×

আন্তর্জাতিক

ডেভন হাসপিলই খুনি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৯:১১ এএম

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বাংলাদেশি টেক-মিলিয়নেয়ার ফাহিম সালেহর (৩৩) নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্রায় উদ্ঘাটন করে এনেছে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি)। নিহতের ২১ বছর বয়সী ব্যক্তিগত সচিব তাইরেজ ডেভন হাসপিলকে সেকেণ্ড ডিগ্রি খুনের দায়ে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে নতুন এক ভিডিওতে খুনের ঘটনার দুদিন পর গত বুধবার দুপুরে রহস্যময় এক নারীর সঙ্গে ঘুরতে দেখা গেছে সন্দেহভাজন খুনিকে। তবে ওই নারীর বিষয়ে এখনই কোনো কথা বলতে রাজি হননি গোয়েন্দারা। পুলিশ বলছে, সালেহর ১ লাখ ডলার জালিয়াতি করে ‘মেরে’ দিয়েছিল হাসপিল। সালেহ খুন হন গত সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রায় আড়াই মিলিয়ন ডলারে কেনা নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। পরদিন মঙ্গলবার খুনি দ্বিতীয়বার ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকে। উদ্দেশ্য ছিল- সালেহর মরদেহ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে খণ্ড-বিখণ্ড করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে অন্য কোথাও ফেলে দেয়ার। কিন্তু এমন সময় ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে সালেহর ব্যাকুল ‘কাজিন’ ওই অ্যাপার্টমেন্টে এসে কলিংবেলে চাপ দিলে ভয় পেয়ে পেছনের বিশেষ দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় খুনি। ওই কাজিন সালেহর ঘরে ঢুকেই তার হাত-পা-মুণ্ড বিচ্ছিন্ন মরদেহ আবিষ্কার করেন। ইলেকট্রিক করাতটি তখনো প্লাগ ইন করা ছিল সকেটে। আশপাশে ছড়ানো ছিল কয়েক ধরনের পরিষ্কারক সামগ্রী। নিহতের হাত-পা-মুণ্ড রাখা ছিল ঘরের কোণে রাখা মুখবন্ধ ৩টি প্লাস্টিকের ব্যাগে। গত বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, ফাহিম সালেহকে প্রথমে ট্রেজার গান দিয়ে ‘নিশ্চল’ করা হয়। এরপর ঘাড়ে ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে খুনি। গোয়েন্দারা জানান, হাসপিলের মূল বাসা ব্রুকলিনের প্রোসপেক্ট পার্ক এলাকায় হলেও সম্প্রতি সে সালেহর বাসা থেকে এক মাইলের কম দূরত্বে অবস্থিত ম্যানহাটনের নোহো এলাকায় ক্রসবি স্ট্রিটের অন্য একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিজের আস্তানা তৈরি করে। এক প্রতিবেশী জানান, হাসপিল মাত্র এক সপ্তাহ আগে ওই নতুন বাসায় ওঠে। মাসিক ১৫ হাজার ডলার ভাড়ার ওই বাসা থেকেই গত শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিউইয়র্ক পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রডনি হ্যারিসন জানান, নিহত ফাহিম সালেহর আর্থিক লেনদেনের বিষয়গুলো দেখভাল করত হাসপিল। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে মালিকের ‘মোটা অঙ্কের’ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণও পেয়েছেন তারা। ফাহিম তার ব্যক্তিগত সচিবের ওই ১ লাখ ডলার জালিয়াতির

ঘটনাটি জানার পরও তাকে পুলিশে ধরিয়ে না দিয়ে বরং কিস্তিতে ওই টাকাটা পরিশোধের সুযোগ করে দেন। সালেহর মোবাইল ফোন ঘেঁটে হাসপিলকে পাঠানো মেসেজে টাকা জালিয়াতির বিষয়টি সম্পর্কে জানার পরই তার দিকে সন্দেহের নজর দিতে শুরু করেন এনওয়াইপিডি গোয়েন্দারা। তদন্তকারীরা জানান, গত সোমবার নিজের অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিফটে ওঠার পূর্ব মুহূর্তে মাস্ক পরা ‘আততায়ী’ তাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে একই লিফটে ঢুকে পড়ে। শর্টস ও টিশার্ট পরা সালেহকে এ সময় বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে দেখা গেছে। আরেকটি ফুটেজে যখন সালেহর বাসায় এসে লিফটের দরজা খুলল, তখনো সালেহকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া হোম ডিপো নামে একটি দোকান থেকে হাসপিলের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে একটি ইলেকট্রিক করাত এবং পরিচ্ছন্ন সামগ্রী কেনার প্রমাণও মিলেছে। সালেহর বাসায় যাওয়া-আসার ভাড়াও ওই একই কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় বলেও প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দারা বলেন, নিহত সালেহর মরদেহে রক্ত জমাট বাধার জন্য একদিন অপেক্ষা করেছে খুনি, যাতে তাকে সহজেই টুকরো টুকরো করা যায়। সৌদি আরবে একটি মধ্যবিত্ত বাংলাদেশি পরিবারে জন্ম নেয়া ও পরে নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা ফাহিম সালেহর গত বছর ম্যানহাটনে বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্টটি কেনেন। হাসপিলকে গ্রেপ্তারের আগে সালেহর খুনের মোটিভ খুঁজতে তার ব্যবসায়িক কর্মকাÐের ইতিহাসগুলোই মূলত খতিয়ে দেখছিলেন গোয়েন্দারা। এদিকে নিউইয়র্কের এলমন্ট এলাকার বাসিন্দা সন্দেহভাজন খুনি হাসপিলের আগে এডভেঞ্চার ক্যাপিটাল নামে ফাহিমের অন্য একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন। আর্টস ও মার্কেটিং নিয়ে পড়াশুনা করেছেন হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটিতে। তবে ফাহিমের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়ের সূত্র কী, তা জানা যায়নি এখনো। অন্যদিকে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ওয়েবসাইট বানিয়ে বছরে গড়ে এক থেকে দেড় লাখ ডলার আয় করতেন ফাহিম সালেহ। স্কুল ছাড়ার পর ম্যাসাচুসেটস বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App