×

সাময়িকী

রোমান সানার হাসি-কান্না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৩:২২ পিএম

রোমান সানার হাসি-কান্না

রোমান সানা

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের নতুন তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তীর ধনুক হাতে একের পর এক সাফল্য দিয়ে দেশকে করেছেন গর্বিত। ২০১৯ বছরটা দুর্দান্ত গেছে বাংলাদেশি আর্চার রোমান সানার। গত জুনে আর্চারির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিতে উঠেই ইতিহাস গড়েছিলেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পেয়েছিলেন সরাসরি ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে খেলার ছাড়পত্র। এছাড়াও ব্রোঞ্জ জিতে দেশকে উপহার দিয়েছিলেন কোনো বিশ্ব প্রতিযোগিতার প্রথম পদক। সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনে এশীয় র‌্যাঙ্কিং আর্চারিতে ব্যক্তিগত ইভেন্টে জেতেন সোনা। ডিসেম্বরের শুরুতে নেপালের কাঠমান্ডুতে এসএ গেমসে আর্চারির দশ ইভেন্টের দশটিতেই সোনা জেতে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রোমানের ব্যক্তিগত সোনার পদক ছিল তিনটি। তবে করোনার ক্রান্তিকালে যেহেতু সব ধরনের খেলা বন্ধ তাই আপাতত ঘরে বসেই অনুশীলন ও শরীরচর্চা করে সময় কাটাচ্ছেন রোমান। এবার কুরবানি ঈদটা অবশ্য নিজের প্রিয় শহর খুলনাতেই করবেন এই তীরন্দাজ। এবারের ঈদটা অন্য ঈদগুলোর চেয়ে একেবারেই অন্যরকম। নিজের ঈদ উদযাপনের বিষয় ও ঘরে বসে অনুশীলনের নানা দিক নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডায় মেতেছিলেন আর্চারির পোস্টারবয় রোমান সানা। এবার জন্ম স্থান খুলনাতেই ঈদ উদযাপন করবেন রোমান সানা। ঈদের কথা স্মরণ করায় অতীতে ডুবে যান এ আর্চার। ছোটবেলায় ঈদের আনন্দ আর এখন ঈদের আনন্দ অনেক তফাৎ। ছোটবেলায় ঈদের আনন্দটাই ছিল অন্যরকম। এখন আমরা খুলনা শহরে থাকি। তখন আমরা দাদু বাড়ি থাকতাম। সেখানে আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। আমার দাদুর ভাইয়েরা সবাই একসঙ্গে থাকতেন, তাদের ভাইয়েরা ঈদের দিন বেড়াতে আসতেন ছোট চাচা, বড় চাচা, মেজো চাচা সবাই ঈদের দিন আসতেন। বাবা-মার কাছ থেকে ঈদের নতুন জামা পেয়ে বেশ খুশি হতাম। অপেক্ষায় থাকতাম কবে ঈদ আসবে। চাঁদ উঠলে চাঁদ দেখতে যেতাম। ঈদের দিন সবার কাছ থেকে সালামি নিতাম, বেশ মজার ছিল সেই দিনগুলো। আর এখন উল্টো ছোটদের সালামি দিতে হয়। এখনকার ঈদ আর তখনকার ঈদের মধ্যে অনেক পার্থক্য। সেই পুরনো অনুভ‚তিগুলো আর ফিরে আসবে না। আমার মনে হয়, কাউকে যদি বলা হয় আপনার মনের ইচ্ছা কি? তাহলে সে হয়তো বলবে আমি আবার ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই। শৈশবের অসংখ্য স্মৃতির মধ্যে একটি স্মৃতির কথা মনে পড়লে একা একা হেসে ওঠেন রোমান সানা। স্মৃতিটা হলো দাদুর সঙ্গে ধান খেতে যাচ্ছিলাম। বিলের পাশে একটি বড় শোল মাছ দেখে ধরতে গিয়ে ছিলাম কিন্তু ধরতে পারছিলাম না। তখন দাদু মাছটি ধরে আমাকে দিয়েছিল। আমি মাছটা ধরে উঁচু করতে পারছিলাম না আর শোল মাছ অনেক পিচ্ছিল থাকে। তখন আমার বয়স ৫/৬ বছর হবে ক্লাস ওয়ানে পড়তাম। মাছটা ধরে উঁচু করে বাড়িতে আনার সময় আমার কোমর থেকে বারবার প্যান্ট পড়ে যাচ্ছিল, আর দাদু সেটা টেনে তুলে দিচ্ছিল। এই স্মৃতিটা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। শৈশবে গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করতে গিয়ে আর্চারির প্রেমে পড়ে যান রোমান সানা। ছোটবেলা থেকেই তীর ধনুকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। গ্রামের ছেলেরা কমবেশি তীর ধনুক দিয়ে খেলে। মাঠে এসে যখন প্রথম তীর ছুড়েছি তখন থেকে আমার আর্চারিতে যোগদান করার শখ হলো। এরপর থেকেই আর্চারিকে বেছে নিলাম। ২০০৮ সালে যখন আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি। তখন স্কুলের সহ-সভাপতি হাসান স্যারের হাত ধরেই আর্চারিতে আসা। প্রথমদিকে কিছুটা বাধ্যবাধকতা ছিল। এরপর পরিবার থেকে শতভাগ সমর্থন পেয়েছি। বাবা প্রথম দিকে অবশ্য বলতেন, ক্রিকেট-ফুটবল খেললে ভালো হতো। সবাই তোমাকে চিনতে পারত পরিবারের ভার নিতে পারতে। কিন্তু মা আমাকে সব সময় অনেক সমর্থন দিতেন। বলতেন, এটাতে লেগে থাক। ইনশাআল্লাহ, ভালো কিছু হবে। মায়ের অনুপ্রেরণায় রোমান সানা এখন আর্চারিতে বাংলাদেশের পোস্টার বয়। