×

বিনোদন

মিশা-জায়েদের পদত্যাগ নিয়ে উত্তপ্ত এফডিসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৯:৫১ এএম

মিশা-জায়েদের পদত্যাগ নিয়ে উত্তপ্ত এফডিসি

মিশা সওদাগর-জায়েদ খানের পদত্যাগের দাবিতে ১৯ জুলাই বিএফডিসির সামনে মানববন্ধন করা হয় -ভোরের কাগজ

চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেহাল দশার মধ্যেই শিল্পীরা নিজেরা নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করে চলেছেন! গতকাল রবিবার এফডিসির সামনে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে ভোটাধিকার বঞ্চিত ১৮৪ জন অভিনয় শিল্পী চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন করেন। ‘যে নেতা শিল্পীদের সম্মান করে না, তাকে আমরা চাই না’ স্লোগানের মাধ্যমে বঞ্চিত শিল্পীরা মানববন্ধনে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ফিরোজ সাঁই, শান, সাজিদ প্রিন্স, রমিজউদ্দিন, হিরো আলমসহ আরো অনেকে। উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে বহুদিন কাজ করা সদস্যরাও। মানববন্ধনে অংশ নেয়া চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সাদিয়া মির্জা বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমরা সিনেমার সঙ্গে জড়িত। শিল্পী সমিতির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমি বহুবার ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু মিশা-জায়েদ প্যানেল ক্ষমতায় এসে আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা শিল্পী সমিতি থেকে মিশা ও জায়েদ খানের পদত্যাগ চাই।’ মানববন্ধনে হিরো

আলম বলেন, ‘জায়েদ খানের জন্মের আগ থেকে যে শিল্পীরা এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত, তাদের যাচাই-বাছাই না করে বাদ দেয়া হয়েছে। আমাদের দাবি, যাদের বিনা কারণে বাদ দেয়া হয়েছে, তাদের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়া হোক। কারণ এফডিসি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এখানে ঢোকার অধিকার শিল্পীদের রয়েছে। কাউকে ঢুকতে না দেয়ার অধিকার কারো নেই। কয়েকদিন আগে তিনি (জায়েদ খান) আমাকে নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, হিরো আলম নামের কাউকে তিনি চেনেন না।’ ভোটাধিকার বঞ্চিত অভিনয় শিল্পীরা জানান, তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই মিশা-জায়েদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মিশা বা জায়েদ খানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে এবং দায়িত্ব-জ্ঞানহীন আচরণ ও অসততার পরিচয় দেয়ায় সাংগঠনিক পদ থেকে মিশা-জায়েদের পদত্যাগের দাবিতে তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে। এদিকে মানববন্ধনকে ঘিরে এফডিসি চত্বরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এফডিসিতে পুলিশও মোতায়েন করা হয়। দুপুর ১২টায় এফডিসির গেটের সামনে মানববন্ধন শুরু হলেও বিকাল পর্যন্ত এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটোরিয়ামের সামনে মানববন্ধনকারী শিল্পীরা অবস্থান করেছিলেন। এদিকে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ১৫ জুলাই মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বয়কটের প্রতিবাদে জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটোরিয়ামে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন- চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ডিপজল, রুবেল, অঞ্জনা, আলেকজান্ডার, রিনা খান, মিশা সওদাগর, জায়েদ খান, জয় চৌধুরী, শানু, পুষ্পিতা পপিসহ আরো অনেকে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সবাই বিরোধিতা নয়, সমঝোতা চান। সংবাদ সম্মেলনে রুবেল বলেন, ‘খেতে আগাছা পরিষ্কার করার সময় অনেক সময় ভালো ধানগাছও কাটা পড়ে যায়। যারা বাদ পড়েছেন তারা যদি (সবাইকে যদিও বাদ করা হয়নি, সহযোগী সদস্য করা হয়েছে) সত্যিকারেই শিল্পী সমিতির সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন তবে অবশ্যই তারা আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবেন। আসুন আমরা দ্বন্দ্বে নয়, চলচ্চিত্রের স্বার্থে সমঝোতায় গিয়ে মিলেমিশে কাজ করি।’ অঞ্জনা তার বক্তবে বলেন, ‘কীসের আন্দোলন, কার সঙ্গে আন্দোলন? কেন বয়কট, কার জন্যে বয়কট? আপনারা শিল্পী সমিতির সঙ্গে আন্দোলন করছেন নাকি ব্যক্তিগত স্বার্থে বয়কট করছেন? আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে কেউ শিল্পী সমিতির সঙ্গে জড়িত না। মিশা সওদাগার ও জায়েদ খানকে অন্যায়ভাবে বয়কট করলে আমরা কেউই শিল্পী সমিতিতে থাকব না। এসব আন্দোলন ভুলে আসুন আমরা একসঙ্গে ভালো কাজ করি। তালিকা থেকে যাদের বাদ দেয়া হয়েছে আমরা তাদের কাজের যাচাই-বাছাই করে আবার ফিরিয়ে নেব।’ ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘চলচ্চিত্রের এখন যে অবস্থা তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এখন মানুষ কাজ করতে পারছে না, করোনার মধ্যে যদি এমন দলাদলি হয় তাহলে তো আরো ধ্বংসের মুখে যাবে এ শিল্প। তাই আমাদের উচিত যে করেই হোক এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমিও এক সময় শিল্পী সমিতির সেক্রেটারি ছিলাম। আমি চাই, আপনার সবাই সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মিশে এই দ্ব›দ্ব মিটমাট করে নেন। আমি আশা করব, খুব অল্প সময়ের মধ্যে বসে এসব দলাদলি, ঝগড়া-বিবাদ বাদ দিয়ে চলচ্চিত্রকে বাঁচানোর জন্য একসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিবার হয়ে কাজ করি। আসুন প্রযোজক-পরিচালক, শিল্পী আমরা সবাই একত্র হয়ে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখি। বয়কট না করে, ঈদের আগে একসঙ্গে বসে মীমাংসা করে নেই।’ প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই এফডিসিতে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয়। চলচ্চিত্রের উন্নয়নমূলক কাজ না করে ব্যক্তি স্বার্থে নিজের সাংগঠনিক পরিচয় ব্যবহার করে এবং অভিনয় শিল্পী সমিতির ১৮৪ জন অভিনয় শিল্পীর ভোটাধিকার অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ ঘোষণা দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ সালের শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৬২৪ জন। মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল বিজয়ী হওয়ার পর এ তালিকা থেকে ১৮৪ জন ভোটারের ভোটাধিকার বাতিল করে কেবল সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। অন্যদিকে নতুন করে ২০ জন শিল্পীকে ভোটার করা হয়েছে। শিল্পী সমিতির ২০১৯-২০ মেয়াদের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৪৯ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App