×

জাতীয়

ঢাকা ঘিরে বন্যার পানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ০৯:০৯ এএম

ঢাকা ঘিরে বন্যার পানি

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঢাকার নিম্নাঞ্চল। অনেক বাড়িঘরেই ঢুকেছে পানি। গতকাল রাজধানীর মাতুয়াইল আদর্শনগরের ছবি-মামুন আবেদীন

উজান থেকে নিচের দিকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির কারণে রাজধানীর চারপাশ ঘিরে রাখা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। শীতলক্ষ্যা, কালিগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও বালু নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এতে প্লাবিত হয়েছে পূর্ব ঢাকার নিম্নাঞ্চল। আরো ভারী বৃষ্টিপাত হলে বুড়িগঙ্গার পানিও বিপদসীমার ওপরে চলে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় বড় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি নেমে যুক্ত হচ্ছে পদ্মায়। আর যমুনা-পদ্মার পানি নেমে যুক্ত হচ্ছে মেঘনায়। এ কারণে মধ্যাঞ্চল ও নিম্না-মধ্যাঞ্চলে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ইতোমধ্যে বালু নদীর পানি বিপদসীমা পার করেছে। বালু ও শীতলক্ষ্যার পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির গোড়ান, বনশ্রী, বাসাবো, আফতাবনগর, সাঁতারকুল ও ডেমরার নিম্নাঞ্চল। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির প্রভাব পড়বে রাজধানী ঢাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৯৮৮, ১৯৯৮ বা ২০০৭ সালের মতো বন্যাকবলিত হতে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। পানি বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার পূর্বাংশ, গোড়ান, বনশ্রী, বাসাবো, আফতাবনগর, সাঁতারকুল, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও ডিএনডি বাঁধ এলাকায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বালু নদীর পানি বইছে বিপদসীমার উপরে। গত কয়েকদিন ধরে ফুঁসে উঠেছে নদীটি। প্লাবিত হয়েছে নদীর দুপাড়ের কৃষিজমি। এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাপুর, নন্দিপুরে, ঠুলটুলিয়া বাজার প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৪ সালের পর এই এলাকায় এবারই পানি ঢুকেছে। নারায়ণগঞ্জে লাক্ষ্যা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, বালু নদীর পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং টাঙ্গাইলের এলাসিনে ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। বংশী ও টঙ্গী খালের পানি বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এসব নদীর পানি বাড়ায় বন্যা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। তবে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার পানি এখনো বিপদসীমার নিচেই রয়েছে। অন্যদিকে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। সমতলে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী বর্ষণ কমে এলেও আগামী তিন থেকে চার দিন আসাম এবং হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে এ সময়ে সাময়িকভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ নদ-নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বেড়েছে ৪৩টির, কমেছে ৫৮টির এবং বিপদসীমার উপরে নদীর সংখ্যা ১৭টি। আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত বহ্মপুত্র অববাহিকার দেশগুলোতে বৃষ্টিপাত অনেক কমে আসতে পারে। কিন্তু ২৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে। এতে ৩০ জুলাইয়ের পর চতুর্থ দফায় বন্যা শুরু হতে পারে। সাধারণত একদিনে ৩০০ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হলে তা অন্তত ১০ দিনব্যাপী বন্যার সৃষ্টি করে। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনূন নিশাত ভোরের কাগজকে বলেন, যতদিন নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ না করা হবে ততদিন ঢাকার নিম্না এলাকার মানুষকে বন্যার পানিতে ভাসতে হবে। ১৯৮৮ সালের পর টঙ্গি থেকে আবদুল্লাপুর, মিরপুর থেকে গাবতলী, গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর বেডিবাঁধ হয়ে শ্যামলী, আদাবর, মিরপুর এলাকায় আর বন্যা হয়নি। তাই দ্রুতই ঢাকার আশপাশের যেসব নদীর বাঁধ নেই; সেখানে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তিনি বলেন, আরো দুএক দিন বালু নদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকবে তাই এই এলাকার নতুন করে আরো প্লাবিত হবে। পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এ আতিক রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এখন যে বন্যা সেটা পানি নামার বন্যা। নিম্নাঞ্চলে পানি নামতে গিয়ে প্লাবিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় এখন মধ্যঞ্চলের পানি বেড়েছে। আগামী এক সপ্তাহ এ অবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন থেকে দেশে বন্যা চলছে। পরে ১১ জুলাই দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হয়। আর তৃতীয় দফার বন্যাটি শুরু হয়েছে ২১ জুলাই। পানি ও বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বন্যার মূল কারণ দুটি। এগুলো হচ্ছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি। দেশের ভেতরে অতিবৃষ্টিও বন্যার সৃষ্টি করে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৮টি বড় নদী ২৭টি স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা, গঙ্গা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাগট, করতোয়া, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, কালিগঙ্গা, আড়িয়ালখা, পুরাতন সুরমা ও তিতাস। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, এ মুহূর্তে দেশের ৩০টি জেলা বন্যা উপদ্রুত এবং মোট ৩২টি বন্যাকবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ি, ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লালমনিরহাট, নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী। এগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থিতিশীল আছে। বাকি ১৬টিতে পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App