×

জাতীয়

অপরাজিতার অনিয়ম নতুন নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ১১:৪৬ এএম

অপরাজিতার অনিয়ম নতুন নয়

শারমিন জাহান

এর আগেও জরিমানা গুনতে হয়েছে চাকরিরত অবস্থায় ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন তিন দিনের রিমান্ডে শারমিন জাহান

মাস্ক জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার শারমিন জাহানের প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের অনিয়মের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এর আগেও নিয়ম ভঙ্গ করেছিল প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করেছিল ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তারা নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে দাবি করা হয় প্রতিষ্ঠানটির কোনো ত্রুটি নেই। ত্রুটি থাকলে তারা কিভাবে সেখানে কাজ করছে। তবে একটি হোটেলকে গোডাউনে রূপান্তরিত করে নোংরা পরিবেশে রাখা এন-৯৫ মাস্ক, স্যানিটাইজার ও পিপিই- এসব কোনোটিরই যথোপযুক্ত কাগজ দেখাতে পারেনি অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল।

এদিকে দেশের শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় শারমিন জাহান কীভাবে মাস্কের ব্যবসায় জড়িত হলেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। যদিও শনিবার (২৫ জুলাই) রিমান্ডের শুনানিতে আদালতে শারমিন দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) তার মতো অনেকে আছেন, যারা নানারকম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। শুধু তার বেলায় কেন দোষ চাপানো হচ্ছে? শুনানি শেষে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলছে, একই সঙ্গে দুটো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যাবে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক। তবে অন্য কোথাও তাকে ব্যবসা বা খণ্ডকালীন চাকরি করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে তা অবহিত করতে হয়। এক্ষেত্রে শারমিন বিশ্ববিদ্যালয়কে তার ব্যবসার সম্পর্কে জানিয়েছিলেন কিনা তা খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ডিএমপি রমনা অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামীমের সার্বিক সহায়তায় ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন ফারিবা গত ৩ জুলাই রাজধানীর আনন্দবাজার বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন অমর একুশে হল এলাকায় অভিযান চালায়। সে সময় দেখা যায়, সরকারি নির্দেশনা আমান্য করে সন্ধ্যা ৭টার পরও একটি প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। সেখানে অনেকে মিলে সামাজিক দূরত্ব না মেনে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পরে জানা যায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানের গুদাম এটি। করোনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি হোটেলকে গুদাম বানিয়ে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এন-৯৫ লেখা মাস্ক বিক্রয়ের জন্য রাখা। পিপিইি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ছিল সেখানে। তবে খতিয়ে দেখা যায় হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো নকল। পরে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানের অনুপস্থিতিতে তার স্বামী মো. শরিফুল আলমের কাছে করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর বিষয়ে কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। সে সময় তারা নানা টালবাহানা করতে থাকে। বিএসএমএমইউর ওয়ার্ক অর্ডার দেখিয়ে দাবি করা হয় প্রতিষ্ঠানটির কোনো ত্রুটি নেই। আর ত্রুটি থাকলে তারা কিভাবে সেখানে কাজ করছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা যৌক্তিক কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন ফারিবা ভোরের কাগজকে বলেন, অভিযানের সময় তাদের নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। এন-৯৫ মাস্কসহ অন্যান্য করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর পক্ষে কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। তখন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহান অনুপস্থিত থাকায় তার স্বামীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ সাবধান করা হয়।

এদিকে এন-৯৫ মাস্ক জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন বলে জানা গেছে। পরে আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকও হন তিনি। বর্তমানে দলে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে বিএসএমএমইউয়ে ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহের কাজ হাতিয়ে নেন। কিন্তু আসল মাস্ক সরবরাহের পরিবর্তে সরবরাহ করেন নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক। এ ঘটনায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ মামলা করার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন শারমিন জাহান। তবে গত শুক্রবার রাতে তাকে শাহবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে শারমিনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ পরিদর্শক মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস।

অন্যদিকে শারমিনের পক্ষে তার আইনজীবী পনির হোসেন জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে পনির বলেন, অভিযুক্ত শারমিন সরল বিশ্বাসে মাস্ক সরবরাহ করেছেন, তার কোনো গিল্টি মাইন্ড ছিল না। তিনি কোনো নকল মাস্ক সরবরাহ করেননি। তাছাড়া অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পুলিশ দেখাতে পারবে না। সে সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শারমিনকে বিচারক প্রশ্ন করেন, সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় তিনি কীভাবে, কোন নিয়মে, কোন ক্ষমতায় মাস্কের ব্যবসায় নিয়োজিত হলেন। উত্তরে শারমিন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতো অনেকে আছেন, যারা নানা রকম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। শুধু আমার বেলায় কেন দোষ চাপানো হচ্ছে? সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শারমিন এ সময় তার ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক জীবনের কমর্কাণ্ড সম্পর্কে বলতে শুরু করলে বিচারক তাকে থামিয়ে দেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে শারমিনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বলে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন জানান।

এদিকে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, শারমিন জাহানের কথা আমি শুনেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাকরির বিষয়ে সম্পর্কে আমি এখনো পুরোপুরি অবগত নই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তার সম্পর্কে সব তথ্য দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে বলেছি। পাশাপাশি বিএসএমএমইউর উপাচার্যকেও আমি তার সম্পর্কে সব তথ্য আমাদের দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তিনি আরো বলেন, কেউ যদি ঢাবিতে কোনো চাকরি করেন, তাহলে অন্য কোথাও তাকে ব্যবসা বা খণ্ডকালীন চাকরি করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে তা অবহিত করতে হয়। এক্ষেত্রে শারমিন বিশ্ববিদ্যালয়কে তার ব্যবসার সম্পর্কে জানিয়েছিলেন কিনা তা খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ঢাবির কেউ নীতিবিরোধী কাজ করলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, একই সঙ্গে দুটো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যাবে না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সঙ্গে সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিক। তবে ব্যবসার বিষয়ে আমি বলতে পারছি না। এখানে আগে দেখতে হবে ব্যবসার লাইসেন্স কার নামে আছে। তাছাড়া অফিস টাইমের বাইরে কেউ ব্যবসা করতে পারেন। তবে ব্যবসার ক্ষেত্রেও অনুমতি নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App