×

জাতীয়

বিক্রি কম, দাম আরো কম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৯:২০ এএম

বিক্রি কম, দাম আরো কম

বৃষ্টি-কাদা উপেক্ষা করে জমে উঠেছে কুরবানির পশুরহাট। ২৮ জুলাই গরু কিনে এভাবেই সাজিয়ে নিয়ে যান অনেক ক্রেতা। তবে গাবতলী হাটে বেপারি ও ক্রেতাদের অনেককেই স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানতে দেখা যায়নি -মামুন আবেদীন

পুরান ঢাকার হাটগুলোতে গরু কম গাবতলীতে চাঁদাবাজির অভিযোগ

আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে রাজধানীর হাটগুলোতে কুরবানির পশু কেনাবেচা। ২৮ জুলাই ঢাকার দুই সিটিতে এ বছর মোট ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে। গাবতলী আর সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী হাট তো রয়েছেই। আর মাত্র তিনদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছর এই সময়ে পশুর হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। প্রতিযোগিতা থাকে পছন্দমতো গরু কেনারও। হাটের সংখ্যাও থাকত বেশি। এবার করোনা মহামারিতে পাল্টে গেছে সব সমীকরণ। রাজধানীর হাটগুলোতে গরু থাকলেও নেই তেমন ক্রেতার আনাগোনা। যারা আসছেন তাদের নজর ছোট কিংবা মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি। হাটগুলোতে আশানুরূপ ক্রেতাও নেই। যারা আসছেন তারাও দাম করছেন বাজার মূল্যের অর্ধেক। ফলে চিন্তিত বেপারি ও হাট ইজারাদাররা। শেষ মুহূর্তে কাক্সিক্ষত দামে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে তারা।

সরেজমিনে ঢাকার কয়েকটি হাট ঘুরে গতকাল মঙ্গলবার এমন চিত্রই পাওয়া যায়। অন্যান্য হাটগুলোতে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও পুরান ঢাকার হাটগুলো এখন ব্যতিক্রম। সেখানে কাক্সিক্ষত গরু আসেনি। এখনো মাঠ ফাঁকা। গরু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশ ও খুঁটি পুঁতে রাখলেও দুপুর ২টা পর্যন্ত বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা দেখা গেছে। আর ক্রেতার দেখা তো নেই-ই। ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা মাঠের হাটে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর পর্যন্ত মাত্র ১টি মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতারা হাটের ভেতরে খুব একটা প্রবেশ করছেন না। রাস্তার ওপরে যেসব গরু রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য, কেউ কেউ শুধু দাম করছেন সেগুলো। হাট ইজারা কমিটির সদস্য মামুন ভোরের কাগজকে জানান, প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে হাট শুরুর আগেই অনেক গরু বিক্রি হয়। আর গরুও আসে প্রচুর। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী চিত্র। পর্যাপ্ত গরুও নেই। ক্রেতাও নেই। যদিও দুই একজন ক্রেতা আসছেন- তারাও মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর প্রতি আগ্রহী। দামও করছেন বাজার দরের তুলনায় অর্ধেক। এতে আমরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বেপারিরাও হতাশ। তবে বুধ থেকে শুক্রবার এই তিনদিন কিছু গরু বিক্রি হতে পারে বলেও জানান তিনি।

একই চিত্র রাজধানীর গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা মাঠের হাটে। প্রতি বছর এই হাটটিতে এত গরু আসে, মূল মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের খালি জায়গা ও রাস্তার ওপরে গরু রাখা হয়। কিন্তু এবার রাস্তার ওপর তো দূরের কথা, মাঠের অর্ধেকই এখনো ফাঁকা। অথচ গরু আসবে এই আশায় ইজারাদাররা বাঁশ, খুঁটি ও সামিয়ানা টানিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

ঝিনাইদহ থেকে বিক্রির জন্য গরু এনেছেন মো. জালাল হোসেন। প্রতি বছর হাটটিতে গরু নিয়ে আসেন তিনি। বিক্রি করেন সবকটি। তিনি জানান, এবার গতি খুব ভালো বোঝা যাচ্ছে না। কারণ দেশের অবস্থা ভালো নেই। চারদিকে করোনা। যে গরুর দাম ১ লাখ টাকা, ক্রেতারা সেই গরুর দাম বলছেন ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু ১ লাখের কম বিক্রি হলে লোকসান হবে। কারণ গ্রামেই এই গরু ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তার ওপর ঢাকায় নিয়ে আসার খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাজারে কেনার লোক খুবই কম। তবে তিনি আশাবাদী বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিক্রি হবে। তিনি নিজেও স্বীকার করলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধুপখোলা হাটে গরু খুবই কম এসেছে।

