×

সারাদেশ

এই গোশতো স্বামী-ছোল নিয়্যা আত্মাভরি খামো বাবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২০, ১০:৪১ পিএম

এই গোশতো স্বামী-ছোল নিয়্যা আত্মাভরি খামো বাবা

ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের সহযোগিতা

নুরজাহান বেগম আজ রোববার গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের হাত থেকে এক প্যাকেট গোশতো পাওয়ার পর ছল ছল চোখে এক প্রকার আনন্দ অশ্রু ঢেলে তার ভাষায় বললেন, "ডিসি স্যার আজ এই গোশতের প্যাকেট দিলে। বাড়িত যায়া আন্না (রান্না) করি স্বামী-ছোল নিয়্যা আত্মা ভরি খামো বাবা"। তিনি আরও বলেন, হামার (আমার) সোয়ামী(স্বামী) শহরোত কাম করে (দিনমজুর)। করোনার কারণে সরকার কাজ-কাম বন্দ (বন্ধ) করি দেওয়ায় (লকডাউন) পর কাজ কাম না থাকায় স্বামী সন্তান নিয়্যা অতিকষ্টে দিন কাটাচ্চি (কাটাচ্ছি) বাবা। শনিবার ঈদের সগলে(সবাই)মিলে দুপুরোত(দুপুর বেলা) ডাল, আলু ভর্তা দিয়্যা ভাত খাছোম (খেয়েছি) বাবা।

নুরজাহান বেগম। স্বামী সন্তান নিয়ে ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চর কাবিলপুরে বসবাস করেন। বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ। মহামারি করোনার সাথে দীর্ঘ মেয়াদী বন্যার কষাঘাতে সব কিছু লন্ডভন্ড। স্বামীরও কর্ম না থাকায় রোজগার নেই। গেলো সাড়ে চার মাসে ভালো খাবার জোটেনি তাদের পেটে। এমনকি শনিবার কোরবানির ঈদের দিনও হাড়িতে গোশতো (মাংস) তুলতে পারেননি তারা। নুরজাহান বেগমের মত করিমা বেগম, আয়না বেগম, জরিনা বেগম, আজগর আলী, শাহজাহান মিয়া, আলেফা বেগম, ছালেহা সালহা বেগমেরও একই অবস্থা। ফুলছড়ি উপজেলার ফুডব্যাংক থেকে এক কেজি করে গরুর মাংস পেয়ে আনন্দে আত্মহারা চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরের মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের উদ্যোগে ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে ৩২৩ পরিবারকে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন, ফুলছড়ি ফুড ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন রোববার (২ আগষ্ট) কাবিলপুর চরে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বানভাসীদের হাতে মাংস পৌঁছে দেন এবং একইসাথে উক্ত চরের উপস্থিত সকল মানুষের মুখে মাস্ক পরিয়ে দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ফুলছড়ি থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওছার আলী, মেডিকেল অফিসার ইলতুতমিশ পিন্টু, স্থানীয় সমাজ সেবক প্রভাষক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা, স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদেক খান, ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্স গ্রুপের আহবায়ক আশিকুর রহমান মুন।

স্থানীয়রা জানান, দফায় দফায় বন্যার ধাক্কায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষগুলোর এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরের একদিকে শ্রমজীবি মানুষগুলো হয়েছে কর্মহীন। অন্যদিকে প্রান্তিক চাষিদের নেই রোজগার। তার মধ্যে অনেকেই গার্মেন্টসের চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা ত্রাণ সহায়তা দেয়া হলেও তা অপ্রতুল। কাবিলপুর চরের সাড়ে ৫০০ পরিবার পড়েছে দূর্বিপাকে। করোনা আর বন্যার কারণে ঈদ তাদের জন্য আনন্দ বয়ে আনে নাই। কোরবানির ঈদ হলেও তাদের ভাগ্যে গোশত জোটেনি। তাই নিরানন্দেই কাটে তাদের কোরবানির ঈদ। এই চরে কোরবানি দেওয়ার মতো সামর্থ্যবান কেউ নেই বললেই চলে। যারা আছে তারা বন্যা ও নদী ভাঙনের কবলে অনেকটা নিরুপায়।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গঠিত ফুলছড়ি ফুডব্যাংকের উদ্যোগে ফুলছড়ি ভলান্টিয়ার্সের মাধ্যমে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন ওই চরের পরিবারগুলোকে মাংস পৌঁছে দেয়ার জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা চান। তার আহবানে সাড়া দিয়ে অনেকে ফুলছড়ি ফুডব্যাংকে সহযোগিতা করেন। বিত্তবানদের সহায়তায় আজ রোববার ওই চরের অতি দরিদ্র ৩০০ পরিবারকে দেয়া হলো এক কেজি করে মাংস।

এছাড়া উড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সমাজসেবক প্রভাষক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঈদের দিন এই চরের পার্শ্ববর্তী রতনপুর চরের শাপলা বাজার এলাকার ১৫০ পরিবারকে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন তার আত্মীয় স্বজনের করা কোরবানির মাংস চেয়ে এনে এবং নিজের করা কোরবানির মাংস থেকে ১৫০ পরিবারকে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেন।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলন বলেন, বিত্তবানদের সহায়তায় ফুলছড়ি ফুডব্যাংক থেকে ওই গ্রামের ৩০০ পরিবারে তারা মাংস পৌছাতে পেরেছেন। তিনি আরও বলেন, সমাজের বিত্তবানদের একটু ত্যাগের মধ্য দিয়ে হাজারো অসচ্ছল মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফোটানো সম্ভব। সবাই এগিয়ে এলে ফুড ব্যাংকের মাধ্যমে এসব চরাঞ্চলের মানুষের কল্যাণে আরো অনেক কিছুই করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App