×

সাহিত্য

করোনায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২০, ১১:২২ এএম

করোনায় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন

বিশেষ সাক্ষাৎকার ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনেতা

ইলিয়াস কাঞ্চন। ঢাকাই সিনেমার অন্যতম নায়ক। একটি দুর্ঘটনা যাকে অভিনেতা থেকে নেতায় পরিণত করেছে। সেই থেকে এই নায়ক নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করে আসছেন দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে। অথচ এক সময় ঢাকাই সিনেমার বাদশা ছিলেন তিনি। এখনো দেশে সর্বকালের সেরা ছবি হয়ে আছে তার অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’। একই সঙ্গে তিনি রোমান্টিক, অ্যাকশন, কমেডিয়ান এবং পরিবারের সুবোধ বালক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বাংলা সিনেমা যখন অশ্লীলতার দায়ে মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে, তখন তিনি ধীরে ধীরে সিনেমা জগৎ থেকে সরে আসেন।

পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক। ব্যস্ত এই নায়কের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমি শুধু একদিনই বাসার বাইরে গিয়েছিলাম। এ ছাড়া বাসাতেই থাকছি সর্বক্ষণ। আমার সংগঠনের কর্মকাণ্ড ভার্চুয়ালি করছি। এ ছাড়া করোনাকালে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারাদেশে আমাদের যে ২০টি শাখা আছে, এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করছি। বন্যার মধ্যেও সুনামগঞ্জ এবং বগুড়ার ৩টি স্পটে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘ সময় সময়কে আমি কাজে লাগানোর পক্ষপাতি।

যে বিষয়টায় আমার ঘাটতি আছে সেটার উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই। এর মধ্যে ধর্মীয় অনেক বিষয় জানা এবং লেখাপড়াটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাসায় বসে আছি বলে আমি অস্থির হইনি। কারণ আমি জানি, উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে জোর করে কোনো কিছু করা যাবে না। এই পরিস্থিতি যতদিন থাকে ততদিন পর্যন্ত যেভাবে থাকা, চলা এবং যে নিয়মগুলো মানা দরকার, তা মানতে হবে। এর মধ্যে মাঝেমাঝে দেশবাসীকে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য লাইভে কথা বলি।

হ্যাঁ, করোনার অভিঘাতে অর্থনৈতিকভাবে সবার মতো আমিও ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া সময় কাটানোর সময়ও ওভাবে পাচ্ছি না। বহুদিন ধরে শুটিংও করছি না। আমার শেষ ছবি রিলিজ হয়েছিল ২০১৮ সালে। এরপর আর কোনো সিনেমায় আমি অভিনয় করিনি।

শুটিং কিংবা অভিনয় তো আপনার প্রিয় প্রসঙ্গ, এর থেকে দূরে আছেন কেন? এর জবাবে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এখনকার কাজ আমার পছন্দ হয় না। আমি যে কাজ করেছি, ওই  লেভেলে কাজ হচ্ছে না, কাজের উন্নতি হতে হবে। আমারটার চেয়ে বেটার কিছু হতে হবে। বেটার যদি না-ও হয় অন্তত যা করেছি এর কাছাকাছি তো হতে হবে। এরচে কম কিছু হলে আমি কাজটা কেন করব? তারা আমাকে কী দেবেন? ক’টা টাকা? সেই ক’টা টাকার জন্য আমি আমার অর্জনকে বিসর্জন দিতে পারি না। আমার দায়বোধের জায়গার সঙ্গে এসব মিলছে না বলেই সরে এসেছি। আমি আমার সাংগঠনিক কাজ নিয়েই ব্যস্ত আছি। সেই ভালো।

করোনার এই সময়টাতে চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটেছে জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এই নেতা বলেন, চেনা পৃথিবীর অনেকটাই বদল ঘটে গেছে। সবচে যে ভয়াবহ ব্যাপার লক্ষ্য করছি, সেটা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। বাঙালির কাছে ইউটিউব ফেসবুক ভয়াবহ একটা প্লাটফরম। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কেউ ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিও ছেড়ে দিচ্ছে। সেখানে যেভাবে গালাগালি করে তা এমন কুরুচিপূর্ণ, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এইটা এখন নতুন একটা আপদ।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে মোবাইল ক্যামেরার অপব্যবহার। এ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা খুব বাজে। আমি আমার সংগঠনের পক্ষ ৬৪ জেলার শিক্ষকদের ট্রেনিং দিতে ডাকলাম। তারা যেন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা কীভাবে রাস্তাঘাটে নিজেদের নিরাপদে রাখবে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন। কিন্তু তারা কর্মশালার চেয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা বাচ্চাদের কী বোঝাবেন? নিজেরাই সচেতন নন! শিক্ষিত থেকে শুরু করে অশিক্ষিত সবারই মধ্যে এই প্রবণতা।

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘুরে তো দাঁড়ায় মানুষই। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সবচে যে জিনিসটা দরকার, সেটা হচ্ছে দুর্নীতি বন্ধ করা। তাহলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। এখন স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির কথা সামনে এসেছে, অথচ গত ২৭ বছর ধরে যোগাযোগ সেক্টরের দুর্নীতির কথা বলে আসছি। ঠিক তো হচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App