×

সারাদেশ

নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে বানবাসিদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ০২:০৬ পিএম

নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে বানবাসিদের

ছবি: প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার নদীর পানি সামান্য কমে তা এখনো বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বরং মাস ব্যাপী এ দুটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় চার লক্ষাধিক বন্যা দুর্গত মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

অধিকাংশ কৃষক পরিবার গো খাদ্যের অভাবে তাদের গবাদি পশু নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পাড় করছেন। বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পরিবার পরিজন, গৃহপালিত পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বানবাসি মানুষরা। এতে করে উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়ছে বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উলিপুর উপজেলার কয়েক ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মূলত ব্রহ্মপুত্রের পানি কমে যাওয়ার আশায় দীর্ঘ এক মাস সময় ধরে নৌকায় এবং ঘরের ভিতর এক বুক আর গলা পানিতে মাঁচাং, চালের সাথে ঠেকিয়ে বসবাস করে আসছিল। কিন্ত অন্যান্য বছরের রেকর্ড ভেঙে এবার বেশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যা।

জেলার বন্যা কবলিত দুর্গম এলাকার চর ও দ্বীপ চরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানকার বেশির ভাগ চরের বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে। পরিবার পরিজন, গরু, ছাগল, ভেড়া উঁচুতে রেখে দুই তিনজন করে বন্যার্ত মানুষ নৌকায় করে এসে ঘর-বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহ পূর্বে যে চরগুলোতে দুর্গত মানুষজন নৌকায় ও ঘরের ভিতর কষ্ট করে বসবাস করে আসছিল সেখানকার বেশিরভাগ ঘর-বাড়ি এখন ফাঁকা পড়ে আছে। কিছু চরের ঘর-বাড়িতে কোমর ও হাঁটু পানি থাকায় সেসব চরের বাসিন্দারা পানির মধ্যেই কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।

বন্যা কবলিত এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানগণ তাদের কোন খোঁজ -খবর নিচ্ছেন না বলে আশ্রয়স্থলে থাকা মানুষজন অভিযোগ করেন। দুর্গত এলাকাগুলোতে সাংবাদিক দেখলে তারা ছবি তুলতে বাঁধা দিয়ে খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।

এ ব্যাপারে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলী সরকার ও বেগমগন্জ ইউনিয়নের চেয়ারমম্যান বেলাল হোসেন বন্যা কবলিত মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে বলেন, তাদের ইউনিয়নে যে পরিমাণ বন্যা কবলিত পরিবারের সংখ্যা রয়েছে এবং যে পরিমাণ ত্রাণের চাল বরাদ্দ পেয়েছে তা দিয়ে অর্ধেক পরিবারকে দেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ, গো-খাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা ও ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তাদের কাছে আরো ত্রাণের চাল ও টাকা মজুদ আছে। প্রয়োজনে সেগুলোও বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি প্রায় অরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App