×

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবে না!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২০, ০৯:৩১ এএম

বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবে না!

ভ্যাকসিন। ফাইল ছবি।

বিশ্বজুড়ে সব মহলে সবচেয়ে আলোচিত স্বপ্ন হচ্ছে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর এবং মানবদেহে নিরাপদ একটি ভ্যাকসিন। তাই ধনী দেশ থেকে শুরু করে দরিদ্র দেশেও ভ্যাকসিনের চলমান গবেষণা, উৎপাদন ও প্রাপ্যতা সম্পর্কে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আশা ও নিরাশা। করোনা ভাইরাসকে পরাভ‚ত করতে একের পর এক বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে যেন রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। দুরূহ হলেও সেটি যে অসম্ভব নয় তার প্রমাণও দিয়েছেন তারা। সোমবার রাতে আন্তর্জাতিক মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত হয় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকসের সেই সাফল্যের কথা। তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, ভ্যাকসিন তৈরিতে অক্সফোর্ডই সবার থেকে এগিয়ে। এছাড়া চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিনোফার্ম, সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুল, ফরাসি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা সানোফি, ব্রিটেনের গ্ল্যাক্সোস্মিথসহ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে নানা প্রতিষ্ঠান। তাদের সবাই নিজেদের ভ্যাকসিনকে কার্যকর বলে দাবি করছে।

তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে এবং তা বাজারে এলেও বাংলাদেশের জন্য তা সহজলভ্য হবে না- এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দেশ ও ধনী দেশগুলো এই সুবিধা পাবে। ইতোমধ্যেই ধনী দেশগুলো নিজেদের জনগণের জন্য ভ্যাকসিন পেতে আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করছে। ফলে দরিদ্র দেশগুলোকে এই ভ্যাকসিনের সুবিধা পেতে দীর্ঘ সময়ই অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য গত রবিবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রকে (আইসিডিডিআর,বি) অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার (বিএমআরসি)। যা দেশের মানুষের মধ্যে অনেকটা আশা জাগিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরাও মনে করেছিলেন এটি হলে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পথটা অনেকটাই সহজ হবে। কিন্তু মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব এম এ মান্নানের বক্তব্যে সেই আশাকে হতাশায় পরিণত করেছে। তিনি বলেছেন, দেশে চীনের করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে না। অনুমোদন নিতে হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। কেন না এটি দুই দেশের আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়। মাইক্রো পর্যায় থেকে এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব নয়। বিএমআরসি এই বিষয়ে সরাসরি অনুমোদন দিতে পারে না। অপরদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বাংলাদেশও পথ চলতে শুরু করেছে। ২ জুলাই গ্লোব বায়োটেকের প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। কিন্তু এর সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সসয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক বাংলাদেশ ফার্মাকোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করছি। অথচ এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু বড় একটি ভ্যাকসিন আমাদের কাছেই আছে। আর তা হলো মাস্ক পরা, ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া। এর চেয়ে কার্যকর ভ্যাকসিন আর কিছু নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটি যে শতভাগ কার্যকর তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। আমরা এমন একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছি যা এই মাস্ক পরা সামাজিক দূরত্ব বজায়া রাখা এবং বারবার হাত ধোয়া থেকে মুক্তি দেবে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আমরা এই ভ্যাকসিন খুঁজছি। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও উৎপাদনের পর একটা বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য আগাম বুকিং দিয়ে রাখছে। যা সমভাবে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ফার্মাসিস্ট ও গবেষক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, এখনো পর্যন্ত কোনো দেশ কিন্তু বলেনি তারা করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছে। যদি কেউ আবিষ্কার করে তবে তার দাম হবে আকাশচুম্বি। ওই ওষুধ কিনে এনে আমাদের দেশের সব মানুষের ব্যবহারের ক্ষমতা থাকবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের এক অধ্যাপক ভোরের কাগজকে বলেন, ভ্যাকসিনের আবিষ্কার, উৎপাদন ও বিপণনের ক্ষেত্রে রাজনীতি, অর্থনীতির অনেক শক্তিশালী ভ‚মিকা রয়েছে। কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ার আগেই ধনী দেশগুলো যেভাবে তাদের চাহিদা দিয়ে রাখছে; তা উৎপাদন করতেই অনেকটা সময় লেগে যাবে। তাদের চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর চাহিদা মেটাতে সময় লাগবে আরো দেড় দুই বছর। ভ্যাকসিন কেনার সামর্থ্য নেই বিশে্বর এমন ৯০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। তার মতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের আগে হয়তো এর সুফল পাওয়া যাবে না। তবে সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব এম এ মান্নান বলেছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে বাংলাদেশ আগে পাবে। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি নিয়ম আছে, যেসব দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় চার হাজার ডলারের নিচে, তারা ভ্যাকসিন ফ্রিতে পাবে। সেই হিসেবে আমরা ফ্রিতে পাবো। আমরা চেষ্টা করব, বাংলাদেশ যেন আগে পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শতভাগ কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ার আগেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে ওষুধের নাম প্রচার করছে তা ঠিক নয়। তারা বলছেন, আমাদের দেশে ওষুধের বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একেকটা ওষুধের নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষ সেই ওষুধ মজুত করে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই তা সেবন করে। এতে ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যতক্ষণ কোনো ভ্যাকসিনকে কার্যকর না বলছে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের ও বিশ্ববাসীকে অপেক্ষা করতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বেশি আশাবাদী করলে এর ফল উল্টোই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App