হাট ইজারা কর্তৃপক্ষ জানায়, দুপুর পর্যন্ত তিনটি মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হয়েছে। তবে তা একেবারেই নগণ্য। তাই স্বেচ্ছাসেবক থেকে শুরু করে হাট কমিটির সবাইকে অলস সময় পার করতে হচ্ছে।

গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু ছাগলের কোনো কমতি নেই। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। হাটে প্রবেশ পথের গেটগুলোতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নিয়ম মানছেন না কেউ। মানছেন না নিরাপদ দূরত্বও। অনেকে মাস্ক না পরেই হাটে ঘুরছেন। হাট কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করলেও সাড়া মিলছে না কারো।

কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী রতন কুমার বলেন, গত রবিবার ১৫টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। এখনো একটিও বিক্রি হয়নি। ন্যায্য দামের চেয়ে কম চেয়েও বিক্রি করতে পারছেন না। কাছে যে টাকা ছিল তাও শেষ। গরু বিক্রি না হলে কিভাবে বাড়িতে ফিরবেন সে চিন্তায় পড়ে গেছেন। শেষ সময়ে বিক্রি হওয়ার আশা দেখছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেষ সময়ে বিক্রি হলে আগে থেকেই ভাব বোঝা যায়। কিন্তু এবার ক্রেতারা অর্ধেক দাম বলে চলে যাচ্ছে। সবারই একটাই কথা বাজেট নাই। তার অভিযোগ, হাটে গরুপ্রতি অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা না দিলে জায়গা মিলছে না। একই অভিযোগ বেপারি হাফিজুর রহমানেরও। তিনি বলেন, চাঁদা না দিলে গরু রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। হাট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, কিছু জায়গার মালিক অন্যরা হওয়ায় তারা জোরপূর্বক বেপারিদের থেকে টাকা নিচ্ছে।

শুধু বেপারি নয়; মাথায় হাত পিকআপ চালকদেরও। হাটে তেমন গরু বিক্রি না হওয়ায় তারাও তেমন ট্রিপ দিতে পারছেন না। পিকআপ চালক মো. সালাম বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে দম ফেলার সময় পাই না। আর এবার সকাল থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত কোনো ট্রিপ পাইনি। জানি না বাকি দিনগুলোতে কি অবস্থা হবে।

নড়াইল থেকে আসা এস আর এস এগ্রোর কর্মচারী মো. আশিক বলেন, অনলাইনে তাদের মাঝারি সাইজের ১৬টি গরু বিক্রি হলেও বড় কোনো গরু বিক্রি হচ্ছে না। ৩টি বড় গরুর সঙ্গে মাঝারি সাইজের একটি গরু ‘ফ্রি’- এমন অফারেও মিলছে না ক্রেতা। বেশির ভাগ বিক্রেতাই জানালেন, টুকটাক যে গরু বিক্রি হচ্ছে সবই ছোট ও মাঝারি সাইজের। বড় গরুর ক্রেতা এবার নেই বললেই চলে।

গরু কিনতে আসা চকবাজারের মসলা ব্যবসায়ী হাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গরুর দাম কম বলেই মনে হচ্ছে। তবুও হাট যাচাই করে গরু কেনার ইচ্ছা আছে। বেসরকারি চাকরিজীবী শাবাব হোসেন বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে অনেক ভিড় থাকলেও এবার সেটা নেই। আশা করি কম টাকার মধ্যে ভালো গরু কিনতে পারব। গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে এবার বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। প্রতি বছর এই সময়ে ২-৫ হাজার গরু বিক্রি হলেও এবার মাত্র ৪-৬শ গরু বিক্রি হচ্ছে। গরুপ্রতি ২-৩ হাজার টাকা চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসিলের বাইরে কারো কাছ থেকেই কোনো টাকা নেয়া হয় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App