×

জাতীয়

চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে যে খাবারগুলো মিস করবেন না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২০, ১০:০০ পিএম

চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে যে খাবারগুলো মিস করবেন না

চট্টগ্রামের মেজবানি খাবার রান্নার দৃশ্য/ ছবি: সংগৃহিত

চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে যে খাবারগুলো মিস করবেন না

চট্টগ্রাম শহরের ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যুন’-এর মেজবান। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে যে খাবারগুলো মিস করবেন না

গণি বেকারির ‘বেলা’ বিস্কুট

চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে যে খাবারগুলো মিস করবেন না

চট্টগ্রামের আখনি বিরিয়ানি। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ঘুরতে গেলে যে খাবারগুলো মিস করবেন না

যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের সব ভ্রমণপিপাসুরা কোন অঞ্চলে ঘুরতে বেশি যান? তবে সবার আগে উঠে আসবে চট্টগ্রামের কথা। পাহাড়, সমূদ্র, সবুজ প্রকৃতি সবই আছে চট্টগ্রাম বিভাগে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমূদ্র বন্দরও চট্টগ্রামে। ভ্রমণপিপাসুদের ঘুরতে যাওয়ার তালিকায় চট্টগ্রামের নাম সবার আগে।

বর্ণিল এই জেলায় খাদ্যের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ। শুধু ভ্রমণপিপাসু নয়, ভোজনরসিক মানুষদের জন্যও চট্টগ্রাম কম নয়। ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত খাবার অবশ্যই মেজবানি মাংস। মেজবানের জন্য চট্টগ্রাম বলতে গেলে সারা বিশ্বেই নাম করে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বেশ কিছু ফুড ব্লগে উঠে এসেছে।

[caption id="attachment_235154" align="alignnone" width="1536"] চট্টগ্রামের মেজবানি খাবার রান্নার দৃশ্য/ ছবি: সংগৃহীত[/caption]

মেজবান কি?

মেহমান অর্থ যেমন অতিথি। ফার্সি শব্দ মেজবানের বাংলা অর্থ যিনি অতিথি আপ্যায়ন করেন। তবে বর্তমানে মেজবান মানে বিশেষ উপায়ে অতিথি আপ্যায়ন করা। সাধারণত মেজবান আয়োজনে বেশ কিছু উপলক্ষ থাকে। জন্মদিন, মৃত্যুর পর কুলখানি, মৃত্যুবার্ষিকী এসব ক্ষেত্রেই মেজবানের আয়োজন হয় বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিবাহ অনুষ্ঠানেও মেজবান আয়োজন দেখা যায়। যুগের বদল হলেও চট্টগ্রামের মানুষ এই মেজবান সংস্কৃতি আজও ধরে রেখেছে। এখনও মেজবান মানেই চট্টগ্রামে বিশাল এক উৎসব।

মেজবানে মূলত গরু মাংসের বেশ কিছু পদ করা হয়। অবশ্যই ঝাল মাংসের ঝোল সহকারে একটি পদ থাকে। এছাড়া থাকে মাংসের কালাভুনা। এখানে মাংসকে পেঁয়াজ এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে একেবারে ভুনা করে নেয়া হয়। এছাড়া হাড়যুক্ত মাংসকে আলাদাভাবে ডাল দিয়ে রান্না করা হয়। এছাড়া আলাদাভাবে থাকে গরুর পায়া।

[caption id="attachment_235155" align="alignnone" width="1440"] চট্টগ্রাম শহরের ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যুন’-এর মেজবান। ছবি: সংগৃহীত[/caption]

মেজবানি রান্না কেন আলাদা?

মেজবানি মাংস আলাদা হবার প্রধানতম কারণ এর রন্ধনপ্রণালী। ঠিক কে কবে এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন তা জানা না গেলেও এই রান্নার পদ্ধতিই আজ অব্দি চলে আসছে। যারা মেজবানি রান্নার পদ্ধতি জানেন, চট্টগ্রামের বাবুর্চি সমাজে তাদের কদর আলাদা। এবং তাদেরকে বেশ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে। এই রান্নার অনেক বাবুর্চি প্রায় শয়ের ওপর মশলা ব্যবহার করেন বলেও জনশ্রুতি আছে।

শ’খানেক মসলা না হলেও প্রচলিত মসলার বাইরেও অনেক কিছুই এতে ব্যবহার করা হয়। যেমন : আস্ত জিরা, সাদা সরিষা, ধনিয়া, মৌরি, শুকনা মরিচ, মেথি, জয়ত্রী, জয়ফল, পোস্তদানা ইত্যাদি।

