×

স্বাস্থ্য

জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারায় লকডাউন ব্যর্থ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ০৯:৩০ এএম

নমুনা পরীক্ষা করা ছাড়া করোনা মোকাবিলায় সরকারের আর কোনো উদ্যোগই এখন দৃশ্যমান নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও লাগাম টেনে ধরে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার ওয়ারীতে লকডাউনের মেয়াদ শেষে এর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলছেন, মানুষের আচার-আচরণে মনে হয় না দেশে কোনো মহামারি আছে। আর এই অবস্থা দেখেই হয়তো সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে। লকডাউন কার্যকর করতে হলে জনগণের যে সম্পৃক্ততা দরকার তা করা হয়নি। সামাজিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ঘাটতি ছিল। ফলে ওই এলাকার মানুষ লকডাউন মানতে আগ্রহী হয়নি। কার্যকর লকডাউনের চেয়ে বিধি-নিষেধের কড়াকড়ির কারণে এই প্রক্রিয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি করে। এ কারণে এতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না বলে মনে করেন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি জাতীয় পরামর্শ কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। গতকাল শনিবার তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে যেসব এলাকায় লকডাউন দেয়া হয়েছে, সেখানে মূল কাজের চেয়ে আনুষঙ্গিক বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকানো, নিষেধাজ্ঞার বাড়াবাড়ি ছাড়া কাজ খুব একটা হয়নি। আর এ কারণেই কার্যকর পদ্ধতি হওয়া সত্তে¡ও আমাদের দেশে লকডাউন ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করার পর আতঙ্কিত হয়ে মানুষ ওই এলাকা ছেড়েছে। মানুষের কাছে লকডাউন মানে এখন জেলখানা। কিন্তু বিষয়টাতো তা নয়। লকডাউন ঘোষণা করা এলাকায় নমুনা পরীক্ষা বাড়িয়ে রোগীদের শনাক্ত করে তাদের আলাদা করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল নিশ্চিত করা ছিল মূল করণীয়। কিন্তু লকডাউনের নামে যে কড়াকাড়ি ব্যবস্থা আমরা দেখেছি তাতে মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় এই পদ্ধতি আমাদের দেশে সফল হয়নি। জনগণের অসচেতনতা বিপদ বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে বিশিষ্ট এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, মানুষ এখনো সচেতন নয়। ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়ে এখন আগ্রহ কমে গেছে। মাস্ক পরার সংখ্যাটাও কমে গেছে। সামাজিক দূরত্বের এই বিষয়টিতো আরো আগে থেকেই মানেনি মানুষ। এই আচরণ করোনা সংক্রমণকে দীর্ঘায়িত করবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেনও মনে করেন লকডাউন ব্যবস্থায় জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকায় তা কার্যকর হয়নি। আর এ কারণেই তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, রোগী শনাক্ত করার পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন এবং নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় সরকারের কাজ তেমন দৃশ্যমান নয়- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার কাজ করছে না কিংবা হাত-পা গুটিয়ে আছে তা ঠিক নয়। মানুষের সচেতনতাও এখানে জরুরি। একটি আশার কথা হলোÑ দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেনি, স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। শহরের চেয়ে গ্রামে সংক্রমণ বেড়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এই সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের রাজশাহী জেলার সভাপতি ডা. চিন্ময় দাস ভোরের কাগজকে বলেন, লকডাউন লাল ফিতার চক্রে পড়ে গেছে। ক্লাসটার লকডাউন, জোনভিত্তিক লকডাউন, পূর্ণ লকডাউন এসব নিয়ে বিগত ৪ মাস ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। অপরদিকে জীবন-জীবিকার নামে মানুষের অবাধ চলাচলের মধ্য দিয়ে নীরবে সামাজিক পর্যায়ের সংক্রামণের বিস্তার হয়ে গেছে। এর বাইরে কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না। আর এখন তো করোনা প্রতিরোধের চেয়ে থলের বিড়াল যাতে বের না হয়, তা নিয়েই সবাই ব্যস্ত। প্রশাসনের উচ্চ থেকে নিম্নপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রধান করে সারাদেশে যে করোনা প্রতিরোধ কমিটি হয়েছে এখন তাদেরই জবাবদিহি করা উচিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল শনিবার নমুনা কম সংগ্রহ ও পরীক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের পরীক্ষাগারগুলোতে নমুনার সংখ্যা অনেক কম আসছে। নমুনা সংগ্রহ কম হচ্ছে। আপনাদের যাদের কোনোরকম লক্ষণ বা উপসর্গ আছে কিংবা কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগ হয়, তবে অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা করাবেন। আমাদের নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রত্যেক উপজেলা, জেলা, শহর সব জায়গায় নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা আছে। আপনারা নমুনা দিতে আসুন এবং নমুনা পরীক্ষা করে এ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App