×

সারাদেশ

রাষ্ট্রীয়মার্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার দাফন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ০৮:২০ পিএম

রাষ্ট্রীয়মার্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার দাফন!

মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ। ইনসার্টে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ

প্রশাসনের অবহেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও গার্ড অব অনার ছাড়াই দাফন করা হয়েছে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের মরদেহ। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যথাসময়ে উপস্থিত না থাকায় চিরবিদায়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বঞ্চিত হতে হলো মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে।

এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে চট্টগ্রামে প্রথম প্রতিবাদকারী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী ছৈয়দের বড় ভাই।

মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ গত রবিবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, ৫ মেয়ে রেখে গেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের জানাজার আগে সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঁশখালী মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্মৃতিচারণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে মরদেহ দাফন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও গার্ড অব অনার দেয়ার নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হযে মুসল্লিরা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই লাশ দাফন করেন।

এর আধাঘণ্টা পর সেখানে বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমান উপস্থিত হলে মুক্তিযোদ্ধা, দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কবরস্থ অবস্থায় গার্ড অব অনার দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে এতে বাধা দেন স্থানীয় লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবেশ শান্ত হয়।

লাশ দাফনের পর দুপুর ১টার দিকে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকার চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা, লোকজন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ভুল বুঝাবুঝি সমাধা করেন। পরে তারা মরহুম মুক্তিযোদ্ধার কবরে ফুল দিয়ে এবং মোনাজাত করে ফিরে আসেন।

শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা জানাজায় আগে উপস্থিত না হওয়ায় মুসল্লিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার আহমদ ছফা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দিয়ে কবর দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনিক অবহেলা রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পরেই উপজেলা প্রশাসনকে দাফনের সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ যথাসময়ে উপস্থিত থাকলেও সরকারি কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত না হওয়ায় রাষ্ট্রী মর্যাদা বঞ্চিত হতে হয়েছে।

ইউএনও মোমেনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সম্মান করি। উনি সম্মানিত ব্যক্তি। সরু রাস্তা হওয়ায় এসি ল্যান্ডের জানাজাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। তবে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি মেনে নিয়ে সবার সহযোগিতায় ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের স্মৃতিচারণে অংশ নেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন, ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী, কৃষকলীগ নেতা জাকের হোছেন চৌধুরী, আতিকুর রহমান আতিক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াছ, দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হাশেম মানিক, মরহুম ডা. আলী আশরফের পুত্র জয়নাল আবেদীন, জহির মোহাম্মদ বাবর।

উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের লাল জিয়ন এলাকায় মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরে ডা. আলী আশরাফকে দাফন করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App