×

সাময়িকী

মানুষের জীবনটা এত ছোট হওয়া উচিত না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৩:৪৩ পিএম

মানুষের জীবনটা এত ছোট হওয়া উচিত না

সেলিম চৌধুরী

জুনের মাঝামাঝিতে প্রথম যখন জ্বর অনুভূত হয়েছিল, তখন ভেবেছিলাম আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই হয়তো জ্বর এসেছে। তারপরও আমি আমার ডাক্তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে বলে, ‘এখন কোনো প্রকার জ্বর-কাশি এলেই, করোনা টেস্ট করা প্রয়োজন।’ এছাড়া আমার পরিচিত একজন ছিলেন, তিনি কিছুদিন আগেই করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। তার সঙ্গেও আমি যোগাযোগ করি। তখন মনে হলো যে, আমারও করোনা হলে হতে পারে। তারপর বাসাতেই করোনার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। করোনা হলে ডাক্তাররা সাধারণত যে ওষুধগুলোর পরামর্শ দেন, যেমন হাইবার মেক্সিন, অ্যান্টিবায়োটিক ও প্যারাসিটামল এই জাতীয় ওষুধ খাচ্ছিলাম। এতে জ্বর কিছুটা কমে, আবার কমছিলও না। বাড়িতে আইসোলেশন মেনে চলি। জুলাইয়ে আমি সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল। সেই সময়ে অদ্ভুত ভয়ানক স্বপ্ন দেখতাম মাঝেমাঝে। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা বললেন, ‘অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে এমনটা হয়, এতে ভয়ের তেমন কারণ নেই।’ সাইকোলজিক্যালি সে সময়টায় কিছুটা এফেক্ট পড়ে। আশপাশের অনেকেই মারা যাচ্ছেন, এমন বিষয় থেকেও এফেক্ট পড়ে। এই সময়টাতে একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো সবকিছুতে যে সাহস থাকে, সেই সাহসটা আমার ছিল না। আমি সবসময় সাধারণ জীবনযাপন করি। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে আপন বোন, মামা-মামিকে হারিয়েছি। বাড়িতে হঠাৎ মর্টার সেল পড়ে গিয়ে তারা মারা গিয়েছিলেন। তখন আমার বয়স ৫ বছর হবে। সেই বয়সে এমন একটা মৃত্যু-পরিস্থিতি থেকে আমি বেঁচে গিয়েছি। তখন থেকেই আমার সবকিছুতে ভয় কম কাজ করে, মনে সাহস থাকে। আমার এই পুরো জীবনটাকে ‘বোনাস লাইফ’ মনে হয়। কারণ আমার তো সেখানেই মারা যাওয়ার কথা। বোনাস লাইফে যা-ই ঘটুক, তা নিয়ে আমি ভয় পাই না। যখন হাসপাতালে ছিলাম, তখন একদিন রাত্রিবেলায় প্রকৃতি এত বেশি সুন্দর লেগেছিল, আমার মনে হয়েছিল- ‘মানুষের জীবনটা আসলে এত ছোট হওয়া উচিত না’। নিজের কাছে মনে হয়েছিল আমার আরো কিছুদিন বেঁচে থাকা দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App