×

জাতীয়

পশু আসছে ক্রেতা নেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

আগামী মঙ্গলবার থেকে ঢাকার পশুর হাটগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে কুরবানির পশু কেনাবেচা। এরই মধ্যে হাট বসানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইজারাদাররা। হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। এসেছে পর্যাপ্ত গরু। সবই দেশীয়। আগামী দুই দিনে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। গরুর অভাব হবে না। তবে গতকাল পর্যন্ত ক্রেতার দেখা নেই বাজারে। নেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো চিহ্ন। বেপারিরা থাকছেন গরুর পাশেই গাদাগাদি করে। কিছু কিছু হাটে চলছে এখনো প্রস্তুতি। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এবার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসছে ১৬টি পশুর হাট। ঢাকা উত্তরে ৫টি ও দক্ষিণে ১১টি। এছাড়া ঢাকা উত্তরের গাবতলী ও দক্ষিণের সারুলিয়ায় স্থায়ী পশুর হাট তো আছেই। ঈদকে কেন্দ্র করে এই দুটি হাটও বর্ধিত করা হচ্ছে। সরেজমিন গতকাল রাজধানীর আফতাবনগর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়ক ও বাসাবাড়ির সামনে পশু রাখার জন্য বাঁশ, খুঁটি ও সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। বেশকিছু অংশে বিক্রির জন্য আনা পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। সারি সারি করে রাখা গরুগুলোর পাশেই নিজেদের থাকার বিছানা করেছেন বেপারিরা। ক্রেতা না আসায় গোল করে বসে আছেন তারা। মেতেছেন খোশ গল্পে। কেউ বা গ্রাম থেকে সঙ্গে আনা চিড়া-মুড়ি-গুড় খাচ্ছেন। কিন্তু কারো মধ্যেই নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। মুখে নেই মাস্ক। হাত ধোয়ার নেই ব্যবস্থা। নেই স্যানিটাইজার। পাবনা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ১২টি দেশীয় গরু এনেছেন সোহেল রানা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি হয়নি। তিন দিনে মাত্র দুই জন ক্রেতা এসেছেন গরু দেখতে। দামও করেছেন তারা। লাল রঙের একটি বড় গরু সোহেল দাম হেঁকেছেন দেড় লাখ টাকা। একজন ক্রেতা ১ লাখ, আরেকজন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দাম করেছেন। কিন্তু হাট এখনো শুরু না হওয়ায় নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারবেন, এমন আশায় বিক্রি করতে রাজি হননি তিনি। একই জেলা থেকে ৪টি ট্রাকে করে প্রায় ৫০টি গরু এনেছেন সোহেল বিশ্বাস ও আয়নাল হোসেনসহ আরো কয়েকজন। গত শুক্রবার রাতে আফতাবনগরে এসেছেন তারা। গরুর পাশেই নিজেদের থাকার বন্দোবস্ত করেছেন। গতকাল গাদাগাদি করে বসে খাচ্ছিলেন চিড়া-মুড়ি আর গুড়। সামাজিক দূরত্বের কথা বলা হলে, তাদের ভাষ্য- গ্রামে করোনা নেই। তাই আমাদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে সঙ্গে মাস্ক রাখার কথা বলা হলে তা ব্যাগের মধ্যে রাখা আছে বলে জানান তারা। এখানে পানির ব্যবস্থা পুরোপুরি না হওয়ায় বেপারিদের অনেককেই হাটের পাশের মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে গোসল করতে দেখা যায়। সেই পানিই আবার গরুকে খাওয়াচ্ছেন তারা। হাট ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একজন মাত্র ক্রেতা এসেছেন গরু দেখতে। কাজী মাহবুব নামের ওই ব্যক্তি জানান, গরু দেখতে এসেছি। দরদাম যা দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে বেপারিরা দাম বেশিই বলছেন। তাই এখনই গরু কিনব না। ঈদের আগের রাতে কিনব। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ ও এর আশপাশের খালি জায়গার হাটে। তাছাড়া, সিটি করপোরেশন নির্ধারিত সীমানা পেরিয়ে আশপাশের বাসাবাড়ির সামনেও পশু রাখার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয়রা এতে ক্ষব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারপরেও নিয়ম উপেক্ষা করে বিভিন্ন বাসার সামনের উঠান ও পেছনের খালি জায়গাতে বাঁশের খুঁটি লাগানো হয়েছে। এমনকি অনেকে বাসায় ঢোকার প্রবেশের জন্য মাত্র দেড় থেকে দুই হাত রাস্তা ফাঁকা রেখে খুঁটি বসানো হচ্ছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার হাটটি বাতিল করতে স্থানীয় বাসিন্দারা মেয়রের কাছে আবেদন এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে ইজারাদার আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল জানান, এলাকাটি আবাসিক। সরকারি কোয়ার্টার বেশির ভাগ। তাছাড়া এবার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। আমরা এমনিতেই আতঙ্কিত। তার ওপর নিয়মনীতি না মেনে হাট বসানো হচ্ছে। আমরা কোনো প্রতিবাদও করতে পারি না। তাই মেয়রের কাছে দাবি জানাই, হাটটি বাতিল করে ফাঁকা কোনো জায়গায় বসানো হোক। এছাড়া দুই সিটির অন্য হাটগুলোতেও সমানতালে প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে গরুও আনা হচ্ছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে হাট ইজারাদারদের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ঢাকা দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক বলেছেন, হাট বসানোর সব নিয়ম ক্রেতা, বিক্রেতা, ইজারাদার সবাইকেই মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ইজারার শর্ত কেউ ভঙ্গ করলে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App