×

জাতীয়

বন্যার পানি ঢুকছে ঢাকায়

Icon

nakib

প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২০, ০৯:০০ এএম

বন্যার পানি ঢুকছে ঢাকায়

প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ

এক সপ্তাহ থাকবে বিপদসীমার মধ্যে প্লাবিত হবে নতুন নতুন এলাকা
বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকায়। নগরীর পূর্বাঞ্চল অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন ওই এলাকায় পানির স্রোত অনেক বেশি। স্থানীয়রা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানির কারণে রাজধানী সংলগ্ন নদীতে পানি বেড়েছে। মূলত বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ বালু নদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকবে। তাই এই এলাকা নতুন করে আরো প্লাবিত হবে বলে মনে করেন পানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যতদিন বালু নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ না করা হবেÑ ততদিন এই এলাকার মানুষকে বন্যার পানিতে ভাসতে হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বর্তমানে বালু নদীতে পানির স্তর হচ্ছে ৭ দশমিক ১৩ মিটার। এই নদীর পানির সমতল ৫ দশমিক ৩৩ মিটার। ৫ দশমিক ৭৫ মিটারের উপরে গেলে বিপদসীমা ধরা হয়ে থাকে। সে কারণেই এই নদীতে কেন্দ্রের সতর্ক অবস্থা জারি রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (সাবেক নাসিরাবাদ ইউনিয়ন) ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ওয়ার্ডের ইদারকান্দি, ফকিরখালী, বালুর পাড়, বাবুর জায়গা, দাসেরকান্দি, জোড়ভিটা, ত্রিমোহনী উত্তরপাড়া, নাসিরাবাদ উত্তরপাড়া, নাসিরাবাদ টেকপাড়া, ইমামবাগের কিছু অংশ, উত্তরগাঁও, শেখের জায়গা ও নাগদারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় এক থেকে দেড় হাত পানি বেড়েছে। এসব এলাকায় বসবাসরত মানুষের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এলাকার মানুষ এখন নৌকা কিংবা পানির ভেতর দিয়ে যাতায়াত করছেন। নিচু এলাকাগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে। এলাকার মানুষ খুবই কষ্টে আছেন। কাজকর্ম কমে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। এভাবে আর দুয়েক দিন গেলে মানুষের ঘরে ঘরে পানি ঢুকে পড়বে। তখন মাচা বানিয়ে থাকতে হবে। অনেকেই এখন সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিস্তার পানির একটা অংশ ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা হয়ে এদিকে চলে আসে। সেই পানির অর্ধেক অংশ ভৈরব আর অর্ধেক শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর অববাহিকায় চলে আসে। বর্তমানে বালু নদীতে পানি বেড়েছে। তাই এর আশপাশের এলাকাগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত ভোরের কাগজকে বলেন, ১৯৮৮ সালের পর টঙ্গি থেকে আবদুল্লাহপুর, মিরপুর থেকে গাবতলী, গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ হয়ে শ্যামলী, আদাবর, মিরপুর এলাকায় আর বন্যা হয়নি। তাই যতদিন বালু নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ না করা হবে ততদিন এই এলাকার মানুষকে বন্যার পানিতে ভাসতে হবে। তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহ বালু নদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকবে। তাই এই এলাকার আরো কিছু জায়গা নতুন করে প্লাবিত হবে। পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এ আতিক রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এখন যে বন্যা সেটা পানি নামার কারণে। নিম্নাঞ্চলে পানি নামছে, তাই প্লাবিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে সারাদেশে বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় সব নদীতে পানি বেড়েছে। আগামী এক সপ্তাহ এ অবস্থা থাকবে। যেসব পথে পানি বের হওয়ার কথা; তা বালু দিয়ে ভরাট করে জবর দখল করা হয়েছে। সুতরাং পানি বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হওয়ায় রাজধানীর পানি বের হতে পারছে না। এদিকে প্রবল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অনেক জায়গায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে দেশের ৪ সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী বন্দরগুলোতে দেখাতে বলা হয়েছে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত। রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলোর জন্য পূর্বাভাসে বলা হয়Ñ রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি অর্থাৎ ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার থেকে অতিভারি অর্থাৎ ৮৯ মিলিমিটারের ওপরে বর্ষণ হতে পারে। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এ কারণে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। বন্যায় পানিবন্দি ২৬ লাখ মানুষ : দেশের বন্যাকবলিত ১৮ জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ জন। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৫টি। বন্যার পানি থেকে বাঁচতে এসব মানুষ কেউ নিজের বাড়িতে উঁচু মাচা করে, কেউ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ বেড়িবাঁধের ওপর, কেউ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App