×

সম্পাদকীয়

রাজধানীতে বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি কি আছে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ০৯:৫০ পিএম

ঢাকার চারপাশে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ নেই। দিন যত যাচ্ছে, বিপদসীমার ওপরে পানি ওঠা নদীর সংখ্যা বাড়ছেই। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আজ ও আগামীকাল ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর পানি আরো বাড়তে পারে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল থেকে বাড়ছে। যমুনা নদীর পানিও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল থেকে কমতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ ইঙ্গিত দিয়েছে, ১৯৮৮ সালের পর বাংলাদেশের এবারের বন্যা বেশি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। জুলাই পেরিয়ে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেও বন্যার পানি থাকতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একই কথা বলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ঢাকার চারপাশে বন্যার যে চিত্র গণমাধ্যমগুলোতে দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কা বাড়িয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর মধ্যে তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার পানি দ্রুত বাড়ছে। ঢাকা শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকার পয়োনিষ্কাশন লাইন বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে গিয়ে পড়েছে। আর পূর্বাংশের পয়োনিষ্কাশন লাইন পড়েছে বালু ও শীতলক্ষ্যায়। কিছু অংশের নিষ্কাশন নালা হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন লেকের মধ্যে পড়েছে। ফলে ঢাকার চারপাশের নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে গেলে রাজধানীর বড় অংশের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঢাকা ওয়াসা পানি নিষ্কাশনের জন্য পাঁচটি স্থানে পাম্প স্থাপন করলেও তা পূর্বাংশের নিম্নাঞ্চলকে বন্যামুক্ত করা সম্ভব নয়। গোড়ান, বনশ্রী, বাসাবো, আফতাবনগর, সাঁতারকুলসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। ইতোমধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মধ্যবর্তী ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডিএনডি বাঁধ এলাকাতেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এসব এলাকা থেকে পানি সরতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে। পেছনে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে রাজধানীতে ৫৬ দিন বন্যার পানি স্থায়ীভাবে ছিল। ওই বন্যায় কয়েকদিন ধরে মতিঝিল, আরামবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ফকিরাপুল রোডে কোমর পানি; মিরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল পানির নিচে। অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর অধিকাংশ বাড়িতে পানি ওঠে; এমনকি বিমানবন্দর এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে যদি রাজধানীতে এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে সংশ্লিষ্টদের কী প্রস্তুতি রয়েছে? এক সময় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ৪৬টি ছোট-বড় খাল প্রবাহিত হতো, যা এই শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দারুণভাবে সহায়ক ছিল। কিন্তু এখন ৪৬টির মধ্যে কোনোরকমে ২৬টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ওয়াসার পুরোপুরি দখলে আছে মাত্র ১৩টি। এসব খালের গভীরতাও নেই, প্রশস্ততাও নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা কয়েক বছর ধরেই ঢাকাকে বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য সরকারের প্রস্তাবিত ঢাকা পূর্বাঞ্চলীয় বাঁধ নির্মাণের ওপর জোর দিয়ে আসছে। কিন্তু ১৯ বছর ধরে অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে ওই এলাকা। আমরা মনে করি, বন্যার পানি নিরসনে রাজধানীর খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম। রাজধানীর খালগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। এর জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক সমন্বয় ও পরিকল্পিত কার্যক্রম। এ মুহূর্তে ঢাকার সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App