×

সাময়িকী

জাহানারার যত পরিকল্পনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৩:১৯ পিএম

জাহানারার যত পরিকল্পনা

জাহানারা আলম

ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার জাহানারা আলম। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও আলো ছড়ান তিনি। দেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৩৪ ওয়ানডে এবং ৪১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। ঈদ উদযাপন করতে ২০ জুলাই খুলনায় পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। এবারের ঈদে গরু কুরবানি করার ইচ্ছে তাদের। জাহানার কাছে ছোটোবেলার ঈদটাই ছিল বেশি আনন্দের। নতুন জামা, সেলামি পাওয়া, হাতে মেহেদি দেয়া ইত্যাদি বিষয় তাকে স্মৃতিকাতর করে। আগে ঈদের দিন সকালে খাওয়া-দাওয়া করে নতুন জামা পরে এলাকার মধ্যে আশপাশের বাসায় ঘুরতে যাওয়া ছিল অন্যতম শখ। আর এখন তিনি সালামি দেন। করোনার কারণে খেলা না থাকায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার সুযোগ পেয়েছেন। খেলা থাকলে যেটা হতো না, এশার সময় সব কাজা নামাজ আদায় করতেন তিনি। বর্তমান সময়ে সেটা হয়নি। গত বছর প্রিমিয়ার লিগ চলাকালে গরমের সময় ২৪টি রোজা কাজা ছিল সেটা আদায় করে নিয়েছেন এই অবসরে। পাশাপাশি নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেছেন। দুজন ক্রিকেট প্লেয়ারকে ভিডিও কলের মাধ্যমে কুরআন পড়া শিখিয়েছি। তার মতে এটা অনেক বড় একটা এচিভমেন্ট। করোনাকালে লকডাউনে ঢাকায় মিরপুরে কাটান তিনি। তার ভাষায়, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে না পারলেও আলহামদুলিল্লাহ করোনার সময় সুস্থ ছিলাম এবং আছি। ঢাকার বাসায় আমার ব্যায়ামের ইন্সট্রুমেন্ট ছিল না। ১৫ জুন ইন্সট্রুমেন্ট কিনে ফিটনেস প্র?্যাকটিস শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ ১ মাস ৫ দিনের মতো অনুশীলন করি। এছাড়া নিজের রান্না, বাজার-ঘাট, সব কাজ নিজেই করা যেহেতু হেল্পিংহ্যান্ড ছিল না, যারা হাউসহোল্ড কাজে সাহায্য করে। করোনায় তাদের রাখার উপায়ও ছিল না। ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশের দলগত পারফরম্যান্স খারাপ হলেও আমার ব্যক্তিগত একটু ভালো হয়। সেরা দ্বাদশের মধ্যে ছিলাম আমি (টুর্নামেন্ট সেরা ১২ জনের মধ্যে)। এটা আমার জন্য একটা অন্যতম স্মৃতি। লকডাউনের মধ্যে নিজেকে খুঁজতে গিয়ে একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম যে, এ যাবৎ প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের চেয়ে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ বেশিবার হয়েছি আমি। আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, যখন খেলোয়াড় বাছাই করে তাদের নিয়ে ক্যাম্প হতো, ম্যাচ হতো। তো ২০০৭ সালে আমি জাতীয় ক্রিকেট দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাছাই ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেট টেকার হয়েছিলাম। তারপরে পাকিস্তানে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হলাম, আয়ারল্যান্ডেও প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হলাম। ধারাবাহিকভাবে এসবই আমার স্মৃতিময় ঘটনা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জাহানারা বলেন, আমি ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে আসতে চাই। আগে ছিলাম শুধু বোলার হিসেবে, এখন অলরাউন্ডার হিসেবে আসতে চাই। এটা হচ্ছে আমার পার্সোনাল টার্গেট আর টিম টার্গেট হচ্ছে আমার টিমটা সেরা ৪ বা সেরা ৫-এ থাকুক। যাতে আমাদের অথবা পরবর্তী যে জেনারেশন ক্রিকেট খেলতে আসবে তাদের আর কস্ট করে কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলতে