×

সাময়িকী

সংকটে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৭:৫৫ পিএম

সংকটে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে
আমি তো এখন বৃদ্ধ মানুষ। আমার জন্য সবাই ভয়ে আছে। বৃদ্ধ লোকদের জন্য করোনা নাকি ঝুঁকিপূর্ণ ইত্যাদি ইত্যাদি। ময়মনসিংহে আমার শ্বশুরবাড়িতে সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আমি একরকম গৃহবন্দি হয়ে আছি এখনও। এর মধ্যে লেখাপড়াও কিছু করতে পারছি না। পত্রিকাটাও ভালো করে পড়তে পারি না। মাথাও কাজ করছে না। প্রায় সারাদিনই শুয়ে বসে কাটাচ্ছি। খুব অসহ্য হয়ে উঠেছে দিনগুলো। কী আর করা করোনা আতঙ্ক নিয়েই বেঁচে আছি। আমার ছেলেবেলায় আমি গ্রামে থাকতাম। গ্রামেই আমার জন্ম। গ্রামেই বড় হয়েছি। কিন্তু আমাদের ছেলেবেলায় দেখেছি, সেসময় করোনা কেন, ওই ধরনের কোনো সংক্রমক ব্যাধি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েনি। এছাড়া আমার ছেলেবেলা ছিল অন্যরকম। আমার শৈশব কেটেছে পাকিস্তানের জন্ম-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। আবার পাকিস্তান সৃষ্ট যন্ত্রণা ভোগের মধ্য দিয়ে কেটেছে কৈশোর। মাঝের দিনগুলোতে ঘটে গেছে পঞ্চাশের মন্বন্তর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ছেচল্লিশের সাধারণ নির্বাচন, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনা-দুর্ঘটনা। তবে সে সময় অসাম্প্রদায়িক একটা পরিবেশও ছিল। সাম্প্রদায়িকতাও ছিল না যে তাও নয়। কোনো কোনো সাম্প্রদায়িক লোক ছিল, তা তাদের কথায়-বার্তায় সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ ঘটত। এটা তো সবখানেই আছে। সবখানেই পজিটিভ-নেগেটিভ দুটোই থাকে। এ জিনিসটা তখনও ছিল। কিন্তু আমি ছেলেবেলায় অত্যন্ত সম্প্রীতির মধ্যেই মানুষ হয়েছি। আমার ছেলেবেলা অসাধারণ কেটেছে। সেই স্মৃতি আজও অমলিন। আমার মুসলিম বন্ধুবান্ধবরাও ছিল অন্যরকম। তাদের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। এখনও আছে। আমি ছেলেবেলাতেই ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি বেশ পড়াশোনা করতাম এবং আমি ঈদের মাঠেও যেতাম। ঈদের মাঠে গেলে আমাকে আলাদা করে বসার জায়গা দিত। সেখানে বসে আমি ঈদের নামাজ দেখতাম। ঈদের নামাজের পরে সকলে ইসলাম সম্পর্কে কিছু কিছু কথাবার্তা বলত। আমাকেও বলতে দেয়া হতো। আমিও তখন ইসলাম সম্পর্কে আমার ধ্যান-ধারণার কথা বলতাম। সবাই খুব খুশি হতো। এইভাবে ছেলেবেলায় আমার ঈদ কেটেছে। ওই সময় সবার সঙ্গে অসাধারণ হৃদ্যতা ছিল। ঈদের সময় বিভিন্ন বাড়ি থেকে আমার কাছে নিমন্ত্রণও আসতো। সেসব নিমন্ত্রণে যেতাম। আমাকে সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গেই আদর আপ্যায়নও করত। তবে বকরির ঈদ নয়, রোজার ঈদে। গত ঈদ তো বাজেভাবেই কাটল। দুদিন পরেই আরেকটা ঈদ বা উৎসব। কিন্তু করোনাকালে ঈদ কেমন হবে বোঝাই যাচ্ছে। খুবই কঠিন সময় পার করছি আমরা এতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো মাঠে নামাজ হবে না। মসজিদেই নামাজ হবে। তাতে যে ভয়ের আশঙ্কা চলে গেছে তা তো নয়। ভয় পিঁড়ি পেতে আছে মনের মধ্যে। এর মধ্য দিয়েই মনে সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App