×

জাতীয়

করোনাঝুঁকিতে চামড়াশিল্প!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২০, ০৯:০৫ এএম

করোনাঝুঁকিতে চামড়াশিল্প!

কুরবানির ঈদের আর এক সপ্তাহ বাকি। হাটে গরু নিয়ে আসছেন বেপারিরা। এখনই ক্রেতা সমাগম না হলেও উৎসুক মানুষেরা হাটে আসছেন দেখার জন্য। গতকাল কমলাপুর হাটের দৃশ্য- ভোরের কাগজ

টাস্কফোর্সের প্রথম সভার বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে রপ্তানির সুযোগ দিতে চায় ট্যারিফ কমিশন
গত বছর কুরবানিতে পশুর চামড়া নিয়ে নজিরবিহীন সংকট তৈরি হয়। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘করোনা ভাইরাস’। এ সংকটে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে চামড়াশিল্প খাত। এদিকে এ খাতে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রথম সভার বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাছাড়া সাভার চামড়া শিল্পনগরীর ১২৫টি ট্যানারি উৎপাদনে গেলেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) এখনো পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, চামড়াশিল্পের উন্নয়নে নগদ সহায়তা, পৃথক শিল্পনগরী গড়ে দেয়া এবং পরিবেশবান্ধব ইটিপি স্থাপনসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু কুরবানির চামড়া পানির দামে কেনার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি ট্যানারি মালিকরা। গত বছর সরকার নির্ধারিত দামে না কেনায় কোটি কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেক কুরবানিদাতা রাগে-ক্ষোভে চামড়া ডাস্টবিন ও রাস্তায় ফেলে দেন। এমনকি এ পণ্যের হকদার মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোও চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ থেকে বিরত ছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় গত বছরের মতো এবারো কুরবানিতে পশুর চামড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনজন মন্ত্রী। সভায় এ খাতের সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। জানতে চাইলে শিল্প সচিব কে এম আলী আজম বলেন, গতবারের বিশৃঙ্খলা এবারো হতে পারে। এর অন্যতম কারণ চামড়া কেনায় ব্যবসায়ীদের অনীহা। আগে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীরা চামড়া সংগ্রহ করত। এবার সেটা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কুরবানিতে পাওয়া যায় সোয়া কোটি চামড়া : শুধু কোরবানির সময় সারাদেশ ১ কোটি ১০ লাখ থেকে সোয়া কোটি কাঁচা চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৪৫-৫০ লাখ গরুর চামড়া আসে। বাকি ৭৫ থেকে ৮০ লাখ ছাগল, ভেড়া, খাসি ও অন্যান্য পশুর চামড়া। তবে করোনাসহ নানা কারণে এ বছর কুরবানি কিছুটা কমে যেতে পারে। এই বাস্তবতায় চামড়ার ন্যায্য দাম নিশ্চিত না হলে গরুর ন্যায্য দামের বিষয়টি নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। এ কারণে চামড়ার সঠিক দাম কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চামড়া জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। দাম নিয়ে কেউ কারসাজির সুযোগ নিতে পারবে না। ভারত ও চীনে কাঁচা চামড়া রপ্তানি হবে : ট্যারিফ কমিশন বলেছে, ভারত ও চীনে এ মুহূর্তে কাঁচা চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো। তাই কুরবানির চামড়া রপ্তানি হবে ভারত ও চীনে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ সেন্ট থেকে দেড় মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম দাঁড়ায় ৪৩ থেকে ১২৯ টাকা। তবে কমিশন এবার চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা সুপারিশ করেছে। গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার নির্ধারিত দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এবার কমিশন তা ৩০ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া ছাগলের চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকার জায়গায় ১৫ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টি জটিল। কিন্তু সরকার যদি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় বিটিএ’র পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন, তবে কাঁচা চামড়া ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য রপ্তানির সুযোগ দেয়া উচিত। কুরবানি সামনে রেখে এ শিল্পের কোনো দায় ট্যানারি মালিকরা নিতে ইচ্ছুক নয়। অথচ কুরবানির চামড়া কিনতে ৬০০ কোটি টাকার তহবিল প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App