×

মুক্তচিন্তা

দৃঢ় হোক বন্ধুত্বের বন্ধন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৮:৩৯ পিএম

দৃঢ় হোক বন্ধুত্বের বন্ধন

বন্ধু মানে ভিন্ন দেহে অভিন্ন এক মন, বন্ধু মানে একের প্রতি অপর আর একজন। ঠিক তাই, বন্ধু হল মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যা মনের সঙ্গে মনের শক্তিশালী বন্ধন সৃষ্টি করে। মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে থেকে মানুষ যখন গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছিল, ঠিক তখন থেকে মানুষের মধ্যে মানুষের বন্ধুত্ব সৃষ্টির সূচনা হয়। যা এই যুগেও চলমান রয়েছে এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৯ বছর আগে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস ঘোষণা করা হলেও এই দিবস পালন নতুন কিছু নয়। জানা যায়, হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ‘জয়েস হল’ ১৯১৯ সাল থেকে প্রতি বছর আগস্ট মাসের ১ম রবিবার বিভিন্ন জনকে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠাতে শুরু করেন। ধারণা করা হয় তখন থেকে বন্ধুত্ব দিবসের সূচনা। তবে এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক বন্ধুত্ব পালন। রাষ্ট্রকেন্দ্রিক শুরু হয় ১৯৩৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম শনিবার আমেরিকায় সরকার কর্তৃক এক ব্যক্তি নিহত হয়। তার প্রতিবাদে পরের দিন রবিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। এদিকে নিহত ব্যক্তির এক বন্ধু ওইদিনই বন্ধুর শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। বন্ধুর প্রতি সাধারণ মানুষের দৃঢ়তা ও ভালোবাসা দেখে, সেই সময় আমেরিকার সরকার জাতীয় কংগ্রেসে (সংসদ) আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার বন্ধুত্ব দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এখানে হলমার্কের আগস্টের রবিবারে কার্ড প্রদান আর আমেরিকায় রবিবারের আন্দোলনের এ ঘটনার কোনো সমন্বয় বা যোগসূত্র নেই, যা কাকতালীয়ভাবে আগস্টের প্রথম রবিবার মিলে গিয়েছিল।

এই হচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক থেকে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বন্ধুত্ব দিবস পালনের কথা। কিন্তু আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসের ধারণাটি প্রদান করেন প্যারাগুয়ের ড. আর্টেমিও ব্র্যাচো। ১৯৫৮ সালে তিনি বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পেশ করেন। এরপর অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০১১ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক এক অধিবেশনে ৩০ জুলাই ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেন্ডশিপ ডে’ ঘোষণা করা হয়। এদিকে ৩০ জুলাই তারিখ জাতিসংঘ কর্তৃক ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেন্ডশিপ ডে’ ঘোষণা করা হলেও কমসংখ্যক দেশ তা অনুসরণ করে থাকে। এই অবস্থায় বিভিন্ন দেশ তাদের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী কিংবা পূর্বেকার বা নিজস্ব রীতিতে বন্ধু দিবস পালন করে আসছে। যেমন- বাংলাদেশ ভারত মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে পালন করে থাকে আগস্টের প্রথম রবিবার। পাকিস্তান পালন করে ১৯ জুলাই; আবার আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, স্পেন, ব্রাজিল ২০ জুলাই পালন করে। অন্যদিকে ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, এস্তোনিয়া ১৪ জুলাই বিশ্ব বন্ধু দিবস পালন করে।

তবে যে দেশে যেই তারিখে বন্ধুত্ব দিবস পালন করা হোক না কেন, প্রত্যেকটা দিনই হোক বন্ধুত্বের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। কারণ প্রকৃত বন্ধুত্বে মধ্যে লুকিয়ে আছে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতিতা, সমব্যথা, পারস্পরিক বোঝাপড়া, যা মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য একে অপরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যেক জিনিস যত নতুন হয় তত উৎকৃষ্ট হয়, আর যত পুরনো হয় তত নিকৃষ্ট হতে থাকে। তবে একমাত্র বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, বন্ধুত্ব যত পুরনো হয় তত উৎকৃষ্ট হতে থাকে। এরিস্টটল ঠিকই বলেছেন পৃথিবীতে সেই বড় দুর্ভাগা যার প্রকৃত বন্ধু নেই। যদিও প্রযুক্তির এই যুগে যান্ত্রিক মানুষের ফেসবুক বা টুইটার কেন্দ্রিক ‘ডিজিটেল ফ্রেন্ড’ এর অভাব নেই, তারপরও সত্যিকারের প্রকৃত অকৃত্রিম বন্ধু অভাব রয়ে গেছে অনেক বেশি।

শিক্ষক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App