×

সারাদেশ

অর্ধযুগ ধরে বেওয়ারিশ ২১ মরদেহ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২০, ০৬:৫৬ পিএম

অর্ধযুগ ধরে বেওয়ারিশ ২১ মরদেহ!

পিনাক ৬

পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির অর্ধযুগ পার হলেও পরিচয় মেলেনি ২১ মরদেহের। অজ্ঞাত হিসাবে দাফন করা এ ২১ মরদেহের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গেল ৬ বছরেও পরীক্ষা করার জন্য সংগ্রহ করা হয়নি নিখোঁজ থাকাদের পরিবারের কোনো সদস্যর নমুনা। ভয়াবহ লঞ্চ ডুবির ঘটনায় সরকারি হিসেবে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার ও ৫৩ জন নিখোঁজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ৬ বছরেও বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি আলোচিত এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার। বিচার কার্যের দীর্ঘসূত্রতায় এ দূর্ঘটনায় অভিযুক্ত ২ মামলার আসামিরা রয়েছেন জামিনে। ৬ বছর অতিবাহিত হলেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের মাঝে রয়েছে তীব্র চাপা ক্ষোভ। নিখোঁজ অর্ধ শতাধিক পরিবারের কাউকেই দেয়া হয়নি কোনো অনুদান। এদুঘর্টনার পরপরই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা ও মেরিন কোর্টে করা ২ মামলায় আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। তবে ৬ বছরেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। এ দুর্ঘটনায় উদ্ধারকৃত ৪৯ টি লাশের মধ্যে ২৮টি লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয় আর ২১ জনকে জেলার শিবচর পৌরকবর স্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। রেখে দেয়া হয় ওই ২১ জনের ডিএনএ টেস্টের নমুনা। তবে এই ৬ বছরেও কেউ শনাক্ত করতে আসেনি লাশগুলো। সরকারি হিসেবে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৫৩ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে অন্তত শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। যে সব পরিবারে এখনো স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি অনুদান। যদিও ২৮ পরিচয়ধারী নিহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে ও পরিবর্তিতে ঘোষিত ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে অনেক অসহায় পরিবারকে কাটাতে হচ্ছে মানবেতর জীবন যাপন। গত ৬ বছরেও কেউই খোঁজ নেয়নি তাদের। এতে ক্ষোভের অন্ত নেই স্বজন হারা পরিবারগুলোতে । ঘটনার পর লৌহজং ও শিবচরে স্থাপন করা হয় অভিযোগ ও তথ্য কেন্দ্র। এ ঘটনার পরপরই নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। নিহত ও নিখোঁজদের মধ্যে একই পরিবারে একাধিক মানুষ থাকলেও এতোদিনে নিখোঁজদের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি তেমন কোনো সিদ্ধান্ত। এই যেমন, শিবচর পৌর এলাকার মো. নুরুল হক মিয়ার ঢাকার শিকদার মেডিকেলে ডাক্তারি পড়ুয়া মেয়ে- নুসরাত জাহান হিরা ও রাজধানীর বীরশ্রেষ্ট নুর মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এবং তারই ভায়রার মেয়ে চীনের জইনুস মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শরিয়তপুরে গঙ্গানগর এলাকার জান্নাতুল নাঈম লাখী এই দুর্ঘটনায় ৩ জন মারা গেলেও উদ্ধার হয়েছে ২ জনের মৃতদেহ। একজন এখনো নিঁখোজ। শিবচর পৌরসভা মেয়র, আওলাদ হোসেন খান জানান, অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করাদের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হলেও নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করতে কেউ এই ৫ বছরেও আসেনি। এ ঘটনার দীর্ঘ বিলম্বে আমি ক্ষুব্ধ। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, পিনাক-৬ দুর্ঘটনার পর এ রুটে নৌযান পারাপারের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ঈদুল ফিতরের পর ৪ আগস্ট ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে শিবচরের কাওরাকান্দি ঘাট থেকে পিনাক-৬ লঞ্চটি উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে মাওয়ার অংশে ডুবে যায়। সরকারি ভাবে ওই ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App