×

স্বাস্থ্য

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২০, ০৯:২৭ পিএম

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

কোমর ব্যথা

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

কোমর ব্যথা

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

প্রসূতির কোমর ব্যথা।

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

দীর্ঘক্ষণ ধরে টেবিল চেয়ারে বসে থাকলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

কোমরে ব্যথা মারাত্মক

কোমরে ব্যথা- কারণ ও প্রতিকার

কোমরের ভেতরে ব্যথা

ব্যথার অভিজ্ঞতা হয় নাই এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার তা যদি হয় কমরে ব্যথা তাহলে তো কথাই নাই। আমরা যেসকল ব্যথায় ভুগি তার মধ্যে কোমরে ব্যথা একটি অন্যতম কারণ। কারণ ভেদে সকল বয়েসের মানুষের মধ্যে কোমরে ব্যথা দেখা যায়। তবে মধ্যম ও অধিক বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তাই আজ কমরে ব্যথার আদ্যপান্ত নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। কোমরব্যথার কারণ যে কোনো ধরনের ব্যথার জন্য নিচের যে কোনো একটির ওপর অস্বাভাবিক চাপ বা ভেঙে যাওয়া বা ইনজুরিই প্রধান কারণ। ১. মাংসপেশি ২. হাড় ৩. জোড়া ৪. লিগামেন্ট ৫. জোড়ার আবরণ ৬. শিরদাড়া বা ভারটিব্রাল কলাম ৭. ডিস্ক (দুই কশেরুকার মধ্যে থাকে) ও ৮. স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি। তাই কোমরে ব্যথাও এর ব্যতিক্রম নয়। আসুন জেনে নেয়া যাক কী কী কারণে এসব উপসর্গ তৈরি হতে পারে। বুক, পেট ও তলপেটের মধ্যকার বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যার জন্য কোমরব্যথা হতে পারে। ১. যারা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরের মাংস পেশি, কোমরের বিভিন্ন জোরা বা জয়েন্টস ও স্নায়ুতে চাপ তৈরি হয়। এরকম কিছুদিন চলতে থাকলে সেটা ব্যথায় রূপ নেয় ও পরবর্তীতে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে। ২. বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে একই কারণে কোনো সময় কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ৩. দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে কোমর ব্যথা হতে পারে। ৪. যারা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা সোফায় শুয়ে টিভি দেখেন বা অন্য কাজ করেন, তাদের মেরুদণ্ড বা ভারটিব্রাল কলাম দীর্ঘ সময় তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে ব্যতিক্রম অবস্থানে থাকেন। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। ৫. অনেকেই আছেন যারা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়। ৬. অস্বাভাবিক পজিশনে ঘুমানোর কারণে অনেকেই ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারেন। ৭. আঘাত জনিত কারণে উপরে উল্লেখিত যে কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হতে পারে। ৮. যারা বয়োবৃদ্ধ আছেন তাদের দীর্ঘদিন ধরে শরীর নাড়াচাড়া বা জয়েন্টস একই অবস্থায় থাকতে থাকতে মাংশপেশী শিকিয়ে যায়, জয়েন্টসগুলো শক্ত হয়ে স্নায়ুর উপর চাপ বৃদ্ধি করে ফলে ব্যথা হয়। ৯. এছাড়াও অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ। যাতে আমাদের শরীরের হাড়গুলো ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে পারে না। যে কারণে হাড়গুলো নরম ও ভঙ্গুর হয়। আবার এতে আমাদের দুই কশেরুকার মাঝে যে নরম জেলির মতো পদার্থ থাকে বা ইন্টারভারটিব্রাল ডিস্ক থাকে তার উপর চাপ পড়ে। সেটা আবার আমাদের শরীরের দুই পাশের ব্যথা নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর ওপর চাপ বাড়ায় এবং কোমরে ব্যথা হতে পারে। কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন? সব সময় ধরে বা জমে আছে—এ ধরনের ব্যথা। ভারী ওজন তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষ্ণ ব্যথা। কোমর থেকে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত হলে। পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে। হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়। প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে। শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে। [caption id="attachment_235419" align="aligncenter" width="700"] কোমর ব্যথা[/caption] চিকিৎসা চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি ১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ২. ব্যথা পরবর্তী চিকিৎসা প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা: ১. দীর্ঘক্ষণ আমরা একই ভাবে বসে না থেকে ৫-১০ মিনিট বিরতি নিতে পারি। এই সময়ে আমি নিজ অবস্থানে বসে শারীরিক কিছু হালকা ব্যায়াম করে নিতে পারি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন মাংশপেশী, জয়েন্টস ও মেরুদণ্ডে রক্ত চলাচল বাড়বে ও এদের অতিরিক্ত চাপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হবে। ২. নিয়মিতভাবে আমাদের বিভিন্ন জায়গার মাংশপেশীর জন্য নির্ধারিত কিছু ব্যায়াম আছে যা করতে পারি। এসকল ব্যায়ামে বেশি সময় প্রয়োজন হয় না। নিয়মিতভাবে ৫-১০ মিনিট সময় দেয়ার মাধ্যমে আমরা এসকল ব্যায়াম করতে পারি। এতে আমাদের শরীরের মাংশপেশী ও জয়েন্টস অতিরিক্ত চাপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হবে। ৩. ঘুমানোর ক্ষেত্রে খুব সুন্দর কিছু নিয়ম আছে যা মেনে আমরা খুব সহজেই শরীরের ঘাড়, মাথা ও কোমরের ব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে পারি। ৪. আমাদের বাসায় যারা খুবই বয়োবৃদ্ধ তাদের দিনের কোনো এক সময় অন্য কেউ একজন শরীরের বিভিন্ন মাংশপেশী ম্যাসেজ ও জয়েন্টসগুলো নাড়াচাড়া করিয়ে দিতে পারি। এতে করে তাদের স্নায়ুর ওপর চাপ কম হয় এবং ব্যথা কম থাকে বা আসে না। ৫. অভ্যাস না থাকলে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বহন করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমাদের মাংশপেশী, লিগামেন্টস, জয়েন্টস ও মেরুদণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে ইনজুরি থেকে ভালো থাকতে পারি। ৬. অস্টিওপোরোসিস রোগের জন্য যারা ঝুঁকিতে থাকেন যেমন মাঝ বয়েসী মহিলা, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, যাদের ওজন অতিরিক্ত তারা যথা সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে পারেন। ব্যথা পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি: কোমরে ব্যথায় যারা ভোগেন তারা অধিকাংশ সময় মানসিক চাপে থাকেন এই ভেবে যে আমার মনে হয় বড় কিছু হয়েছে অথবা আমি আর কখোনো সম্পূর্ণ ভালো বা সুস্থ হব না এমন। কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল। কোমরে ব্যথার অনেক ধরনের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে এবং এগুলো নিয়ে ও কিছু অভ্যাস মেনে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি আমরা কয়েকটি স্তরে নিত পারি। ১. মেডিক্যাল চিকিৎসা ও ব্যায়াম। ২. ইন্টারভেনশনাল থেরাপি। ৩. কগনিটিভ বিহ্যভিয়রাল থেরাপি বা জীবন যাপন পদ্ধতি পরিবর্তনমূলক কাউন্সেলিং ৪. অপারেশন। কগনিটিভ বিহ্যভিয়রাল থেরাপি বা জীবন যাপন পদ্ধতি পরিবর্তন মূলক কাউন্সেলিং কোমরে ব্যথার রুগীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী চিকিৎসা। এতে এসকল রুগীর মানসিক অবস্থা উন্নতি করা হয়, চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বোঝানো হয় জীবন যাপন পদ্ধতি নিয়ে বোঝানো হয় ও বিভিন্ন ব্যায়াম শিক্ষা দেয়া হয়। বিভিন্ন পেইন সেন্টারে এই ধরনের চিকিৎসার ব্যাবস্থা থাকে। [caption id="attachment_235421" align="aligncenter" width="738"] প্রসূতির কোমর ব্যথা।[/caption] মেডিক্যাল চিকিৎসা মেডিক্যাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে কয়েকটি কথা বলে নেয়া খুবই জরুরি। ব্যথার জন্য অনেকেই বিভিন্ন সময় নিজেদের ইচ্ছামতো ঔষধ কিনে খান। ব্যথার জন্য ব্যাবহার হয় এমন অনেক ঔষধ (NSAID) দীর্ঘদিন ধরে বা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রেশার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছারাও রক্ত ক্ষরণজনিত সমস্যা হতে পারে। সেজন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিরাপদ ঔষধ খাওয়া উচিত। আর চিকিৎসা নেয়ার সময় অবশ্যই আপনার পূর্বে থেকে কোনো অসুখ বা ঔষধ খেয়ে থাকলে বলতে ভুল করবেন না। ব্যায়াম কোমর ব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা নিরাময় করা এবং কোমরের নড়াচড়া স্বাভাবিক করা। পূর্ণ বিশ্রাম কিন্তু দীর্ঘদিন বিশ্রাম নিলে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়। তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ওজন তোলা, মোচড়ানো পজিশন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও সামনে ঝুঁকে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। সঠিক উপায়ে বসার অভ্যাস করতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্যাক সাপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। গরম সেঁক (গরম প্যাড, গরম পানির বোতল বা উষ্ণ পানিতে গোসল) নিতে হবে। পেশী নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। কিছু ব্যায়াম কোমরব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে, এমনকি ওষুধের চেয়েও ভালো ফল দেয়। এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৭ মিনিট। ১. সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলুন যতদূর সম্ভব। ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে। একইভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন। ২. এবার একইভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলুন এবং একই সময় নিন। ৩. এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে। ৪. একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে। ৫. সর্বশেষ দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে সটান করে ১০ সেকেন্ড রাখতে হবে। প্রতিটি ধাপ ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত করতে হবে। [caption id="attachment_235422" align="aligncenter" width="700"] দীর্ঘক্ষণ ধরে টেবিল চেয়ারে বসে থাকলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।[/caption] ইন্টারভেনশন বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা: মেডিক্যাল চিকিৎসা ও ব্যায়াম যদি কার্যকারী না হয় বা অনেকক্ষেত্রে ব্যথার কারণ যদি নির্ণয় করা সম্ভব হয় তাহলে ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করে ভালো উন্নতি পাওয়া যায়। বর্তমানে ব্যথার চিকিৎসায় অনেক ধরনের ইন্টারভেনশন প্রচলিত রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন ব্যথায় কার্যকারী। অনেকেই ইনজেকশন নিয়ে ভীত হন। তাদের জন্য তথ্য হচ্ছে এই সকল ইন্টারভেনশন ব্যথামুক্ত ভাবে করা হয় এবং রুগীরা দিনে দিনেই বাসায় চলে যেতে পারেন। এতে অপারেশন এড়ানো যায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যথা কমাতে ইন্টারভেনশন চিকিৎসা খুবই কার্যকারী। নিচে কিছু ইন্টারভেনশন নিয়ে সংক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বলব। ১. ইপিডুরাল ইঞ্জেকশন আমাদের মাজায় ব্যথা যদি মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ জনিত কোনো কারণ হয়ে থাকে তাহলে এর প্রাথমিক অবস্থায় এই ইজেকশন দেয়া হয়। এতে বেশ কিছুদিন ভালো থাকা সম্ভব। আর এর সঙ্গে অবশ্যই উপদেশসমূহ মেনে চলতে হয়। উপদেশগুলো মেনে চললে অনেক দিন ভালো থাকা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যথা আর আসে না। এই ইঞ্জেকশনের তেমন কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। তবে অবশ্যই যারা এতে সিদ্ধহস্ত তাদের নিকট থেকেই নিতে হবে। আনাড়ি কেউ বা যাদের এই বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নাই তারা দিতে গেলে অনেক সময় ক্ষতি হতে পারে। যেমন ভুল জায়গায় ইঞ্জেকশন। স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। ২. ওজন থেরাপি ওজন একটি উপাদান যাতে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। একটি মেশিনের সাহায্যে তৈরী করার সাথে সাথে এটি মাজার নির্দিষ্ট ডিস্ক স্পেসে দেয়া হয়। এতে নির্দিষ্ট ডিস্ক স্পেসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়েয়ে দেয় এবং প্রদাহ কমায় ফলে ব্যথা কমে যায়। এই ইঞ্জেকশন টি দিতে অত্যাধুনিক যন্ত্র (সিআরম) ব্যাবহার করা হয়। ৩. ফেসেট ইঞ্জেকশন এটি মেরুদণ্ডের উপরের ও নিচের হারের সংযোগস্থলে সমস্যা থাকলে দেয়া হয়। এটিও অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্য দেখে দায়া হয়। ফলাফল খুব ভালো। যাদের সামনে ঝুকতে ব্যথা হয় তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ৪. রুট ব্লক বা SNRB ( Selective Nerve Root Block) যারা ডিস্ক প্রল্যাপসড বা মেরুদণ্ডের দুটি হারের মাঝে যে নরম জেলির মতো পদার্থ আছে সেটি বাইরের দিকে এসে শরীরের দুইপাশের ব্যথা নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতে চাপ দেয় – এই সমস্যায় ভূগছেন। এসব ক্ষেত্রে যে স্নায়ুতে চাপ দেয় সেই সুনির্দিষ্ট স্নায়ুতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ব্লক করা হয়। এটা খুবই কার্যকারী একটি পদ্ধতি এবং এতে অপারেশন এড়ানো