×

সারাদেশ

বেলকুচিতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো দীর্ঘতম বাঁশের সাঁকো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ১০:৩৬ এএম

বেলকুচিতে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হলো দীর্ঘতম বাঁশের সাঁকো

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রানীপুরা গ্রামে এলাকাবাসীর উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো -ভোরের কাগজ

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার প্রত্যন্ত রানীপুরা গ্রামের বাঁশের সাঁকোটি নান্দনিকতায় কোনো অংশে কম নয়। প্রযুক্তি এগিয়ে গেছে অনেক দূর। চলাচলের সুবিধার্থে নদ-নদী, খাল-বিলের উপর নির্মিত হচ্ছে দারুণ সব সেতু। এরই মাঝে প্রয়োজনের তাগিদে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত হয়েছে এই বাঁশের সাঁকো। এটির দৈর্ঘ্য এক হাজার ৩৩ ফুট। সাঁকো নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের দাবি, বাঁশের এটি জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের যে কোনো বাঁশের তৈরি সাঁকোর চেয়ে দীর্ঘ।

জানা যায়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায় বেলকুচি উপজেলার যমুনা নদী পরিবেষ্টিত রানীপুরা, মনতলারচর, চর আগুরিয়া, মূলকান্দি, বেলির চরসহ এ অঞ্চলের অন্তত ১০টি গ্রাম। যমুনা নদীর পানিতে সয়লাব হয়ে বন্ধ হয়ে যায় এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিবন্দি মানুষের তখন যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয় কলাগাছের ভেলা আর কয়েকটি নৌকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আনিসুর রহমানকে। এমন ভাবনাকে সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসেন গ্রামের উদ্যমী কয়েকজন যুবক। তাদের এ উদ্যোগকে সমর্থন জানান গ্রামবাসীও।

তারই ধারাবাহিকতায় গত এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে সাঁকোর কাজ শুরু হয়। এলাকার অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ৭০টি পরিবারের কাছ থেকে নেয়া হয় ৩০০ টাকা করে চাঁদা। মূল উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলের শ্রমজীবী অভাবী মানুষ আর শিক্ষার্থীদের বর্ষা মৌসুমের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এমন উদ্যোগ নিয়েছি।

গ্রামবাসী সহায়তা না করলে দীর্ঘ এ সাঁকোটি নির্মাণ করা সম্ভব হতো না। তিনি আরো বলেন, সাঁকোটি নির্মাণ করতে বাঁশসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা। পাঁচজন যুবক আর গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ফসল এ দীর্ঘ সাঁকোটি। গ্রামের নূর আলম, শহিদুল ও আবদুল লতিফ জানান, ১৯৮৮ সালের পর যমুনা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় জেগে ওঠে দীর্ঘ চর। তবে মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত যমুনার শাখা নদী এখনো বয়ে চলেছে। বর্ষা মৌসুমে চার থেকে পাঁচ মাস এ অঞ্চল পানিতে ডুবে থাকায় অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামবাসীর কষ্ট লাঘবে তাদের এ প্রচেষ্টা। তারা আরো বলেন, সাঁকো নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন।

এমন উদ্যোগের জন্য উদ্যোক্তা আনিসুরসহ গ্রামবাসীর প্রশংসা করে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত সাঁকোটি দেশের জন্য একটি মডেল হতে পারে। শুধু সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে ছোট ছোট সমস্যা যে অনায়াসেই সমাধান করা যায় রানীপুরার গ্রামবাসী সে দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App