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। সাফল্যধারা অব্যাহত রাখতে অনুশীলনের বিকল্প নেই। তাই করোনার এ ক্রান্তিকালে বাড়িতে বসে ফিটনেস ধরে রাখতে মরিয়া রোমান সানার জন্য শুরুতে এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। তবে পরে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমরা অনলাইনে ক্লাস করেছি। কীভাবে শরীর চর্চা করতে হয় কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখতে হয় সে বিষয়গুলো নিয়ে কোচ ফ্রেডরিক সঙ্গে আলোচনা করেছি। তবে বাসায় ধনুক দিয়ে অনুশীলনের কোনো সুযোগ ছিল নেই। আমি আমার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, কারণ পরে আমাদের ধনুকগুলো বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছেন। প্রথম পদক জয়ের অনুভ‚তি সম্পর্কে সানা জানান, বেশ আনন্দদায়ক ছিল সেই অনুভ‚তি। সেটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। ২০১০ সালে তীরন্দাজিতে আমার অভিষেক হয়। একই বছর আমি প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। ঢাকা মেরিনার্স ইয়ং ক্লাবের হয়ে খেলেছিলাম। মিশ্র দলীয় খেলায় সিলভার জিতেছিলাম। আসলে প্রথম অর্জনটা সবারই স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এটা কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। ২০১৪ সালে ব্যাংককে এশিয়া কাপ স্টেজ ওয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এবং ২০১৭ সালে কিরগিজস্তানে আন্তর্জাতিক আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জেতার পর আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। করোনার কারণে অলিম্পিক পিছিয়ে এ নিয়ে ভাবতে নারাজ রোমান সানা। তিনি বলেন, আসলে আমি সবসময় চিন্তা করি, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। যেহেতু করোনার কারণে টোকিও অলিম্পিক পিছিয়েছে তাই বিষয়টি ভেবে মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই। বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারলাম না এটা ভাবলে আমার জন্য আরো ক্ষতি। যেহেতু টুর্নামেন্ট পিছিয়ে গেছে তাই এখনো আমার অনুশীলনের অনেক সময় আছে। নিজেকে অলিম্পিকে খেলার জন্য তৈরি করার যথেষ্ট সময় পাব। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন থাকে ক্যারিয়ারে ভালো কিছু করার। একজন সেরা অ্যাথলেটিক সব সময় স্বপ্ন দেখেন স্বর্ণ জয়ের। আমি সবসময়ই ভালো খেলার প্রত্যাশা করি। যদি অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে যাই তাহলে ভাববো এটা আল্লাহপাকের বিশেষ মেহেরবাণী। তবে প্রথমবার অলিম্পিকে কোয়ালিফায়ার করতে পেরেছি এটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। সেখানে গিয়েই স্বর্ণ জিততে পারব এটা বলা ভুল হবে। সেখানে গিয়ে কন্ডিশনের সঙ্গে আগে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। বড় বড় প্রতিযোগীর সঙ্গে টেক্কা দিতে হবে তারপর স্বর্ণ জয়ের আশা। তবে আমি যথেষ্ট চেষ্টা করব যেন অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে দেশবাসীকে উপহার দিতে পারি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App