×

জাতীয়

ইসলামি নেতাদের সঙ্গে চীন দূতাবাসের বৈঠকে কৌতূহল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২০, ০২:০৭ পিএম

ইসলামি নেতাদের সঙ্গে চীন দূতাবাসের বৈঠকে কৌতূহল

বৈঠকে অংশ নেয়া ইসলামি নেতাদের বিভিন্ন উপহার দেয় চীন দূতাবাস- ভোরের কাগজ

চীনে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো এই বৈঠক

হঠাৎ করে ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার দূতাবাসের বাগানে আয়োজিত ওই বৈঠক নিয়ে নানা কৌত‚হল সৃষ্টি হয়েছে। চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে গোটা বিশ^ যেখানে চিন্তিত সেখানে ঢাকায় চীন দূতাবাসের কর্মকর্তার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের বৈঠক কোন বার্তা বয়ে আনছে সেটি নিয়েই শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চীন দূতাবাস ইসলামি নেতাদের সঙ্গে শুধু বৈঠক করেই ক্ষান্ত দেয়নি, বিষয়টি ফলাও করে ফেসবুকেও প্রকাশ করেছে। বৈঠকে অংশ নেয়া ইসলামি নেতাদের বিভিন্ন উপহারও দিয়েছে চীন দূতাবাস। গত মঙ্গলবার চীন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বৈঠকের খবর প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘পবিত্র ঈদুল আজহার ঠিক কয়েকদিন পূর্বে মিনিস্টার কাউন্সেলর এবং ডেপুটি চিফ অফ মিশন ইয়ান হুয়ালং দূতাবাসের বাগানের বৈঠকখানায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (আইএবি) পক্ষে গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম এবং লোকমান হোসেন জাফরীর সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন।’ ওই ফেসবুক পেজে আরো বলা হয়, ‘এটা জেনে আমরা

সত্যিই আনন্দিত যে করোনা মহামারি চলাকালীন, আইএবি সমগ্র দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এবং সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোকে অব্যাহত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে।’

এরপরই সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম দেখা গেলেও ইসলামী আন্দোলন কি ভ‚মিকা রেখেছেন তা কেউ দেখেনি। ফলে কোভিড-১৯ নিয়ে চীন দূতাবাসের ইসলামি নেতাদের প্রশংসা নিয়ে কৌত‚হল থাকা স্বাভাবিক। অনেকেই বলেছেন, কোভিডের নাম করে ইসলামি নেতাদের পাশে টানার চেষ্টা করছেন চীনা দূতাবাস। একইসঙ্গে বিশ্লেষকরা এও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ঢাকায় ইসলামি নেতাদের সঙ্গে চীন দূতাবাসের বৈঠকের কারণ কী? চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছেন সেখানে কোনো সুরাহা না করে ঢাকায় ইসলামি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কী বার্তা দিতে চায় চীন? বাংলাদেশের ধর্মীয় দলগুলোকে চীনে মুসলিম নির্যাতনের কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা না গেলেও চীন দূতাবাসের সঙ্গে ইসলামি নেতাদের বৈঠকে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর আগে গত নভেম্বরে চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম স¤প্রদায়ের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বন্দিশিবিরে আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে সরকারি একটি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। চীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গোষ্ঠী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে ওই নথিতে উঠে এসেছে। ফাঁস হওয়া ওই নথিতে দেখা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিভাবে ২০১৪ সালে অঞ্চলটি সফরকালে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অঞ্চলটির মুসলিমদের ব্যাপারে বেইজিংয়ের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ওই সময় একটি ট্রেন স্টেশনে হামলার পর অঞ্চলটি সফর করেন শি জিনপিং। ওই হামলার জন্য উইঘুরদের দায়ী করা হয়। সফরকালে ও পরে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে কঠোরভাবে সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় উইঘুর মুসলমানদের ব্যাপারে কোনো অনুকম্পা না দেখানোরও নির্দেশ দেন জিনপিং। শুধু নৃতাত্তি¡ক উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমানরাই নয়, বরং একই অবস্থা অঞ্চলটির অন্য মুসলিমদেরও। ৪০৩ পৃষ্ঠার ওই নথিতে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিতর্কিত অভিযান পরিচালনার অবিশ্বাস্য সব তথ্য উঠে এসেছে। উইঘুরদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, তাদের ওপর নজরদারি এবং শি চিন পিংসহ বিভিন্ন নেতার অপ্রকাশিত বক্তব্যও রয়েছে ওই নথিতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীনের লড়াই কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নয়, বরং জিনজিয়াং থেকে উইঘুর মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে বেইজিং। উইঘুর মুসলমানদের নিপীড়নে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চীনের ২৮ সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র্র। এসব সংস্থার মধ্যে জিনজিয়াংয়ের প্রাদেশিক নিরাপত্তা ব্যুরো এবং ১৯টি ছোটখাটো সরকারি সংস্থা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App