বর্তমানে ইন্টারনেটে মেজবানি মাংসের বিভিন্ন রেসিপি বা রন্ধনপ্রণালী পাওয়া গেলেও এর আদি এবং অকৃত্রিম স্বাদ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই চট্টগ্রামের মাটিতে পা রাখতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি চাইলেই যেকোনো মেজবানের আসরেই হাজির হতে পারেন। মেজবান এমন এক প্রথা যেখানে আয়োজক কখনোই অতিথি সংখ্যা হিসেব করতে পারবেন না।

মেজবানি মাংস ছাড়াও চট্টগ্রামে আরও অনেক খাবারই আপনাকে মুগ্ধ করবে। এপর্যায়ে দেখে নিন, পর্যটনের এই শহরে আর কি কি খেতে পারেন।

[caption id="attachment_235156" align="alignnone" width="1536"] গণি বেকারির ‘বেলা’ বিস্কুট[/caption]

গণি বেকারির বেলা বিস্কুট

পূর্বপুরুষের হাত ধরে ১৮৭৮ সালে বেকারিশিল্পে যুক্ত হন আবদুল গণি সওদাগর। ১০৫ বছর বয়সে ১৯৭৩ সালে মারা যান তিনি। তার আগে ১৯৪৫ সালের ৮ অক্টোবর ওয়াক্ফ করে যান তিনি। সে অনুযায়ী এই বেকারির হাল ধরেন আবদুল গণির ভাইয়ের ছেলে দানু মিঞা সওদাগর। তিনি মারা যাওয়ার পর ১৯৮৭ সালে তাঁর ছেলে জামাল উদ্দিন হাল ধরেন। জামাল উদ্দিন মারা যাওয়ার পর হাল ধরেন তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ এহতেশাম।

আব্দুল গণি সওদাগরের পূর্বপুরুষ ছিলেন মোগল সুবেদার লাল খাঁ। চট্টগ্রামে তারাই শুরু করেন বিস্কুট ব্যবসা। তবে আব্দুল গণি এই বেলা বিস্কুট এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন যে, বর্তমানে নগরীর একটি জায়গার নামই হয়ে গিয়েছে গণি বেকারি। বিকেলে বা সকালে চায়ের সাথে ‘টা’ হিসেবে গণি বেকারির বেলা বিস্কুট চট্টগ্রামের মানুষের প্রথম পছন্দ।

বিস্কুট উৎপাদনে যুগান্তকারী সব বদল আসলেও বেলা বিস্কুট উৎপাদনে এখনও সেই মাটির তন্দুরি চুলাইই ব্যবহার হয়। ঠিক যেমন মোগল আমলে খেয়েছিলেন মোগল বাদশাহরা।

[caption id="attachment_235157" align="alignnone" width="936"] চট্টগ্রামের আখনি বিরিয়ানি। ছবি : সংগৃহীত[/caption]

চট্টগ্রামের আখনি বিরিয়ানি

আখনি বিরিয়ানি নিয়ে চট্টগ্রাম আর সিলেটের মাঝে একটা যুদ্ধ হতে পারে। এই দুই জেলাই আখনি বিরিয়ানির জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। মূল কাদের সেটি বাদ দিলেও চট্টগ্রামের আখনি খেতে ভুল করবেন না। নগরীর বেশ কিছু নামী রেস্টুরেন্টে আপনি এই বিরিয়ানির স্বাদ পাবেন। আখনি মূলত এক প্রকার পানীয়। এই পানীয়তেই আপনি বিরিয়ানির রান্না করবেন। চট্টগ্রামের আখনি বিরিয়ানি অনেক বেশি মসলাদার হয়ে থাকে। এবং এতে ভাত ও মাংসের অনুপাত সবসময় ১:১। যার কারণে ঝুরঝুরে ভাতের বদলে পুরোটা বেশ ঘন হয়। সাধারণত চট্টগ্রামের মানুষ আতপ চালে বেশি অভ্যস্ত হলেও আখনীর জন্য সেদ্ধ চালই দরকার।

আর যদি চট্টগ্রাম আসার সুযোগ হয় তবে এখানকার বেশ কিছু রেস্টুরেন্টে আপনি যেতে পারেন। মেজবান খেতে চাইলে ‘মেজ্জান হাইলে আয়্যুন’-এ অবশ্যই যেতে হবে। এছাড়া ‘সেভেন ডেইজ’, ‘বীর চট্টলা’। এছাড়া ‘তাজিংডং’ রেস্তোরায় পাবেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন খাবারের স্বাদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App