সম্ভব। ব্যথামুক্ত পদ্ধতিতে ইনজেকশন দেয়া হয়। রুগী সঙ্গে সঙ্গেই বাসায় যেতে পারেন। যারা এতে পারদর্শী বা ট্রেইনিং আছে তাদের নিকট থেকেই এটা করা উচিৎ। ৫. কডাল ইপিডুরাল ইনজেকশন(Caudal Epidural Injection) যারা মাজা ব্যথার জন্য অপারেশন করিয়েছেন কিন্তু ব্যথা যাচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকারী একটি পদ্ধতি। ৬. Pairiformis injection মাজার নিচের দিক থেকে উরু বরাবর যারা ব্যথায় ভূগেন তাদের অধিকাংশেরই কারন হতে পারে পাইরিফরমিস সিনড্রোম। যেটাতে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং মেডিক্যাল চিকিৎসায় যায় না। সেক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা উন্নত মেশিনের সাহায্যে নির্দিষ্ট জায়গায় বা পাইরিফরমিস মাংশপেশীতে ইনজেকশন দেয়া হয় এবং সাথেসাথে ব্যথা মুক্ত হয়। এটি খুবই কার্যকারী চিকিৎসা। অপারেশন চিকিৎসা: বেশ কিছু কারণে অপারেশজনিত চিকিৎসা দরকার হতে পারে। যেমন- ১. আঘাত জনিত কারণে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেলে। ২. ডিস্ক প্রোল্যাপ্সড বেশি হয়ে গেলে। ৩. কোমরে ব্যথার সঙ্গে পা অবশ হওয়া শুরু হলে। ৪. মেরুদণ্ডে টিউমারের কারণে কোমরে ব্যথা হলে। [caption id="attachment_235423" align="aligncenter" width="700"] কোমরে ব্যথা মারাত্মক[/caption] কাদের বেশি হয়? ১. কোমরে ব্যথা সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। বেশি দেখা যায় ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে। ২. কায়িক শ্রমের অভাব বা নিয়মিত ব্যায়ামের অভাবে পেট ও পিঠের মাংসপেশি চাপ ধরে যায়। ফলে একটু পরিশ্রমেই ব্যথা হতে পারে। ৩. অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের মাংসপেশি এবং হাড়ের ওপর চাপ পড়ে। ফলে ব্যথা হতে পারে। ৪. অনেক সময় কিডনিতে পাথর হলে বা প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু কোমরে ব্যথাই না, অন্য আরো অনেক উপসর্গও থাকবে। তাই কোমরে ব্যথা হলেই সেটা কিডনি স্টোন বা ইউরিন ইনফেকশন নয়। ৫. ডিপ্রেশন বা স্ট্রেমের কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। ৬. মদ্যপান এবং স্মোকিং-এর কারণেও কোমরে ব্যথা হয়। স্মোকিং-এর কারণে রক্তনালী চিকন হয়ে যায় এবং কোমর থেকে নিচের দিকে ঠিকমত রক্ত প্রবাহ হয় না। যার ফলে হাড় ঠিকমত পুষ্টি পায় না এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। ৭ অস্টিও পোরোসিসের কারণে অনেক মাঝ বয়েসী নারীদের মাজায় ব্যথা হতে পারে। কখন সতর্ক হবেন? কোমরে ব্যথার পাশাপাশি কিছু কিছু সিম্পটমস আছে যা অনেক রোগের অ্যালার্মিং সাইন। যেমন- • যদি কোমরে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব বা পায়খানার কোনো পরিবর্তন খেয়াল করেন। • যদি সঙ্গে জ্বর থাকে। • আঘাত পেলে বা কোনো প্রকার ট্রমা হলে। • যদি ব্যথার তীব্রতা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে এবং রেস্ট নিলেও না কমে। • যদি ব্যথা এক বা দুই পায়েই নেমে যায়, বিশেষ করে হাঁটুর নিচে। • যদি ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বলতা, অবশভাব বা পায়ে ঝিম ঝিম অনুভুতি হয়। • যদি ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমতে থাকে। • যে কোনো প্রকার স্টেরয়েড ওষুধ খাওয়ার পর যদি ব্যথা শুরু হয়। • যদি আপনার অতিরিক্ত মদ পান বা সিগারেটের বদভ্যাস থাকে। [caption id="attachment_235426" align="aligncenter" width="700"] কোমরের ভেতরে ব্যথা[/caption] কোমরে ব্যথা আমাদের একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। এটিকে অনেকেই সময়মত গুরুত্ব দেন না। যে কারণে মারাত্মক পরিণতি এমনকি অপারেশনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যেতে হতে পারে। তাই কোমরে ব্যথার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলুন। অনেক অত্যাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে ধারাবাহিকভাবে সেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জেনেশুনে ও বুঝে চিকিৎসা নিতে পারেন। আর অবশ্যই চলাফেরা বা জীবনযাপন পদ্ধতিতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন নিজের অসতর্কতার জন্য কোনো সমস্যা তৈরি না হয়। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। লেখক: কনসালটেন্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান, কুরমিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App