×

সাময়িকী

গোলরক্ষক আশরাফুল রানার অজানা গল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৩:১৩ পিএম

গোলরক্ষক আশরাফুল রানার অজানা গল্প

গোলরক্ষক আশরাফুল রানা

আশরাফুল রানা। বাংলাদেশের জাতীয় দলের গোলরক্ষক। ২০১৫ সাল থেকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো লাল সবুজের গোলবার সামলে যাচ্ছেন তিনি। তাছাড়া ফুটবলের টাইগারদের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। জাতীয় দলের গোলবার পাহারা দেয়ার আগে সেনাবাহিনীর হয়ে দেশরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। নিজের মেধা দিয়ে সেনাবাহিনীতে ১১ বছর চাকরি করে জাতীয় দলের গোলরক্ষক হওয়ার সুযোগ পান তিনি। একজন সেনা সদস্য থেকে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। একজন সেনা সদস্য থেকে জাতীয় দলের গোলরক্ষক হওয়া অনেকটা অসম্ভব ব্যাপারই। তবে রানার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিল আলাদা। কারণ সেনাবাহিনীতে কাজের সময় তার প্রতিভা দেখে তাকে খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল সেনাবাহিনী। নিজেদের মধ্যে ও আন্তঃবাহিনী প্রতিযোগিতায় খেলে সবার নজর কাড়েন তিনি। এ ব্যাপারে রানা বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন খেলার সুযোগ পেতাম। নিজেদের মধ্যে খেলতাম। আন্তঃবাহিনী প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিতাম। আর মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দেয়া হতো। সেনাবাহিনীর হয়ে খেলতাম আমি। আর সেখান থেকেই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাই।’ একজন খেলোয়াড়ের জীবনে আনন্দ-দুঃখ দুটোই থাকে। রানার ফুটবল ক্যারিয়ারেও এসেছে সুখের দিন দুঃখের দিন দুটোই। তার জীবনে সবচেয়ে খারাপ সময় হলো ২০১৬ সালের জর্ডানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাঁছাইয়ের ম্যাচটি। সেই ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছিল ৮-০ গোলের ব্যবধানে। আর এক ম্যাচে এতগুলো গোল হজম বেশ কষ্ট দিয়েছিল তাকে। তাছাড়া সে বছরই ভুটানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের বাছাইয়ে হেরে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ১৬ মাসের জন্য নির্বাসিত হতে হয়েছিল। তাও রানার ক্যারিয়ারের কালো দিন। আর ফুটবল মাঠে তার সেরা অর্জন হলো ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার মাঠে এশিয়ান গেমস ফুটবলে কাতারকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে যাওয়া। এই ম্যাচের কথা মনে হলে এখনো ভালো লাগা কাজ করে তার। আর তার পুরো জীবনে সবচেয়ে ভালোর লাগার মুহূর্ত ছিল জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া। সেই দিনটির কথা মনে করলে এখনো বেশ উচ্ছ¡সিত হন তিনি। কারণ তার জীবনের স্বপ্নই ছিল একদিন জাতীয় দলে খেলবেন তিনি। আর খেলোয়াড়ী জীবনের বাইরে তার সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত হলো প্রথমবার বাবা হওয়া। আর এই দুটি ক্ষেত্রেই আনন্দে কেঁদেছিলেন তিনি। গত বছর ভারতের বিপক্ষে কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে যায় বাংলাদেশ। প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের সামনে সেই ম্যাচটির প্রত্যেকটি মুহূর্ত তিনি এনজয় করেছেন। আর এত দর্শকের সামনে খেলতে পারার ব্যাপারটিও বেশ ভালো লেগেছে তার। তবে শেষমুহূর্তে গোল হজম করে ১-১ গোলে ড্র করায় সেদিন বেশ মন খারাপ হয়েছিল তার। তার মতে মূলত মনোযোগের অভাবেই সেই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র করে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল তাদের। একটি ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনো একা একা হেসে ওঠেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এ অধিনায়ক। সাবেক বান্ধবী ও বর্তমান স্ত্রীকে ঈদের আগে উপহার দিতে একবার মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মোটরসাইকেলে গিয়েছিলেন তিনি। তো দেখা সাক্ষাৎ করে তিনি যখন ফিরছিলেন তখন ওই এলাকার মানুষ অচেনা রানাকে আটকায়। তারা জানতে চান রাতের বেলা অচেনা গ্রামে কি করছেন তিনি। আর এতে বিপদে পড়ে যান তিনি। তখন উপায়ন্তর না দেখে কৌশলে পালানোর বুদ্ধি আঁটেন রানা। তো গ্রামের মানুষরা তাকে আটকিয়েছিল একটি অন্ধকার জায়গায়। তিনি তাদের বলেন একটু আলোর দিকে আসতে। আর এই কথা বলে মোটরসাইকেল চালু করে দ্রæত সটকে পড়েন তিনি। আর এ ঘটনা মনে পড়লে এখনো খিল খিল করে হেসে ওঠেন। ফুটবলে কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গোলবার পাহারা। তবে এই কঠিন কাজটি বেশ ভালোভাবেই সামলান আশরাফুল রানা। তো গোলবারে দাঁড়িয়ে তিনি কি ভাবেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান সবসময় খেলার দিকেই মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। আর মানসিকভাবে সবসময় গোলবার সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকেন। ছোটবেলার ঈদ হলো জীবনের সবচেয়ে মজার সময়। আর অন্যদের মতো রানাও ছোট বেলায় বেশ আনন্দে তার ঈদ কাটিয়েছেন। গ্রামের সবার সঙ্গে ঈদ পালনের কথা মনে হলে এখনো আবেগে আপ্লুত হন তিনি। আর তাই এখনো ঈদে বাড়িতে গেলে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করেন তিনি। এদিকে সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুবাদে লাইবেরিয়াতে শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন রানা। সেখানেও তার বেশ অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে তার যে স্মৃতিটি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তা হলো সেখানে গিয়েও ফুটবল প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। লাইবেরিয়ার একজন অভিজ্ঞ কোচের অধীনে ঘানা, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের কয়েকজনের সঙ্গে তিনি এই সুযোগটি পান। আর বিদেশের মাটিতে বসেও ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়ায় সেখানে তার দিনগুলো বেশ আনন্দে কেটেছে বলেও জানান তিনি।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App