×

জাতীয়

ডিপিডিসি আইসিটি দপ্তরের নির্দেশেই অতিরিক্ত বিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ০৯:১৮ এএম

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই ডিপিডিসির গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল ধার্য করা হয়। ডিপিডিসির আইসিটি দপ্তর থেকেই বিল বাড়ানোর জন্য বিভাগীয় প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনার পরই ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশন অতিরিক্ত বিল করে। এ ধরনের বিলের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তা থেকে নিম্নসারির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়ী নয়। ভুতুড়ে বিল নিয়ে ডিপিডিসির কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া কর্মকর্তারা তাদের জবাবে এই নির্দেশনার বিষযটি স্বীকার করেছেন। এছাড়া মার্চ মাস থেকে গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ায় বিদ্যুতের বেশি ব্যবহার, বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) জারিকৃত নতুন ট্যারিফ হার কার্যকর হওয়া এবং করোনার সময় গ্রাহকরা বাসায় অবস্থান ও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করার কারণে বিল বেশি হয়েছে বলেও জবাবে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া কোনো ডিভিশনার কর্মকর্তার পক্ষে এভাবে অতিরিক্ত মনগড়া বিল করা সম্ভব নয়। এখন গা বাঁচাতেই ঊর্ধ্বতনরা নিচের লেবেলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

জানা গেছে, করোনাকালে বিদ্যুতের ভ‚তুড়ে বিল নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। লাখ লাখ অভিযোগের পর ভুতুড়ে বিলের কারণ খুঁজতে মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে। কমিটি বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কারণ জানতে চায়। এ সময় বিতরণ কোম্পানিগুলো তদন্ত কমিটি গঠনের পর তদন্ত শুরু করে। ৭ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ বিভাগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন টাস্কফোর্সের কাছে জমা দেয়। তদন্তের পর ডিপিডিসি তাদের বেশ কয়েকজন মিটার রিডারসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করে। একই সঙ্গে ৩৬টি জোনের বিভাগীয় প্রকৌশলীকে শোকজ করা হয়। ২ দিন আগে প্রকৌশলীরা তাদের শোকজের জবাবে ডিপিডিসির আইসিটি দপ্তরের নির্দেশনার কথা জানায়। ডিপিডিসির ৩৬টি বিভাগের প্রায় সব কর্মকর্তাই তাদের শোকজের জবাবে অতিরিক্ত বিলের একই কারণ তুলে ধরে বলেছেন, ‘বেশি বিল হওয়ার সঙ্গে আমি ও আমার দপ্তরের কারো অবহেলা ও গাফিলতি নেই। করোনার ভয়াবহতার মধ্যেও আমার দপ্তর এপিএ অর্জনে সচেষ্ট ছিল এবং টার্গেটেড বকেয়া আদায়সহ এপিএ প্যারামিটার সমূহ অর্জন করেছে। শোকজের জবাবে বিভাগীয় কর্মকর্তারা বলেন, করোনার ভয়াবহতায় সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ সময়ে মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল করতে পারেনি। এই অবস্থায় মার্চ ও এপ্রিল মাসের গড় বিল করার সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রেক্ষিতে ডিপিডিসির আইসিটি দপ্তর থেকে মার্চ মাসে ইম্পোর্ট ও করোনা ফ্যাক্টর বিবেচনা করে ফেব্রুয়ারি মাসের বিল একটি নির্দিষ্ট হারে বৃদ্ধি করে মার্চ মাসের বিল প্রস্তুত করার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। এই নির্দেশনা অনুযায়ী আইসিটি দপ্তর থেকে গড় রিডিং বিল ডাটাবেজে অটো ইনসার্ট করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে তুলনা করে আবাসিক গ্রাহকদের কনজাম্পশন একই হারে বাড়িয়ে মার্চ মাসের গড় বিল প্রকৃত ব্যবহারের চেয়ে বেশি হয়। আবার যেসব গ্রাহক এসি ব্যবহার করেন তাদের প্রকৃত ব্যবহার করা বিল কম হয়। এছাড়া বন্ধ দোকান, অফিস ও খালি ফ্ল্যাটের বিল অতিরিক্ত হয়ে যায়। এ কারণে মার্চ ও এপ্রিল মাসে বিল বেশি হয়েছে বলে গ্রাহকরা আপত্তি জানায়। তারা ভ‚তুড়ে বিলের কারণ ব্যাখ্যা করে আরো বলেছেন, পরবর্তীতে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে মিটারের প্রকৃত রিডিং দেখে সমন্বয়ের পর গ্রাহকদের বিল দিয়েছেন। সঠিক মিটার রিডিং নিয়ে তা থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ক্লোজিং রিডিং বিয়োগ করে মোট কনজাম্পশনকে ৩ দিয়ে ভাগ করে ভাগফল দিয়ে মার্চ ও এপ্রিল মাসের সঠিক করায় যেসব গ্রাহককে অতিরিক্ত বিল করা হয়েছিল তাদের বিল নেগেটিভ অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে সমন্বয় হয়ে যায়। অর্থাৎ মার্চ ও এপ্রিল মাসে বিলকৃত অতিরিক্ত টাকা বিয়োগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেক গ্রাহকের মে মাসের বিল নেগেটিভ অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে সমন্বয় হয়েছে। অন্যদিকে মূলত এসি ব্যবহারকারী গ্রাহকদের মার্চ ও এপ্রিল মাসের গড় বিল ব্যবহারের তুলনায় মে মাসে পজিটিভ অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে সমন্বয় হয়েছে। এছাড়া মার্চ মাস থেকে ট্যারিফ হার বেড়ে যাওয়া এবং করোনার কারণে মানুষ ঘরে অবস্থানের কারণেও আবাসিক গ্রাহকদের বিল বেড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App