×

বিনোদন

প্রতিদিন ক্ষতি কোটি টাকা, দুর্দিনে পাঁচ হাজার পরিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ১০:৪০ এএম

প্রতিদিন ক্ষতি কোটি টাকা, দুর্দিনে পাঁচ হাজার পরিবার

সালাউদ্দিন লাভলু

করোনা (কোভিড-১৯) মহামারির ধাক্কায় ছোট পর্দার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বড় ক্ষতি গুনতে হচ্ছে। প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক, ক্যামেরাম্যান, মেকাপম্যানসহ নেপথ্যে আর সম্মুখসারির সব শিল্পীকে বেকার করে দিয়েছে করোনা। শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছোট পর্দায় প্রতিদিনের ক্ষতি টাকার অঙ্কে এক কোটিরও বেশি। নির্মাতাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ছোট পর্দার এই পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে লেনদেন হয় অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন সবচেয়ে বেশি। দুই বৃহৎ উৎসব ঘিরে ২৫০-৩০০ নাটক নির্মাণ হয়।

সূত্রমতে, প্রতিদিন একক ও ধারাবাহিক মিলে ৪০-৫০টির বেশি নাটকের শুটিং হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা আটকে গেছে। সীমিতভাবে কাজ শুরু হলেও বেশির ভাগ শিল্পী, নির্মাতাসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন না। আগে যেখানে ২৫-২৬ জন নিয়ে কাজ করা হতো, সেখানে ১০-১২ জনকে পাওয়া যাচ্ছে। নির্মাতারা জানান, ছোট পর্দায় প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার ট্রানজেকশন হয়। এ হিসাবে মাসে ৫০-৬০ কোটি টাকার ট্রানজেকশন হতো। করোনার ধাক্কায় সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এবারের ঈদে ৫০ শতাংশ কাজও হচ্ছে না। তাই এই আয়ের ওপর নির্ভরশীল ৫ হাজার পরিবারে চলছে দুর্দিন।

জানতে চাইলে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু ভোরের কাগজকে বলেন, ঈদের সময়টায় বছরের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়। অনেক নির্মাতা সারা বছর কাজ না করলেও ২ ঈদে নাটক নির্মাণ করেন। সচরাচর এই সময় থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত টানা কাজ চলে। নির্মাতা, শিল্পী, প্রযোজকসহ কলাকুশলীদের দম ফেলার সময় থাকে না। এবারের পরিস্থিতি উল্টো। সব কিছু মিলে খুবই খারাপ অবস্থা।এক্ষেত্রে সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই উল্লেখ করে লাভলু বলেন, আমরা আবেদন করে রেখেছি। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ টেকনিশিয়ান, শিল্পী, কলাকুশলীদের অবস্থা আসলেই শোচনীয়।

অভিনেতা ও নাটকের শিল্পীদের সংগঠন শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, গত ৪ মাস ধরে মেকাপম্যান, প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে শিল্পীসহ নেপথ্যের কলাকুশলীদের সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছি। তবে সেটার পরিমাণ খুব বেশি নয়। সরকারের পক্ষ থেকে এখনোপর্যন্ত কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে গ্রুপ থিয়েটার ও মঞ্চ নাটকের জন্য প্রণোদনা দিয়েছে। আমরা বারবার যোগাযোগ করছি। তারা বলছে, দিয়ে দেব, সবকিছু ফাইনাল, শিগগিরই হয়ে যাবে। গত ৩ মাস ধরে একই গল্প শুনছি।

ছোট পর্দার প্রযোজকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রডিউসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ইরেশ যাকের বলেন, সব মিলে একটা নাটকের বাজেট থাকে, ৫০-৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে আমাদের প্রতিদিন কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি। গত ঈদে নাটক একেবারেই হয়নি। এবার সীমিত আকারে হচ্ছে। এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই শুটিং করতে হচ্ছে। যে নাটক ৩ দিনে করতে পারতাম, সেটিতে এখন ৪/৫ দিন সময় লাগছে। সেক্ষেত্রে খরচেরও ব্যাপার আছে। এদিকে স্পন্সরদের লগ্নিও কমে গেছে। দীর্ঘদিন শুটিং বন্ধ থাকায় ছোট পর্দার সঙ্গে জড়িত নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের অনেকেই আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির বলেন, যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল- তারা মারাত্মক বেকায়দায় পড়েছেন। এদের মধ্যে প্রোডাকশন বয়, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, লাইটম্যান, ড্রাইভারসহ স্বল্প আয়ের মানুষেরা আছে। তাদের আমরা কিছু কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। এই ঈদেও দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে ছোট পর্দার ১৪ সংগঠনের জন্য সরকার ৩ কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে বলে সংবাদ পেয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App