ভারতের মিত্রদের নিয়ে চীনের বৈঠক! কীসের ইঙ্গিত?
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২০, ০৮:৪৮ পিএম
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই
ভারত-চীন
দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল আর আফগানিস্তান ভারতের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবেই পরিচিত। সার্কভুক্ত এ দেশ দুটির সঙ্গে ভারতের ভূরাজনীতি আর অর্থনীতিভিত্তিক বন্ধনও বেশ দৃঢ়। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গেল মার্চে অন্যদের সঙ্গে নেপাল, আর আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন।
তবে সার্কভিত্তিক মোদীর এই বৈঠককে সহজভাবে নিতে পারেনি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের চরম প্রতিদ্বন্দ্বি দেশ চীন। সম্প্রতি লাদাখে প্রায় যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিল চীন-ভারতের সেনারা। টান টান উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। যে উত্তেজনার রেশ এখনও কাটেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবদিক দিয়ে ভারতকে টেক্কা দেয়ার চেষ্টা করছে চীন।
এরকমই ইঙ্গিত পাওয়া গেল এবার ভারতের মিত্রদেশ নেপাল ও আফগানিস্তানের সঙ্গে চীনের ভার্চুয়াল বৈঠকের মধ্য দিয়ে। নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি আর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ হানিফ আতমারের সঙ্গে সে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের চিরশত্রু দেশ পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মাখদুম খুশরু বখতিয়ার।
সোমবারে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনা মহামারি মোকাবিলা, অর্থনীতি ও বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভকে (বিআরআই) পুনরুজ্জীবিত করতে চীন ওই দেশগুলোর সঙ্গে চার দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে। বিবিসি বাংলায় শুভজ্যোতি ঘোষের প্রতিবেদন থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
তবে দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক পর্যবেক্ষকরা বিষয়টা অন্যভাবে দেখছেন। বিশেষ করে নেপাল আর আফগানিস্তান যেখানে ভারতের অতি ঘনিষ্ঠমিত্র, সেখানে তাদের নিয়ে চীনের এই তৎপরতাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দিল্লির পর্যবেক্ষকরাও একই সুরে বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে কোণঠাসা করার জন্যই চীন যে এমন তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
[caption id="attachment_234387" align="aligncenter" width="700"] চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই[/caption]
কাবুলসহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক রাজধানীতে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন সাবেক কূটনীতিবিদ গৌতম মুখোপাধ্যায়। নেপাল আর আফগানিস্তানকে নিয়ে চীনের তৎপরতা নিয়ে বিবিসিকে তিনি বলেছেন, কাবুল আর দিল্লির সম্পর্ক যথেষ্ঠ পরিণত। চীনের প্রচেষ্টা তাতে খুব একটা ছাপ ফেলতে পারবে না। আর চীন বহুদিন ধরেই বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভে আফগানিস্তানকে যুক্ত করতে চেয়েছে। যদিও তাতে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। তবে গৌতম মুখোপাধ্যায় এ কথাও বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে অভিন্ন ইস্যুগুলো নিয়ে চীনের এমন পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই অভিনব।
দিল্লির থিংকট্যাংক ভিআইএফের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত অবশ্য চীনের এমন তৎপরতার মধ্যে সরাসরি ভারতের সঙ্গে টক্কর দেয়ার মোটিভকে দেখছেন। তিনি বলছেন, আসলে চীন দক্ষিণ এশিয়াতে যা-ই করে সেটা ভারতকে নিশানায় রেখেই করে। ভারত পটভূমিতে আছে, সেটা মাথায় রেখেই এই অঞ্চলে চীনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড - আমি সেভাবেই বিষয়টাকে দেখি।
শ্রীরাধা দত্ত আরো মনে করেন, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যেভাবে চীন এতকাল সম্পর্ক গড়েছে বা গড়তে চলেছে তার পেছনেও একটাই উদ্দেশ্য- ভারতকে এই অঞ্চলে ক্রমশ কোণঠাসা করে ফেলা।
ভারতের অর্থনীতিবিদ ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে-ও বিবিসিকে বলেন, এমন পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীন একটা জোরালো বার্তা দিতে চাইছে। তারা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি সাহায্য করতে পারে, আর তারা যে অনেক বড় প্লেয়ার সেটাই জানাতে চায়।
তবে এর যে আরেকটা দিক আছে, কোভিড পর্বে এই দেশগুলোর সঙ্গে চীনের কূটনীতি সে বিষয়টি উল্লেখ করে প্রবীর দে বলেন, মহামারির মধ্যে চীন যেভাবে এই দেশগুলোকে ত্রাণ ও প্রতিরোধ সামগ্রী দিয়েছে কিংবা ভ্যাকসিন প্রকল্পেও যুক্ত করেছে তাতে এই দেশগুলো চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ, তারা বেইজিংয়ের কথায় এখন সহজে ‘না’ বলতে পারবে না।