×

সম্পাদকীয়

শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দ্রুত পরিশোধ করুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২০, ১০:০৫ পিএম

প্রতিবার ঈদের আগে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। কুরবানির ঈদে ৫ শতাধিক কারখানার শ্রমিকদের উৎসব ভাতা ও জুলাইয়ের অর্ধেক বেতন অনিশ্চিত নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে করোনা সংকটে এই উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ৪২৭টি ও বিকেএমইএর ১০২টি, টেক্সটাইল মিলারদের সংগঠন বিটিএমএর ৪৪টি, বেপজার ৩৬টি ও অন্যান্য খাতের ২৯৯টি কারখানার ঈদের বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শিল্প পুলিশের এ তালিকায় ঢাকা মহানগরীর কোনো কারখানা অন্তর্ভুক্ত নেই। এসব কারখানার মধ্যে অন্তত ৫০০ কারখানার ঈদ বোনাস ও বেতনের বিষয়ে কারখানা মালিকরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাদের মধ্যে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ১৭৭টি ও বিকেএমইএর ৭০টি কারখানা রয়েছে। বাকি কারখানাগুলো বিটিএমএ, বেপজা ও অন্যান্য খাতের। পোশাক কারখানাগুলো এপ্রিল থেকে সরকারের ২ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা দেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে আসছে। এপ্রিল মাসে কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও মে থেকে বেশিরভাগ কারখানা উৎপাদনে। এ সময়ের মধ্যে সবাই রপ্তানিও করেছে। এর মধ্যে গত রোজার ঈদেও ৪৮টি কারখানা তাদের শ্রমিকদের বোনাস দিতে পারেনি। এবারো সেসব কারখানা বলছে, তাদের কাছে টাকা নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রমিকরা যদি কাজই করে থাকেন তাহলে তাদের বেতন দেয়ার সঙ্গে পণ্য বায়ার কিনল নাকি কিনল না, তার সম্পর্ক থাকবে কেন? বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এই খাত। এই বিপুল মুনাফার জোগান আসে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রম থেকে। বছরের পর বছর সরকার বাজেটের মাধ্যমে গতানুগতিক পথে, এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক অজুহাতে এই শিল্পের মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে। করোনা ইস্যুতে নতুন করে সংকটে পড়ছে তৈরি পোশাক খাত। তবে সরকার এই সংকটকালীন শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। শ্রমিকরা যেন সঠিক সময়ে তাদের বেতন বুঝে নিতে পারেন- বিজিএমইএ তদারকি করার কথা। আমরা এর আগেও সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছিলাম, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। গুরুত্বপূর্ণ এ অবদান সত্ত্বেও পোশাক শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এ খাতের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। এরপরও অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকদের চাকরি নিরাপত্তা, বেতনের নিশ্চয়তা। এবার বেতন-বোনাস সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে করোনাকালে আবারো শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের বর্তমান দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সামাজিক অসন্তোষ দেখতে চাই না। ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App