×

সম্পাদকীয়

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে অর্থ প্রেরণ-বিতরণ সহজ হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২০, ০৭:০৮ পিএম

মানি লন্ডারিং বিষয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ির কারণে রেমিট্যান্স পাঠানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগে যেখানে খুব সহজেই রেমিট্যান্স পাঠানো যেত এখন সেখানে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এ কারণে একদিকে অব্যাহতভাবে কমছে প্রবাসী আয়, অন্যদিকে বাড়ছে হুন্ডির ঘটনা। তবে গত অর্থবছর থেকে বৈধপথে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়াতে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এতে দেশে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণও বেড়েছে। তবে প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ যেন আরো সহজে দেশে পাঠাতে পারেন, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এমন প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সময়োচিত ও বাস্তবোচিত বলেই আমরা মনে করি। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অবৈধ পথেও টাকা প্রেরণ হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনা। বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে স্বজনদের কাছে যে রেমিট্যান্স পাঠান তার এক বড় অংশ আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা প্রেরণে বিভিন্ন কারণও রয়েছে। যে কোনো ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে হলে আয়ের বৈধ সনদ দিতে হয়। একইভাবে পাঠানো অর্থের সুবিধাভোগীদের পুরো তথ্য দিতে হয়। তাছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচও বেশি। এর ফলে অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলকে হয়রানি মনে করে বিকাশসহ হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী। হুন্ডির ছোবল ঠেকাতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বৈধপথে আনার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হুন্ডির যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে তা ভেঙে দিতে হবে শক্ত হাতে। বৈদেশিক মুদ্রানীতি আইন অনুযায়ী, বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। এমন অবস্থায় রেমিট্যান্স পাঠানোর সহজীকরণে বিষয়টি আবার সামনে আসছে। দেশের চারটি প্রধান খুঁটি হলো কৃষি, ক্ষুদ্র পুঁজির অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নকারী প্রবাসী শ্রমিক আর গার্মেন্টস খাত। এই চার খাতের সঙ্গেই যুক্ত শ্রমজীবী মানুষ। পৃথিবীর ১৬৯টি দেশে ১ কোটি ২২ লাখ প্রবাসী আছে। প্রায় প্রতি ১৬ জনে একজন বাংলাদেশি দেশের বাইরে জীবিকার জন্য অবস্থান এবং কাজ করছেন। তাদের প্রতি অবহেলা, অপমান ও তাচ্ছিল্যের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কর্মসংস্থান এবং আয়ের ক্ষেত্রে তাদের প্রধান ভূমিকা কিন্তু মূল্যায়ন কম। বিশ্বের অবকাঠামো গড়ে তোলা, সেবা খাতে শ্রম দেয়া আর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালনকারী প্রবাসী শ্রমিকদের কথা যেন নীতি-নির্ধারকরা ভুলে না যান। ইতোমধ্যে সরকার প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো সহজীকরণে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App