×

সারাদেশ

অবশেষে কোরবানির মাংস জুটলো তাদের ভাগ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২০, ০১:১০ পিএম

অবশেষে কোরবানির মাংস জুটলো তাদের ভাগ্যে

ফুডব্যাংকের উদ্যোগে অতি দরিদ্রদের মাঝে মাংস বিতরণ করছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন

জরিনা বেগম। স্বামী সন্তান নিয়ে বাস করেন ফুলছড়ির ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চর কাবিলপুরে। বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ। স্বামীরও আয় রোজগার নেই। করোনার সাথে সাথে বন্যার আঘাতে সব কিছু লণ্ডভণ্ড। গেলো তিন মাসে ভালো খাবার জোটেনি তাদের ভাগ্যে। এমনকি গেল কোরবানির ঈদের দিনও হাড়িতে মাংস তুলতে পারেনি তারা । জরিনা বেগমের মত করিমা, আয়না, আজগর, শাহজাহান, আলেফা, ছালেহা, নুরজাহান বেগমেরও একই অবস্থা। ফুলছড়ি ফুডব্যাংক থেকে ১ কেজি গরুর মাংস পেয়ে আনন্দে আত্মহারা চরাঞ্চলের গায়েখাটা মানুষগুলো । মাংস পেয়ে জরিনা বেগম বললেন, তার স্বামী দিন মজুরের কাজ করে, লকডাউনের পর বন্যায় কাজকর্ম না থাকায় স্বামী সন্তান নিয়ে অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন। শনিবার ঈদের দিনও ডাল, আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছেন। এই মাংস রান্না করে আত্মা ভরে ছোলপোল নিয়্যা খামো বাবা। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরের মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের উদ্যোগে ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে তিনশ পরিবারকে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন, ফুলছড়ি ফুড ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন রোববার (২ আগষ্ট) কাবিলপুর চরে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বানভাসীদের হাতে মাংস পৌঁছে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাওছার আলী, মেডিকেল অফিসার ইলতুতমিশ পিন্টু, স্থানীয় সমাজ সেবক প্রভাষক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা, স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদেক খান, ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের আহবায়ক আশিকুর রহমান মুন প্রমুখ। স্থানীয়রা জানান, দফায় দফায় বানের ধাক্কায় কাবিলপুর চরের মানুষগুলোর এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। একদিকে শ্রমজীবি মানুষগুলো হয়েছে কর্মহীন। অন্যদিকে প্রান্তিক চাষিদের নেই আয়-রোজগার। তার মধ্যে অনেকেই গার্মেন্টসের চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল। কাবিলপুর চরের সাড়ে ৫শ’পরিবার পড়েছে দূর্বিপাকে। তাই ঈদ তাদের জন্য আনন্দ বয়ে আনেনা। কোরবানির ঈদ হলেও তারা ভাগ্যে মাংস জোটেনি। তাই নিরানন্দেই কাটে তাদের ঈদ। এই চরে কোরবানি দেওয়ার মতো সামর্থ্যবান কেউ নেই বললেই চলে। যারা আছে তারা বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে অনেকটা নিরুপায়। এমন চিত্র জানতে পেরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গঠিত ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের উদ্যোগে ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্সের মাধ্যমে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন ওই চরের পরিবারগুলোকে মাংস পৌঁছে দেয়ার জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা চান। তার আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকে ফুলছড়ি ফুডব্যাংকে সহযোগিতা করেন। বিত্তবানদের সহায়তায় ওই চরের অতি দরিদ্র তিনশ পরিবারকে দেয়া হলো এক কেজি করে মাংস। এছাড়া উড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজসেবক প্রভাষক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঈদের দিন ওই চরের পার্শ্ববর্তী রতনপুরের শাপলা বাজার এলাকার ১৫০টি পরিবারকে এক কেজি করে মাংস বিতরন করেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন তার আত্মীয় স্বজনের করা কোরবানির মাংস চেয়ে এনে এবং নিজের করা কুরবানির মাংস থেকে ১৫০টি পরিবারকে কুরবানির মাংস পৌঁছে দেন। ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন বলেন, বিত্তবানদের সহায়তায় ফুলছড়ি ফুডব্যাংক থেকে ওই গ্রামের সাড়ে পাঁচশ পরিবারের মধ্যে তিনশ পরিবারে তারা মাংস পৌছাতে পেরেছেন।তিনি বলেন, কোরবানীর ঈদ মানেই ত্যাগের বার্তা। সমাজের বিত্তবানদের একটু ত্যাগের মধ্য দিয়ে হাজারো অসচ্ছল মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফোটানো সম্ভব। সবাই এগিয়ে এলে ফুড ব্যাংকের মাধ্যমে এসব চরাঞ্চলের মানুষের কল্যাণে আরো অনেক কিছুই করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App