×

জাতীয়

বড় রদবদল আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২০, ০৯:২৮ এএম

বড় রদবদল আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে

ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গতকাল বুধবার সরিয়ে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. আমিনুল হাসানকে। এখানেই শেষ নয়। বড় ধরনের রদবদল আসতে চলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে কাউকে বরখাস্ত, কাউকে বদলি করা হবে। করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন দুর্নীতি রিজেন্ট ও জেকেজির ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় শীর্ষপর্যায় থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংস্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ডজনেরও বেশি কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। বুধবার (২২ জুলাই) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কেবল পরিচালক (হাসপাতাল) নয়, যে শাখাগুলো বেশি সমালোচিত হয়েছে সেগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সরকার শক্ত ব্যবস্থা নিবে। অন্যদিকে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন দুর্নীতি ও সম্প্রতি রিজেন্ট ও জেকেজিকাণ্ড অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২-১৪ জন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুদকের একটি টিম অধিদপ্তর থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিসহ নানা তথ্যাদি সংগ্রহ করেছে। এদিকে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করার পর কে হচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরবর্তী কাণ্ডারি, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। শুধু করোনাকালের জন্যই নয়, শীর্ষস্থানীয় এই পদে নিয়োগের জন্য খোঁজা হচ্ছে একজন যোগ্য লোককে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনীত করবেন তিনিই যে এ পদে বসবেন তা নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বলেছেন, প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দরকার হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ অন্যান্য চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সরকার নতুন করে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করছে। ডিজির চেয়ারে যাদের নাম : গত মঙ্গলবার থেকেই মহাপরিচালক হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। অনেকে পদপ্রত্যাশী হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কেউই এ পদে দায়িত্ব নিতে রাজি নন। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল হাশেম খান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল ইউসুফ ফকির, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শামীম হাসান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ।

জানা গেছে, গ্রেড-১ ভুক্ত পদ হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এই কাজটি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন থেকে ফাইল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এলে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে কাজ করা হবে। জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগ কার্যকর এবং নতুন মহাপরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা বলছেন, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের যে দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে তাতে মহাপরিচালকের বিদায় নেয়াটা অবধারিতই ছিল। তবে মহাপরিচালক পদত্যাগ করার মধ্যেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি শেষ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন শুদ্ধি অভিযান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পরিবর্তন ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই মুশকিল। স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করে এবং এ খাতের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আর তাই এই পরিবর্তন খুব দ্রুতই করা উচিত। এদিকে মহাপরিচালক পদত্যাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে ইতিবাচক কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, এখন যে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে টানাপোড়েন, এ ধরনের নানা সমস্যা এগুলো সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য ডিজি হিসেবে তার ২টি পথ ছিল। হয় তিনি পদত্যাগ করবেন, না হয় তাকে সরিয়ে দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে কেবল পদত্যাগ কোনো সমাধান হতে পারে না। দরকার পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মনে করেন দেশের স্বাস্থ্য খাতে সার্বিক অব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের সবারই সরে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়েরও দায় রয়েছে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। তা একদিনে সাফ করা সম্ভব নয়। যে ব্যবস্থাপনা, সেই ব্যবস্থাপনার যদি উন্নয়ন করা না যায়, তাহলে শুধু বদলি বা পদত্যাগ করেই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App