয়েকহাজার হবে। কৃষি ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত আদিবাসীদের অবস্থাও অনিশ্চিত। যে সকল আদিবাসী দিনমজুর ও দৈনিক পারিশ্রমিকের কাজ করেন, তাদের জীবনেও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতি যদি আরো দীর্ঘায়িত হয়, তবে আদিবাসী প্রান্তিক মানুষেরা অবস্থা হবে আরো শোচনীয়।

করোনাকালীন সময়ে আদিবাসীদের প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি জানিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৩ বছরের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে এবং সমতলের আদিবাসীদের প্রথক ভূমি কমিশন দাবীতে সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। নাগরিক সমাজ আদিবাসীদের সাথে রয়েছে। তিনি বলেন, এদেশ বহুজাতির দেশ। সাওতাল বিদ্রোহ, উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ এদেশে যত সংগ্রাম হয়েছে আদিবাসীরা বাঙালীদের পাশে থেকে লড়াই করেছে। তাদের সমতাভিক্তিক অধিকার দিতে পারলে তখনি বাঙালী গর্বিত হতে পারে। রাষ্ট্র কর্তৃক আদিবাসী দিবস পালন রাষ্ট্রের সম্মান বাড়াবে বৈ কমবে না। আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লংঘন চির অবসান হওয়া দরকার।

মেসবাহ কামাল বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়ার ফলে আদিবাসীদের প্রোডাক্টগুলো অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আদিবাসীরা বেকায়দায় পড়েছে। তাদের জীবন খুবই সংকটনাপন্ন। গারো গৃহকর্মী ও বিউটিশিয়ানদের কর্ম সংকুচিত হওয়ায় তাদেরকে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছ্।ে কিন্তু গ্রামে তাদের কর্মসংস্থান আছে কি? করোনাকালীন দুঃসময়ে আদিবাসীদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আদিবাসী অধিকারকর্মীদের অপরাধীকরণ করা হচ্ছে। তাদেরকে নিপীড়ণ-নির্যাতন, জেল-জুলুম ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে যাতে তারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে না পারে। বিষয়গুলোর দিকে সরকারের নজর দেয়া এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা দরকার। রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমরা আগের নরমালে ফিরে যেতে চাইনা, যেখানে মধুপুরের চলেশ রিছিলকে জীবন দিতে হয় কিংবা গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ঘর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। প্রাণ প্রকৃতির আধিপত্যর জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানবিক, বিজ্ঞানমনস্ক, ভাষা নিরপেক্ষ, জাতি নিরপেক্ষ, অসম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। যেখানে আদিবাসী বাঙালী সমান অধিকার থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসীসহ সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান, সারা দেশে ১০ হাজার আদিবাসী পরিবারকে করোনাকালে খন্ডকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ ১৩টি দাবী জানানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App