হবে না। ভালো ভালো টিমের সঙ্গে রাউন্ড দ্য ইয়ার খেলার মধ্যে থাকতে পারবে। আমার আইডল, মাশরাফি ভাই। দেশের বাইরে আমার আইডল নেই, তবে অনেকের খেলা আমার ভালো লাগে। সতীর্থদের মধ্যে আসলে কেউ নেই, বলতে পারেন নিজেকেই ভালো লাগে। ক্রিকেটার না হলে কী হতাম বলা মুশকিল। ছোটবেলায় খেলাধুলা শুরু করি! হ্যান্ডবল, ভলিবলের পরে স্বপ্নের মতো ক্রিকেটে অন্তর্ভুক্তি। ছোট পর্দা, বড় পর্দার বিষয়টা আসলে ব্যস্ত সময়ের মাঝে নিজেকে একটু এন্টারটেইন করা। অভিনয়ে কিংবা বিজ্ঞানে যদি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সুযোগ হয় (আমি মেনশন করছি), ভালো কিছু করার অফার আসে যাতে আমি নিজের ভালোলাগার সঙ্গে ভক্তদেরও খুশি করতে পারব তাহলে সেটা চিন্তা করব। ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপ জয় করা শতভাগ সম্ভব। এবং সেটা ছেলেমেয়ে উভয় দলের পক্ষেই সম্ভব। ইতোমধ্যে ছেলেদের ইয়াংস্টাররা করে দেখিয়েছেও। আসলে অন্য দলগুলোর তুলনায় আমরা অভিজ্ঞতায় কিছুটা পিছিয়ে। সেজন্য সময় লাগছে। ভবিষ্যতে আইসিসির সভাপতি হলে প্রথমত নারী ক্রিকেটার সবকিছু বাড়িয়ে দেব। অর্থিক দিকের সবকিছু বৃদ্ধি করব। দ্বিতীয়ত মেয়েদের সব খেলাই ব্রডকাস্ট করার উদ্যোগ নেব। যাতে সারা পৃথিবীতে ছেলেদের মতো মেয়েদের ক্রিকেটও জনপ্রিয় হয়। টাইগার পঞ্চ পাণ্ডবের একেকজনের খেলা একেকরকমভাবে ভালো। পাঁচজন ৫ দিক থেকে সেরা বা গুণান্বিত। বলার অপেক্ষা রাখে না মাশরাফি ভাইকে সবাই কেন এত পছন্দ করে। হি ইজ অ্যা বিগ লিডার থ্রু লিডার। মুশফিক ভাই প্রচণ্ড পরিশ্রমী, মিস্টার ডিপেন্ডেবল বলা হয় উনাকে। রিয়াদ ভাই গুড ফিনিশার। সাকিব ভাই নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। যখন দরকার হয় র‌্যান্ডমলি পারফর্ম করে যান টিমের জন্য। জয়-পরাজয় যাই হোক উনার কাজটা ঠিকই করেন। তামিম ভাই কিন্তু ড্যাশিং ওপেনার। একা একা হেসে ওঠা প্রসঙ্গে জাহানারা বলেন, ২০১৮-এর এশিয়া কাপে একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছিল। যা মনে করে এখনো আমি হেসে উঠি। অদ্ভুত এক ঘটনা : নেপাল বা মালদ্বীপ (ঠিক মনে পড়ছে না) টাইপের ছোট টিমের সঙ্গে খেলা ছিল। আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেখানে উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান শামিমা সুলতানা ছিল আমার রুমমেট। তো আমি ম্যাচের আগে গলাটা ঠিক রাখতে একটু ব্ল্যাক কফি পান করি। যথারীতি ওয়েটারকে আমি নাস্তার টেবিলে অর্ডার করি, এক্সিউজ মি ওয়ান ক্যাপাচিনো। সে তখন বলল স্যরি! আমি আবার বললাম ওয়ান ক্যাপাচিনো কফি। সে ওকে বলে চলে গেল। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও সে কফি নিয়ে আসছিল না। প্রায় সবাই কালো রঙের ওয়েটারদের পরনে ছিল ব্ল্যাক প্যান্ট ও সাদা শার্ট। তখন আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না কাকে আমি অর্ডার করেছি। এদিকে ম্যাচ টাইম শুরু, লেট করলে জরিমানা গুনতে হবে। তাই আমি শামিমাকে বললাম চলেন মুভ করি। আমি শামিমাকে বললাম চলেন মুভ করি, কফি খাব না। ওই হোটেলেই একটু দূরে আমাদের বামদিকে বসা ৫-৭ জন আম্পায়ারও ব্রেকফাস্ট করছিলেন। উনাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উচ্চস্বরে হাসি কানে এলো। আমি দেখলাম, আমি যাকে কফি অর্ডার করেছিলাম সে ওখানে বসা। আমাকে আর পায় কে! আমি ওয়েটার ভেবে আম্পায়ারকে কফির জন্য অর্ডার করেছিলাম! লজ্জায় আমি আর মাথাই তুলতে পারছিলাম না। আমি তো পুরাই থান্ডার। দ্রুত সে স্থান ত্যাগ করি। যথারীতি মাঠে গিয়ে যখন আমি রান আপ মেজারমেন্ট করছিলাম তখন সেই আম্পায়ার গিয়ে বলছেন, সো হাউ ওয়াজ দ্য কফি? ক্যাপাচিনো!  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App