ট্রেনের টিকেট বিক্রিতে কালোবাজারী রোধ করতে এবারে রেলওয়ে টিকেট বিক্রির পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলানোর চিন্তা ভাবনা করেছে। সেকারণে প্রতিটি টিকেট কিনতে লাগবে যাত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর। আর ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’, অর্থাৎ একজনের নামে কেনা টিকিটে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারবেন না। আর টিকেট বিক্রির অগ্রিম সময়সীমাও ৫ দিন থেকে বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে বলে রেলসূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি রেলওয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রস্তাব পাশ করেছে ।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। মূলত টিকেট কালোবাজারি বন্ধেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে টিকেট কাটার সময়সীমাও বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে।

মাহবুব কবীর বলেন, এ পদ্ধতিতে যাত্রীকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেলওয়ে ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করার পর যাত্রীর তথ্য রেলের সার্ভারে চলে যাবে। এর ফলে যাত্রীর ভ্রমণের সময় তার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে অ্যাপের মাধ্যমে যারা আগে থেকে নিবন্ধিত আছেন, নতুন নিয়ম চালুর পর তারা সঠিক হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যারা সঠিক জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধিত রয়েছেন, তারাই এখানে যুক্ত হবেন, বাকিরা বাদ হয়ে যাবেন। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নামে নতুন এই পদ্ধতি চালু হলে স্ট্যান্ডিং টিকেট বা সিট ছাড়া কোনো টিকেট বিক্রি হবে না বলে জানান তিনি।

রেল সূত্রে জাান গেছে, এটি চালু হলে নিবন্ধিত যাত্রী নিজের নামে বা ভ্রমণসঙ্গীদের নামে চারটি পর্যন্ত টিকেট কাটতে পারবেন। যিনি টিকেট কাটবেন বা যার নামে কাটা হবে তার উপস্থিতিতেই রেল ভ্রমণ সম্ভব হবে, কারণ টিকেট চেকারের কাছে একটি স্মার্টফোন বা ট্যাব থাকবে। সেই ডিভাইস থেকে রেলের সার্ভারে থাকা যাত্রীর পরিচয়ের সঙ্গে টিকেটে থাকা পরিচয় মিলিয়ে দেখবেন, যদি না মেলে তাহলে যাত্রা বাতিল হবে। তবে এজন্য যাত্রীদের স্মার্টফোন বা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে না।

যেসব যাত্রীদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকেট কাটার প্রক্রিয়ার বিষয়ে মাহবুব কবীর বলেন, ১৬ থেকে ১৭ বয়স বয়সীদের এখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে, ফলে তারা টিকেট কাটতে পারবেন। ১৬ বছরের নিচে যাত্রীদের ক্ষেত্রে তার মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে টিকেট বিক্রির একটি প্রক্রিয়া পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।

আগামীতে শত ভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রি করার চিন্তাভাবনা রয়েছে, কাউন্টারে টিকেট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে রেলওয়ের বরে জানান তিনি।

এ বিষয়ে গতকাল রেলের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান ভোরের কাগজকে মুঠো ফোনে বলেন, মূলত আমরা টিকেট কালোবাজারী রুখতে এ ধরনের একটা প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নিয়েছি, এ চুক্তি সম্পন্ন হলে তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হবে। নতুন নিয়মে টিকেট বিক্রিতে রেলের প্রযুক্তিগত কিছু ডেভেলপমেন্ট বা আপডেট প্রয়োজন, সে প্রস্তুতি ডেভেলপ করার প্রক্রিয়া চলছে, এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

রেলওয়ের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড (সিএনএস) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম মুঠো ফোনে ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে ট্রেনের অনলাইনে টিকেট কিনতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র বা বা জন্ম নিবন্ধন সনদ তথ্য দিতে হয়, কিন্তু তা সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের কোনো সুযোগ বর্তমানে ছিল না। তবে যদি ইসির সঙ্গে রেলের চুক্তি হয় তাহলে প্রকৃত যাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। এতে টিকেট যার ভ্রমন তার সম্ভব হবে, কালোবাজারী কমবে।