×

জাতীয়

ঈদযাত্রায় সুখবর নেই বাস-লঞ্চের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২০, ১০:০১ এএম

ঈদের আর মাত্র ৯ দিন বাকি। কিন্তু ঈদযাত্রায় গণপরিবহনগুলোর জন্য এখনো কোনো সুখবর নেই। অন্যান্য সময়ে বাস-ট্রেনের অগ্রিম টিকেট পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের হাহাকার শুরু হয়। কিন্তু এবার ঠিক এর উল্টোচিত্র। টিকেট আছে। যাত্রী নেই। সব ঈদে লঞ্চের কেবিনগুলো আগেই বুকিং হয়ে যায়। এবার এখনো যাত্রীর দেখা মিলছে না। যাত্রী না পাওয়ায় গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা হতাশার মধ্যে রয়েছেন। সড়ক পরিবহন সেক্টরে এখনো নেই উৎসবের কোনো আমেজ। সরজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথ এলাকার সব বাস কাউন্টারই ফাঁকা। অলস সময় কাটাচ্ছেন কাউন্টারের কর্মীরা। তারা জানান, প্রতিদিনের বাসগুলোতে ৭ থেকে ১০ জন যাত্রী পাওয়াই এখন কষ্টসাধ্য। ঈদের বাকি আর মাত্র ৯ দিন। যাত্রী না থাকায় এখনো ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুই হয়নি। গ্রিনলাইন, শ্যামলী পরিবহনের কর্মীরা জানান, করোনা এবং বন্যা সড়ক পরিবহনকে একেবারে অচল করে দিয়েছে। প্রতিটি ট্রিপে লোকসান দিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে। গাবতলী আন্তঃজেলা বাসটার্মিনালেরও একই চিত্র। টার্মিনালের সামনে পেছনে সারি সারি দূরপাল্লার বাসগুলো ঈদযাত্রার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু কাউন্টারগুলো একেবারেই ফাঁকা। টিকেট বিক্রির জন্য পরিবহন কোম্পানিগুলোর কর্মীদের যেমন হাঁকডাক নেই, তেমনই যাত্রীরও দেখা নেই। তারা বলছেন, এই সময়ে কাউন্টারগুলো যাত্রীদের একের পর এক ফোন রিসিভ করতেই ব্যস্ত থাকত। কিন্তু এবার অগ্রিম টিকেটের জন্য না আসছে যাত্রী, না আসছে ফোন। কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোরও একই চিত্র। রংপুরগামী আগমনী এক্সপ্রেসের কর্মী কামাল বলেন, ঈদের আগে উত্তরাঞ্চলের প্রচুর যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু এবার একটি অগ্রিম টিকেটও বিক্রি করতে পারিনি। কবে পারব তা জানি না। তাছাড়া উত্তরাঞ্চলে বন্যা শুরু হয়েছে। এ কারণে এখন প্রতিদিনের নির্ধারিত বাসগুলোও প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি হাজী আবুল কালাম জানান, ঈদের আগে প্রতিটি পরিবহন কোম্পানি তাদের ক্যাপাসিটির ৬০ শতাংশ অগ্রিম টিকেট রাখে। ঈদের আগে এই সময়ে সব অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার এখনো সড়ক পরিবহনে যাত্রীর দেখা মেলেনি। বিক্রি হয়নি কোনো অগ্রিম টিকেট। গত ঈদ পর্যন্ত করোনা মহামারির ব্যাপারে কারোই কোনো ধারণা ছিল না। এখন সবার মধ্যে ধারণা এসেছে। এ কারণে যাত্রীরা চলাচল করতে চাচ্ছে না। ঈদের আগে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসব উদযাপনে আগ্রহ নেই। তাছাড়া বন্যার কারণেও এবার আশানুরূপ যাত্রী পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু এর অর্ধেক যাত্রীও পাচ্ছি না। এই অবস্থায় কোম্পানিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই লোকসান দিয়ে বাস চালানো হচ্ছে। আরো এক সপ্তাহ পরে হয়তো কিছু যাত্রী পাওয়া যাবে। তারপরেও আমরা ধারণা করছি, ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি টিকেট বিক্রি হবে না। এদিকে নৌপরিবহনেও যাত্রীর খরা চলছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে চলাচলের অন্যতম ও জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে নৌপরিবহন। লঞ্চের কর্মীরা জানান, এখানে বাস বা ট্রেনের মতো ঈদের আগে অগ্রিম টিকেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে সব কেবিন আগেভাগেই বুকিং হয়ে যেত। এবার এখনো আশানুরূপভাবে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। বাসের চেয়ে ভাড়া কম হওয়ায় প্রতিদিনই কিছু যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। তারপরেও লঞ্চগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, অন্য সব ঈদের আগে লঞ্চের কেবিনের জন্য যাত্রীদের চাহিদা থাকে। এই সময়ে সব কেবিন বুকিং হয়ে যায়। কিন্তু এবার একেবারেই ভিন্ন চিত্র। যাত্রীর দেখা মিলছে না। এবার অন্যান্য গণপরিবহনের চেয়ে নৌপরিবহনের অবস্থা বেশি খারাপ। লঞ্চে একটি ট্রিপের খরচ বাসের চেয়ে অনেক বেশি। লঞ্চ চললে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, সেই পরিমাণ আয় হচ্ছে না। এদিকে, সরকারি গণপরিবহন হিসেবে খ্যাত ট্রেনের অবস্থা সড়ক ও নৌপরিবহনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো। স্বাস্থ্যবিধির কারণে ঘটা করে অগ্রিম টিকেট বিক্রি না হলেও টিকেট বিক্রির হার বেড়েছে। সরকারের দেয়া সব ধরনের বিধি নিষেধ মানা হচ্ছে। ঢাকা থেকে রাজশাহী, সিলেট, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন রুটে মোট ১৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। একটি ট্রেনে ৭৫০ থেকে ৮০০ জন যাত্রী থাকে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ টিকেট বিক্রি করা হবে। সব টিকেটই অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টেশনের কাউন্টার থেকে একটি টিকেটও বিক্রি হবে না। এই ৫০ শতাংশ টিকেটের মধ্যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ৩৪ শতাংশ টিকেট বিক্রি হতো। এখন ঈদ সামনে রেখে টিকেট বিক্রি ৪২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ঈদ সামনে রেখে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে টিকেট বিক্রি ৫০ শতাংশে পৌছবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের সংখ্যা আর বাড়ানো হবে না। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালেই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ হবে। রেলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শুধু নির্দিষ্ট টিকেটের যাত্রী ছাড়া সঙ্গের কাউকে স্টেশনে ঢুকতে দেয়া হবে না। কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়া অন্য কোনো স্টেশন থেকেও ট্রেনে ওঠা যাবে না। টিকেট কত বিক্রি হবে সেটা মুখ্য বিষয় না। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলাই আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে। আমরা চাই করোনার সংক্রমণের মধ্যে যেন লোকজন চলাচল না করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App