×

সারাদেশ

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৭ পিএম

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

অবর্ণনীয় কষ্টে মানুষেরা

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি প্রায় এক মাস বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার নদ-নদী অববাহিকা সহ চরাঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

করোনা পরিস্থিতির মাঝে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চল জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোর কর্মজীবী মানুষ জন, যারা দুই হাতের উপর জীবিকা চালান। একদিকে বন্যায় কোন কাজ জোটাতে পারছেন না, অন্যদিকে ঘরের খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন।

সরকারি-বেসরকারি খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এরকম দুর্বিষহ অবস্থায় তাদের ভাগ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তাও মিলছে না। উভয় সংকটে পড়া এ মানুষগুলো নিজ ঘর-বাড়িতে পানির মধ্যেই নৌকা, কলা গাছের ভেলা ও ঘরের মাঁচাং চালের সাথে ঠেকিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে।

বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনলেই মুহুর্তেই ত্রাণের আশায় ছুটে আসছে বন্যা দুর্গত মানুষজন। এভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা ছুটাছুটি করলেও বার বার তাদের নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি দীর্ঘদিন পানির মধ্যে বসবাস করায় বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষজন পানিবাহিত নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেখানে নিজেদের খাদ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে বানভাসিরা, সেখানে গো-খাদ্য তাদের কাছে এখন সোনার হরিণ। এরকম সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে বানভাসিরা তাদের নিজেদের গৃহপালিত গবাদিপশু পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ।

এদিকে দিন যতই যাচ্ছে ততই দুর্ভোগের মুখে পড়ছে, উঁচুস্থান বাঁধের রাস্তা ও পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষদের। এসব এলাকায় যত্রতত্র মলত্যাগের কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে। সরকারিভাবে দেয়া ত্রাণ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দুর্গত মানুষের ভাগ্যে জুটছে না। চোখে পড়ছে না কোন বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতাও।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ১ মাসে পানিতে ডুবে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শিশু ১৬ জন। জেলায় বন্যা কবলিতদের স্বাস্থ্য সেবার ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে কোন মেডিকেল টিমের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

উলিপুর উপজেলার ব্রম্মপুত্রের বুকে বতুয়াতুলির চরের মুসা মিয়া জানান, বন্যা এতো দীর্ঘ হবে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। পানি সামান্য কমে আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজকর্ম নেই। ঘরে খাবার নেই। বউ, বাচ্চা নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছি। কোন ত্রাণ পাইনি। ত্রাণ না পেলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ২৫ জুলাই এর মধ্যে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫শ ২৫ পরিবারকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ’র চাল দেয়া হবে। এতে চরাঞ্চলের কোন হতদরিদ্র পরিবার বাদ পড়বে না। এর আগে বন্যার্তদের মাঝে ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App