×

বিনোদন

টিকে থাকার লড়াইয়ে মঞ্চ থেকে সবজির ভ্যানে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ১২:১১ পিএম

টিকে থাকার লড়াইয়ে মঞ্চ থেকে সবজির ভ্যানে

টিকে থাকার লড়াইয়ে সবজির দোকান দিয়েছেন থিয়েটার কর্মীরা

দেশের শিল্প সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাশীল শিল্পীরা এমনিতেই এক প্রকার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আধুনিক এই সময়ে ইন্টারনেটের সহজলোভ্য বিনোদনের ভিড়ে সৃজনশীল শিল্পীদের কদর অনেকটাই কমে গেছে এমনটাই মনে করছেন প্রবীণ শিল্পীরা। বিশেষ করে থিয়েটারকর্মী ও নাট্যকর্মীরা। তবে এমন সময় করোনাভাইরাস এসে শিল্প জগতকে আরও বড় হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। শ্যুটিং বন্ধ্য রয়েছে কয়েক মাস। যারা শুধুমাত্র শিল্পকে নিয়েই চিন্তা করেছেন, অন্য কোনো ব্যবসা বানিজ্যের দিকে পা বাড়াননি, তারা এখন অনেকেই আয় রোজগার বন্ধ হয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। কবে সুদিন আসবে সেই আশায় দিনক্ষণ গুনছেন।

তরুণ থিয়েটারকর্মীরা জীবন চালাতে কেউ করতেন টিউশনি, কেউ জড়িত ছিলেন ডাবিং শিল্পে, কেউ কাজ করতেন টিভিতে। করোনায় বন্ধ আয়ের উৎস। করোনার এ সংকটকালে এখন এসব পথই বন্ধ। তাই অনলাইনে ও বিকল্পভাবে নানা প্রক্রিয়ায় থিয়েটারকর্মীরা চেষ্টা করছেন সক্রিয় থাকতে। জীবিকার তাগিদে কাজের বিকল্প ব্যবস্থাই এখন প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ করছেন অনলাইনে নিত্যপণ্য পৌঁছে দেওয়ার সেবা, কেউ চেষ্টা করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে তুলতে।

সম্প্রতি প্রাঙ্গণেমোরের পাঁচটি থিয়েটার ভ্যানের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রির বিষয়টি উঠে এসেছে আলোচনায়। দলের পরিচালক (সাংগঠনিক) নূনা আফরোজ বলেন, ‘থিয়েটারে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা জীবন চালাতে এমন কিছু কাজ বেছে নেয়, যেগুলোর সঙ্গে থিয়েটারের সংঘাত হয় না। এখন এই কাজ বন্ধ। অনেক কর্মী গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেখান থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন একটা কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার, যা করতে অল্প মূলধন লাগে, অল্প সময়ে কাজটি করা যায়, আবার কাজটি করার মাধ্যমে এই সংকটকালও পেরোনো যায়। সেখান থেকেই এ উদ্যোগ।’

নাট্যজন মামুনুর রশীদ এ উদ্যোগকে দেখছেন ইতিবাচকভাবে। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের সবজির দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে, এটা একটা প্রতিবাদ। আরেকটা দিক হচ্ছে চোখ খুলে দেওয়া যে কোনো অসুবিধা নেই। আমরা কায়িক শ্রম করেই থিয়েটার করি। আমরা এটাও করতে পারি। কাজেই এটাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি।’

এই নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা এ প্রসঙ্গে ইঙ্গিত দিলেন শিল্পীদের জন্য স্যালারি গ্রান্টের। তিনি বলেন, ‘ওরা ইঙ্গিত দিল যে নাট্যশিল্পীদের পক্ষে রাষ্ট্র সেভাবে দাঁড়াল না। আমি অনেক বছর ধরেই চেষ্টা করছি সরকারি স্যালারি গ্রান্ট নিয়ে। তা হয়নি।’

বেশির ভাগই ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন, তবে কেউ কেউ মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে নূনা আফরোজ বলেন, ‘এ উদ্যোগ কেউ কেউ অন্যভাবে দেখছেন। কিন্তু এটা শুধু সবজি বিক্রি করা নয়, প্রতীকী প্রতিবাদও বটে। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় আছে। দেশের ছেলেমেয়েরা বিদেশে গেলে একই কাজ করে। কিন্তু আমাদের দেশে করতে পারে না। কারণ, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। এখানে কাজকে ছোট করে দেখা হয়। আমরা চেয়েছি, সেই আগলটাকে ভেঙে দিতে।’

থিয়েটারকর্মীদের টিকে থাকার বিষয়টিও এই সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণভাবে উঠে আসছে। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এগুলো ভালো উদ্যোগ। জীবন চালাতে হবে যে করেই হোক। সবাইকে নিজের পথটা আবিষ্কার করে নিতে হবে। কেউ কাউকে সাহায্য করে কত দিন চালাতে পারবে? সুতরাং প্রত্যেকেরই একটা বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে হবে।’ এই নাট্যজনের কথা, এই সময়ে রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং করপোরেট ব্যবসায়ীদের সাধারণ মানুষকে সহায়তা করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App