×

সাময়িকী

আনন্দের মহাকাব্যিক পতন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ০৬:১৮ পিএম

আনন্দের মহাকাব্যিক পতন
মোনালিসার মুখে মাস্ক, যাতে তিনি কারো কাছ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত না হন এবং তিনিও যেন কাউকে সংক্রমিত না করেন। এমন কি করোনাকালের চিত্রকলায় ঈশ্বর ও দেবদেবীকে গ্লাভস ও মাস্ক পরানো হয়েছে। সম্ভবত ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদেরও কম। এমনকি দেবলোকের বৈঠকেও মুখোশে ঢাকা দেবতাদের মুখ। বিশ্বব্যাধির এই দিনে পৃথিবী এখন যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে ‘এপিক কলাপস অব ডিমান্ড’, বাংলায় রূপান্তরিত করলে বলা যায় চাহিদার মহাকাব্যিক ধস পতন। চাহিদার এ ধরনের পতন অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার একটি নজির দেখিয়েছে অপরিশোধিত তেল। বিনে পয়সায় নেবার খদ্দেরও পাওয়া যায়নি, তখন তেল উত্তোলন প্রক্রিয়াটি টিকিয়ে রাখতে ব্যারেলপ্রতি সাড়ে সাঁইত্রিশ ডলার পর্যন্ত সাধার মতো অবস্থা হয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনেও পরিস্থিতি অনেকটাই একই রকম। পৃথিবীজুড়ে এই করোনাকালে অন্তত দশ সহস্র বইয়ের দোকানে তালা লেগেছে, অন্তত এর অর্ধেক সংখ্যক মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছেন। এমনিতেই ঢাকার একদা বইয়ের ক’টি খ্যাতিমান দোকানে মোকসিনো সু ও হাই হিল স্যান্ডেল শোভা পাচ্ছিল, এই সংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ঈদ সংখ্যার যেখানে ছড়াছড়ি থাকে, এবার সেখানে শূন্যতার ছড়াছড়ি। যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটাও ছিল চাহিদার পতন। বাড়ি বিক্রি দোকান বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেখতে আমরা অভ্যস্ত, করোনাকাল আমাদের স্কুল বিক্রির বিজ্ঞপ্তিও এবার দেখিয়েছে। আনন্দের যত সব অনুষঙ্গ তার একটিও অক্ষত নেই। ধস নেমেছে আনন্দে ও উৎসবে। কিন্তু পৃথিবী এখানে থেমে থাকার নয়। ব্ল্যাক ডেথ যখন ইউরোপের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিলীন করে দিল, পৃথিবী থেমে থাকেনি। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অবশিষ্ট মানুষের জন্য অর্থের চাহিদা যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে আনন্দের চাহিদা। যখন এই নিবন্ধটি লিখিত হচ্ছে পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা, যদি সরকার সঠিক তথ্য দিয়ে থাকে তা হলে তা ১৫.৯ মিলিয়ন, আর মৃত্যু ৬ লক্ষ ৪২ হাজার। এই নিবন্ধটি যারা পাঠ করছেন তাদেরও কোনো না কোনো আপনজন করোনা ভাইরাসের বলি হয়েছেন। আবার এই বাংলাদেশেই মৃত্যুর বাণিজ্যে মেতে উঠেছে ক্ষমতাধর লোকজন। ইউরোপ ঘুরে দাঁড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে। করোনার প্রকোপ থাকার পরও চেক রিপাবলিক তার রাজধানী শহর প্রাগে উদযাপন করেছে প্যানডেমিক ফেয়ারওয়েল পার্টি। বিশ্বব্যাধির বিদায় উৎসব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এ ধরনের অপরিপক্ক উদযাপন সংকটকে আরো ঘনীভ‚ত করতে পারে। কিন্তু প্রাগ পাত্তা দেয়নি, বলেছে, আর সহ্য করা যাচ্ছে না, আমাদের উৎসবের মধ্য দিয়েই করোনা ভাইরাস বিদায় নেবে। ১ আগস্ট বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে যখন ঈদুল আজহা উদযাপনের দিন তখন আরো উৎসব অন্যান্য দেশে চলার কথা। এমন ১ আগস্ট চীন পালন করে থাকে পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী-আর্মস ফোর্সেস ডে। ১ আগস্ট আজারবাইজান পালন করে থাকে ভাষা দিবস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য এ দিন হচ্ছে দাসত্ব বিলোপ দিবস। বার্বাডোস, বারমুদা, গায়ানা, জামাইকা, গ্রেনাডা ও সেইন্ট ভিনসেন্ট-এর মুক্তি দিবস। স্কাউটদের জন্য সারা পৃথিবীতে স্কাউট স্কার্ফ ডে; কম্বোডিয়া, লাউস ও ভিয়েতনামের বিজয় দিবস। সুইজারল্যান্ডের ন্যাশনাল ডে। পৃথিবীর কোনো না কোনো দেশের জন্য বছরের প্রতিটি দিনই উৎসবের দিন। কিন্তু করোনাকাল সঙ্কুচিত করেছে উৎসবের আকার ও জাঁকালো পরিবেশ। উৎসবের ভেন্যু এখন আর বাস্তব পৃথিবী নয়, ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড। ঐতিহাসিক পিটার ফ্রাঙ্কোপ্যান লিখেছেন, এটি সমাজের জন্য পরীক্ষা; বিশ্বব্যাধির মধ্যে সেখানকার সমাজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। এটা আয়নার মতো কাজ করে। এই আয়না আমাদের গভীরতর উদ্বেগ, আমাদের মৃত্যুভীতি, ধর্ম ও স্রষ্টা সম্পর্কে আমাদের ধারণা, কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আনুগত্য ও তাদের নির্দেশের প্রতি সম্মতি ও কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। একই সঙ্গে আমরা পরিবার, বন্ধুস্বজন, প্রতিবেশী এবং সমাজের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তা প্রকাশ করে। এখানে পর্যায়ক্রমে অনেক ঘটনা ঘটে, যা মানুষের ভেতরের চরিত্রটিকে বের করে আনে। গ্লেন হলার লিখলেন, ইউরোপে ব্ল্যাক ডেথের সময় মানুষ বড়জোর জানালা দিয়ে উঁকি দিত রোগী বেঁচে আছে না মরে গেছে দেখতে। কফিন শেষ হয়ে গেছে, মৃত মানুষটিকে টেনেটুনে নিয়ে লাশের স্তূপের ওপর ফেলে দিত। সাত-আট বছরের বাচ্চাকে যখন এভাবে নিয়ে যাচ্ছে, একজন শুনেছেন, মা-বাবা কেঁদে কেঁদে বলছেন, একটু দেরি করুন আমি একটা ম্যাকারুনির বাক্স এনে দিচ্ছি। তখন ২০ পাউন্ডের বাক্সে ম্যাকারুনি বিক্রি হতো, এই বাক্সই বালক-বালিকার শ্রেষ্ঠ কফিন হয়ে উঠে। সন্তানের জন্য এমন একটা কফিন দিতে পারাই তখন হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে আনন্দের কাজ। একসাথে দশটি কফিনের মিছিল তো রীতিমতো উৎসব! প্লেগ তো বারবার এসেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাধি কবে শেষ হবে? শেষ হয়ে কি আবারও ফিরে আসবে? এ প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। আমরা কিসের উৎসব করবো লাশ দাফনের না আতঙ্ক দাফনের? অন্ধকারের চোখ : উপন্যাসে ও বাস্তবে ডিন কুনজের দি আইস অব ডার্কনেস উদ্ভাবিত ঘাতক ভাইরাসটির নাম উহান ৪০০। উপন্যাসের একটি চরিত্র ডনবি একজন চীন দেশীয় বৈজ্ঞানিকের কথা বলছেন, যিনি উহান ৪০০ নামের ভাইরাস আমেরিকায় এনেছেন, এটি ঘাতক বায়োলজিক্যাল উইপন-জীবাণু অস্ত্র। ডনবি বললেন, এটা বোঝার জন্য তোমাকে কুড়ি মাস পেছনে যেতে হবে। সে সময় লি চেন নামের একজন চীনা বিজ্ঞানী চীনের এক দশকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ঙ্কর নতুন এক বায়োলজিক্যাল উইপন ডিস্কেট রেকর্ডে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে। তারা এটাকে বলছে উহান ৪০০। কারণ ওহান শহরের বাইরে তাদের আর ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে এটা তৈরি করা হয়েছে, সেই গবেষণাকেন্দ্রে মানুষের তৈরি মাইক্রো অর্গানিজমের তালিকার এটি ৪০০তম। আরডিএনএ : রিকম্বিন্যান্ট ডি-অক্সিরিবোনিউক্লিক অ্যাসিড (সুপ্রজন বিদ্যায় রিকম্বিনেশন, যেমন মলিকিউলার ক্লোনিং) সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দি আইস অব ডার্কনেসের ১৯৮১ মূল সংস্করণে এ ঘাতকের নাম রাখা হয়েছিল গোর্কি ৪০০, রাশিয়ার গোর্কি অঞ্চলের নামে। বিশ্বরাজনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তনের কারণে ১৯৮৯-এর সংস্করণ থেকে এর নাম বদলে উহান ৪০০ রাখা হয়েছে। এটাই উহান ভাইরাস। ফিকশনের উহান-৪০০ ল্যাবরেটরিজাত, কিন্তু করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ তা নয়, ২০১৯-এর ডিসেম্বরে চীনের উহানেই এর উদ্ভব ও বিস্তার। কল্পিত উহান-৪০০-এ আক্রান্তের মৃত্যু ১০০ ভাগ নিশ্চিত। করোনায় মৃত্যুহার অনেক কম, তিন-চার শতাংশের বেশি নয়। উহান-৪০০-তে নিশ্চিত মৃত্যু সংক্রমিত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বা বস্তুর পক্ষে উহান-৪০০ লালন ও পরিবহন সম্ভব হবে না। উহান-৪০০-এর ইনকিউবিশন পিরিয়ড ৪ ঘণ্টা। এবং করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে চার-পাঁচদিন থেকে দুই সপ্তাহ। ডিন কুনজের উপন্যাসে উহান-৪০০ মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। অ্যাসিড যেভাবে কাপড়কে গলিয়ে দেয় উহান-৪০০-এ তেমনিভাবে মস্তিষ্ককে খেয়ে ফেলে। করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক আক্রমণের লক্ষ্য শ্বাসযন্ত্র। উহান-৪০০ মস্তিষ্ককে দ্রুত অকেজো করে দেয়ায় শরীরের সব স্বয়ংক্রিয় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু ফিকশনাল ভাইরাস, তা মোকাবেলা করতে লেখকের তেমন তাড়া ছিল না, তবে করোনা ভাইরাস প্রতিকারের ওষুধ আবিষ্কারের ঘোষণা এসেছে, এমন কি বাংলাদেশও উৎপাদনে সক্ষম। আবু ওবায়দা, বিসর্জনের একটি ইসলামি উপাখ্যান আবু ওবায়দা আমের ইবনে আল জারাহ ছিলেন (৫৮৩-৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ) হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আত্মীয় এবং খলিফা হযরত ওমরের সময় রাশিদুন সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার। হযরত ওমর তার খেলাফতের উত্তরসূরি হিসেবে আবু ওবায়দাকে মনোনীত করে রেখেছিলেন। হযরত আবু বকর যেদিন ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন, তার পরদিন ২৮ বছর বয়সী আবু ওবায়দাও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি খালিদ বিন ওয়ালিদের কাছ থেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন এবং সিরিয়া অভিযান অব্যাহত রাখেন। ২৩ জানুয়ারি ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দ তার বাহিনীর অবরোধ সম্পন্ন হয়। নয় মাসের মাথায় প্লেগ মহামারি দেখা দেয়। খলিফা ওমর তখন সিরিয়া আসছিলেন। কিন্তু কাছাকাছি এসে প্লেগের কথা শুনে তার সঙ্গীরা প্লেগাক্রান্ত সিরিয়ায় না গিয়ে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আবু ওবায়দা ছুটে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, ‘আপনি কি আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাচ্ছেন?’ হযরত ওমর মক্কা গেলেন এবং সখেদে বললেন, ‘আহা আবু ওবায়দা ছাড়া অন্য কেউ যদি এ কথা বলত!’ হযরত ওমর মক্কায় ফিরে এলেন, কারণ মহামারি আক্রান্ত স্থান সম্পূর্ণ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে যেতে মহানবী (স.)-এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওমর চাইলেন না তার উত্তরসূরি এমন বিপদসঙ্কুল স্থানে থাকুক। তিনি তার কাছে বার্তা পাঠালেন : ‘তোমাকে আমার জরুরি প্রয়োজন। যদি আমার চিঠি রাতে পৌঁছে, তাহলে ভোরের আগে রওনা হবে, যদি দিনে পৌঁছে, তাহলে সন্ধ্যার আগে রওনা হয়ে দ্রুত আমার কাছে পৌঁছবে।’ আবু ওবায়দা বললেন, আমি জানি তিনি কেন আমাকে চান। যে মানুষের অমরত্ব নেই তিনি এমন একজনকে টিকিয়ে রাখতে চান। তিনি খলিফাকে লিখলেন : ‘আমি জানি আপনি আমাকে চান। কিন্তু আমি তো মুসলমানদের বাহিনীর সঙ্গে আছি। যে রোগ তাদের আক্রান্ত করতে পারে, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করার ইচ্ছা আমার নেই। আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা না করবেন, আমি নিজেকে তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাই না। কাজেই এ চিঠি যখন আপনার কাছে পৌঁছাবে আমাকে সেনাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অনুগ্রহ করে তাদের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেবেন।’ খলিফা ওমর চিঠি পড়ে যখন অশ্রু ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলেন, যারা কাছে ছিলেন, জানতে চাইলেন, ‘আবু ওবায়দা কি মৃত্যুবরণ করেছেন?’ খলিফা বললেন, ‘তা নয়, কিন্তু মৃত্যু তার নিকটে এসে গেছে।’ খলিফা আবার তাকে নির্দেশ পাঠালেন, যদি না আসো, তা হলে অন্তত উঁচু কোনো কম গরম জায়গায় চলে যাও। তিনি জাবিয়া নামক স্থানে গেলেন। তার সিরিয়া না ছাড়ার কারণও মহানবীর নির্দেশনার আলোকেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যখন কোনো রাজ্য প্লেগে আক্রান্ত হবে, সে রাজ্য থেকে পালিয়ে কেউ যাবে না এবং বাইরে থেকে কাউকে আসতে দেয়া হবে না। আবু ওবায়দা জাবিয়ায় পৌঁছেই প্লেগ আক্রান্ত হলেন। তিনি সৌদ ইবনে জাবালকে তার উত্তরসূরি নিয়োগ করলেন, ৬৩৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং জাবিয়াতেই তাকে সমাহিত করা হয়। তার জীবন বিসর্জন একজন বীর সেনাপতির স্বেচ্ছামৃত্যুর সঙ্গে তুলনীয়। এখানে কোয়ারেন্টাইনের ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত। সে সময়ও বিভিন্ন উৎসব নির্ধারিত ছিল, কিন্তু ধর্মীয় নির্দেশেই তা পালন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয় কিংবা কঠোর শর্তাবলী জুড়ে দেওয়া হয়। করোনাকালে মানুষের দায় : সেভেন ওয়ার্কস অব মার্সি সেভেন ওয়ার্কস অব মার্সি এই চিত্রকর্মটি ১৬০৭ সালে কারাভাজ্জিও-র আঁকা। একই সঙ্গে প্লেগের ভয়াবহতা এবং সঙ্কটকালে মানবিকতা তিনি তুলে ধরেছেন। রাতের বেলা সমাহিত করার জন্য প্লেগে প্রাণ হারানো একজন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, একজন ধর্মযাজক পথ দেখানোর বাতি ধরে আছেন। শবাধার থেকে বেরিয়ে আছে মৃত মানুষের পায়ের পাতা। জিওভানি বোকাচিত্ত প্লেগ মৃত্যুর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তিনি লিখেছেন, প্রতিদিন ভোর হতেই দেখা যেত রাস্তায় অনেক মানুষের মরে পড়ে আছে। তাদের একত্র করে রাতের আঁধারে প্লেগ পিট-এ (প্লেগে মৃত মানুষ সমাহিত করার গর্ত) ছুড়ে ফেলা হতো। লাশের উপর লাশ, সে সব গণকবর পরে আবিষ্কৃতও হয়েছে। কারাসজ্জিও ন্যাপলসের একটি চার্চের জন্য সাতটি পৃথক প্যানেলে ছবিটি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরে সাতটি একত্র করে চার্চের বেদির উপর স্থাপন করেন। যে সাতটি কাজ এ ছবিতে তিনি তুলে এনেছেন সেগুলো হচ্ছে : ১. মৃতকে দাফন করা : ছবিতে দুজন মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে। ২. কারাবন্দির সাথে সাক্ষাৎ : একজন নারী কারাবন্দি পুরুষকে দেখতে গেছেন। ৩. ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো : সে নারী স্তন খুলে তাকে দুধ পান করাচ্ছেন। এটি ধ্রুপদ রোমান বদান্যতা। ৪. গৃহহীনকে আশ্রয় : একজন তীর্থযাত্রী সরাইখানায় আশ্রয় চাইছেন। ৫. নগ্নকে বস্ত্রদান : সাধু মার্টিন নগ্নভিক্ষুকে তার কাপড়ের অর্ধেক দিয়ে দিচ্ছেন। ৬. অসুস্থ মানুষের সাথে সাক্ষাৎ : সাধু মার্টিন পঙ্গু ভিক্ষুককে আশ্বস্ত করছেন ৭. তৃষ্ণার্তকে পানি দান : স্যামসন একটি গাধার চোয়াল থেকে পানি শুষে নিচ্ছেন। কারাভাজ্জিও-র এই চিত্রকর্মটি ভয়ঙ্কর দুর্যোগের দিনে মানব কল্যাণের একটি পূর্ণচিত্র। করোনাকালের উৎসবের দিনে চাই কারাভাজ্জিও-র বাতিওয়ালা। আনন্দের মহাকাব্যিক পতন ও বিশ্বব্যাধি থেকে মুক্তির উৎসব হয়তো খুব দূরে নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App