×

সাময়িকী

আমরা অপেক্ষা করতাম কবে খাসি আসবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৪:১৭ পিএম

আমরা অপেক্ষা করতাম কবে খাসি আসবে

আবুল হায়াত

আমার ছেলেবেলার ঈদ বেশ মজারই ছিল। যদিও তখন এত জাঁকজমক করে ঈদ হতো না। তারপরও আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। কুরবানির পশু কেনা হলে আমরাও উৎসাহ নিয়ে গাছের পাতা ছিঁড়ে নিয়ে আসতাম। ছেলেবেলায় দেখেছি, আমাদের বাড়িতে আব্বা চিরকালই দুটো খাসি কুরবানি দিতেন। আমরা অপেক্ষা করতাম কবে খাসি আসবে। খাসি আসার পর কাঁঠাল পাতা জোগাড় করার কাজ শুরু যেত আমাদের। তাদের কাঁঠাল পাতা খাওয়ানো এবং সঙ্গে নিয়ে বেড়ানোরও। ছোটবেলায় এসব কাজ খুবই আনন্দের সঙ্গেই করেছি। এছাড়া ঈদের জামা কাপড় জুতো পরে ঘুরে বেড়ানো তো ছিলই। এখন আর সেসব নাই বোধহয়। সেই সময় আমরা এক সেট কাপড়ের জন্য পাগল হয়ে যেতাম। এখনকার বাচ্চারা তো পাঁচ ছয় সেট কাপড় পায়। এছাড়া সারা বছরই তারা মোটামুটি কিছু না কিছু পায়ই। আমাদের তো একটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হতো। তবে ঈদের আনন্দটা সম্ভবত গ্রামেই বেশি জমে। অবশ্য আমি গ্রামে কোনোদিনই থাকিনি। তাই ছোটবেলায় গ্রামের আমেজটা পাইনি। বরং এখন বুড়ো বয়সে এসে গ্রামের আমেজটুকু পাই। কারণ গ্রামে নাটকের শুটিং করতে যাই। সেখানে পাঁচদিন দশদিন থাকি। সুতরাং গ্রাম সম্পর্কে আগের চেয়ে আমার মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়ছে বৈ কমছে না। ঈদকে সামনে রেখে মানুষ আবার হাটবাজার শুরু করেছে। এর জন্য দায়ী আমরা মানুষরাই। এটা আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না। সরকার কী চিন্তা করে এসব অ্যালাও করছে আমি জানি না। আমার বুদ্ধি বিবেচনায় যা মাথায় আসছে তাতে মনে হচ্ছে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করা উচিত ছিল। যতটা পারা যায় নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিল গণপরিবহন। পশুর হাটগুলো না দিলেই ভালো হতো। বিশেষ করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষের অবাধ যাতায়াতে বাড়ছে সংক্রমণ। শহরাঞ্চলে প্রায় ২২ থেকে ২৫ শতাংশ সংক্রমিত দেখা যাচ্ছে। গ্রামে হয়তো কম। এসব কারণে মনে হচ্ছে যে, ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আমার আরো মনে হয় বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতে পারে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা কি বলেন সেটাই আসল কথা। আমি নিজে ভয় পাচ্ছি বলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখি। যে কারণে এখন পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হইনি। আমি এখনো বাড়িতেই কাজ করছি। আমি মনে করি সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিত। চাওয়া কম থাকলে একটা মানুষের প্রাপ্তিটা বেশি হয়। আমার বাবা বলতেন, জীবনে চাবে কম, তাহলে দেখবে সব সময় বেশি পাবে। আর বেশি চাইলে দেখবে নিরাশ হতে হচ্ছে। যাতে তোমার জীবনে একটা নেতিবাচক দিক চলে আসবে। আমার সারা জীবনে আমি সেটাই অনুসরণ করেছি। আমার চাওয়াটা সব সময় খুবই অল্প ছিল, কিন্তু সারা জীবন সবচেয়ে বেশিই পেয়েছি। সুখেও আছি। আমাদের সবারই উচিত নিজেকে সীমার মধ্যে রাখা। তাহলে ভোগান্তির মাত্রাটা কমবে। মনে হচ্ছে করোনার ধাক্কায় দুনিয়াটা বোধহয় আর আগের মতো থাকবে না। আমার কেন জানি মনে হয়, করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটলে, পৃথিবীটা কিছুদিন অন্য কোনো দিকে মোড় নেবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, এটা কল্যাণময়ই হবে। আমি আশাবাদী মানুষ। আশায় বাঁচি। করোনার এই পরিস্থিতিতেও ঈদ তো হবেই। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App