×

জাতীয়

করোনার প্রভাব নেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ১১:১২ এএম

করোনার প্রভাব নেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় সার্বিক নির্মাণ কাজের অগ্রগতির পাশাপাশি রাশিয়ায় তৈরি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি। বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সব কাজ একযোগে রাশিয়া ও বাংলাদেশে চলছে। করোনার মধ্যেও এই প্রকল্পে কর্মরত দেশি ও বিদেশি কর্মীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রকল্পের নির্মাণকারী সংস্থা রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন (রোসাটম)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা গেছে। রোসাটম সূত্র জানায়, রোসাটমের মেশিন প্রস্তুত শাখা ‘এটমএনার্গোমাসের’ একটি অংশ হলো ‘এইএম টেকনোলজি’। ভলগাদন্সক এবং প্রেত্রাজাভোদস্ক এর দুটি শাখা রয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের রিয়্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের সব যন্ত্রপাতি এবং টারবাইন হলের যন্ত্রপাতির বড় অংশ এটমএনার্গোমাস সরবরাহ করছে। এই প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ রাশিয়ায় এগিয়ে চলছে। টেকনিক্যাল কন্ট্রোল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাশিয়ার ভলগাদন্সকে ‘এইএম টেকনোলজি’ ‘এটোমাস’ কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের জন্য আগেই রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল এবং একটি বাষ্প জেনারেটরের তৈরি করা হয়। কিছুদিন আগে এই দুটি যন্ত্রাংশের হাইড্রোলিক টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এই টেস্টের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি অংশের বেজমেটালের ও ওয়েল্ড জয়েন্টগুলোর দৃঢ়তা এবং নিচ্ছিদ্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সূত্র জানায়, রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটি পুরোপুরি সিল করে একটি ভ‚গর্ভস্থ ‘কেইসন’-এ পরীক্ষা করা হয়। প্রেসার ভেসেলটি ডিসটিল্ড ওয়াটার দিয়ে পূর্ণ করার পর পানির তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং অভ্যন্তরীণ চাপ ২৪ দশমিক ৫ মেগা প্যাসকেলে (ওয়ার্কিং প্রেসারের তুলনায় ১ দশমিক ৪ গুণ বেশি) উন্নীত করে পরীক্ষা চালানো হয়।

এভাবে প্রথম ইউনিটের জন্য তৈরি একটি স্ট্রিম জেনারেটরেরও হাইড্রোলিক টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমে বিশেষ ঢাকনি দিয়ে জেনারেটরের সবগুলো ছিদ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় সার্কিট ডিসটিল্ড ওয়াটার দিয়ে পূর্ণ করা হয়। প্রথম সার্কিটে পানির তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও অভ্যন্তরীণ চাপ ২৪ দশমিক ৫ মেগাপ্যাসকেলে রেখে পরীক্ষা চালানো হয়। দ্বিতীয় সার্কিটেও পানির তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও অভ্যন্তরীণ চাপ ১১ দশমিক ৪৫ মেগাপ্যাসকেল রেখে একই ধরনের পরীক্ষা চালানো হয়। উভয়ক্ষেত্রেই চাপের পরিমাণ ওয়ার্কিং প্রেসারের তুলনায় ১ দশমিক চার গুণ বেশি ছিল। স্ট্রিম জেনারেটর হিট এক্সচেঞ্জার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রূপপুর প্রকল্পের প্রতিটি ইউনিটে এ ধরনের চারটি স্ট্রিম জেনারেটর থাকবে। এর প্রতিটির ওজন ৩৫০ টন, দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং ব্যাস ৪ মিটারের বেশি। ইতোমধ্যেই একই কারখানায় স্ট্রিম জেনারেটর তৈরির চ‚ড়ান্ত পর্বে এটির তলদেশের ওয়েল্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। ওয়েল্ডিংয়ের আগে এর ভেতরে এসজি টিউব স্থাপন করা হয়। স্বয়ংক্রিয় ওয়েল্ডিং প্রক্রিয়ায় সময় লাগে পাঁচ দিন। ৭০০ কেজি ওয়েল্ডিং রড ও ৯০০ কেজি ফ্লাস্ক ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ‘এইএম টেকনোলজি’ ‘প্রেত্রাজাভোদস্ক’ কারখানায় প্রথম ইউনিটের জন্য চারটি কুল্যান্ট পাম্পের সংযোজন ও ওয়েল্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কুল্যান্ট পাম্পের কাজ হলো রিয়্যাক্টর থেকে কুল্যান্ট (শীতলীকরণ পদার্থ) স্ট্রিম জেনারেটরে পাম্প করে নিয়ে আসা। ১৬০ এটমোসফেয়ার চাপে কুল্যান্টের তাপমাত্রা থাকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একটি পাম্পের ওজন ৩১ টনের বেশি, উচ্চতা সাড়ে ৩ মিটার এবং ব্যাস ৩ মিটারের বেশি। পরবর্তী পর্যায়ে এগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করা হবে। উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুটি ইউনিট নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট এবং প্রতিটি ইউনিটে থাকবে থ্রি প্লাস (৩+) প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App